৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পর শেখ হাসিনার ক্ষমতা হারানোর পরও থামেনি তার সরকারের মদদপুষ্ট সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)-এর নিয়ন্ত্রণ এখনো ধরে রেখেছে একদল আওয়ামীপন্থি কর্মকর্তা। তাদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে সাধারণ বীজ ডিলাররা।
অভিযোগ উঠেছে, সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের সিন্ডিকেট এখনো সক্রিয়। তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা কারাগারে থাকলেও তার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সহযোগী শামসুর রশিদ দিপু বিএডিসির বীজ ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছেন। এতে হাজার হাজার মেট্রিক টন ধানবীজ কালোবাজারে চলে যাচ্ছে, অথচ সাধারণ ডিলাররা তা পাচ্ছেন না।
কিভাবে চলছে এই সিন্ডিকেট?
বিএডিসির পুনর্নির্ধারিত দামের দুই হাজার মেট্রিক টন বোরো ধানবীজ সিন্ডিকেটের লোকজন উত্তোলন করে চড়া দামে বিক্রি করেছে। কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, খুলনাসহ বিভিন্ন অঞ্চলের ডিলাররা বলছেন, তারা গুদাম থেকে কোনো বীজ উত্তোলন করতে পারছেন না।
কুষ্টিয়া জেলা বিএডিসির বীজ ও সার ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক মোস্তফা জামান সাঈদী সাগর বলেন, "বর্তমানে ডিলাররা চুয়াডাঙ্গা গুদাম থেকে কোনো বীজ উত্তোলন করতে পারছেন না। সিন্ডিকেট আমাদের জিম্মি করে রেখেছে।"
বিএডিসির একজন কর্মকর্তা জানান, সিন্ডিকেটের কারণে কৃষি ভবনের অনেক কর্মকর্তা তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে ভয় পাচ্ছেন। ঢাকা কৃষি ভবনের মহাব্যবস্থাপক (বীজ) আবীর হোসেন ও অতিরিক্ত মহাব্যবস্থাপক (বীজ বিতরণ) সেলিম হায়দার সিন্ডিকেটের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক হিসেবে কাজ করছেন।
অনুসন্ধানে কী পাওয়া গেল?
২,০০০ মেট্রিক টন ধানবীজ সিন্ডিকেট তুলে নিয়েছে
সাধারণ ডিলাররা গুদাম থেকে কোনো ধানবীজ পাচ্ছেন না
সিন্ডিকেটের হোতা শামসুর রশিদ দিপুর মাধ্যমে চুয়াডাঙ্গার মিলগুলোতে কালোবাজারে বিক্রি হচ্ছে বীজ
বিএডিসির কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় চলছে দুর্নীতি
কুষ্টিয়ার খাজানগর এলাকার সুবর্ণা রাইস মিলের মালিক জিন্নাহ বলেন, "আমার কাছে বেশি ধান কিনেছে স্বর্ণা রাইস মিল। চুয়াডাঙ্গার একজন ব্যক্তি সব ধান বিক্রি করেছেন।"
মেহেরপুরের প্রবীণ বীজ ডিলার আরমান আলী বলেন, "আমি নিজে বীজ উত্তোলন করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েছি। সাধারণ ব্যবসায়ীদের ব্যবসা করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না।"
সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে?
বিএডিসির যুগ্ম পরিচালক শফিকুল ইসলাম জানান, "বাইরে কী হচ্ছে, তা আমি জানি না। যারা মেমো নিয়ে আসছেন, তারাই বীজ পাচ্ছেন।"
তবে সাধারণ ডিলাররা বলছেন, সিন্ডিকেট তাদের ব্যবসা ধ্বংস করে দিচ্ছে। এ বিষয়ে তদন্ত ও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।