ঢাকা, ১৩ এপ্রিল ২০২৫:
বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আবারও উত্তেজনা ছড়িয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহর একটি ফেসবুক পোস্ট ঘিরে। শনিবার দুপুরে নিজের ভেরিফায়েড আইডিতে দেওয়া এই পোস্টে তিনি সরাসরি আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে এখানেই থেমে থাকেননি তিনি। তার ভাষ্য অনুযায়ী, শুধুমাত্র নিষিদ্ধ করার জন্য নির্বাহী আদেশ যথেষ্ট নয়—প্রয়োজন বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চূড়ান্ত নিষেধাজ্ঞা।
হাসনাতের দাবি অনুযায়ী, অতীতে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা হলেও তাদের কার্যক্রম থেমে যায়নি। বরং তারা আরও সংগঠিতভাবে রাস্তায় নেমে এসেছে। পুলিশের হাতে মাঝে মাঝে কেউ আটক হলেও, সেসব ঘটনা ছিল কেবলমাত্র লোকদেখানো। জামিনে দ্রুত মুক্তি পাওয়া এবং প্রকাশ্যে ঝটিকা মিছিলে অংশগ্রহণের মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে যে নিষিদ্ধের আদেশ কেবল কাগজেই সীমাবদ্ধ।
পোস্টে তিনি লিখেছেন, “শুধু নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ করে একটা সাইন করা কাগজ ধরিয়ে দিলেই মেনে নেওয়া যাবে না। বরং সেই কাগজ যে বাস্তবে কতটা অকার্যকর, সেটা ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়ার পরেই আমরা দেখেছি।”
হাসনাত আরও বলেন, “জুলাইয়ের গণহত্যায় জড়িত ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগের সব অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও বিচার করতে হবে। এটাই হওয়া উচিত আমাদের প্রধান দাবি। কারণ, যদি সঠিকভাবে বিচার হয়, তাহলে আওয়ামী লীগ নামক দল ও তার সহযোগী সংগঠনগুলোর আর টিকে থাকার সুযোগ নেই।”
তিনি তার লেখায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর নাৎসি পার্টির বিরুদ্ধে গৃহীত আন্তর্জাতিক পদক্ষেপের দৃষ্টান্ত টেনে এনে বলেন, “যেভাবে নাৎসি পার্টিকে সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, ঠিক তেমনি আওয়ামী লীগকেও সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করার দাবি আজ আর মাত্র রাজনৈতিক স্লোগান নয়—এটি বিচার এবং ইতিহাসের অনিবার্য দাবিতে পরিণত হয়েছে।”
পোস্টের শেষে তিনি আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব উত্থাপন করেন। “আওয়ামী লীগের বিচার সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দলটির এবং তার অঙ্গসংগঠনের যেকোনো ধরনের প্রকাশ্য বা গোপন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে হবে,” বলেন হাসনাত। তার মতে, এ পদক্ষেপ না নেওয়া পর্যন্ত তারা নিয়মিতভাবে মিছিল-মিটিং করে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াতে থাকবে।
এছাড়া তিনি দেশের মানুষকে আহ্বান জানিয়েছেন ‘ডি-নাজিফিকেশন’-এর মতো ‘ডি-আওয়ামীকরণ’ প্রক্রিয়া শুরু করতে। তার মতে, “রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক—সব ক্ষেত্র থেকে আওয়ামী ফ্যাসিজমের শিকড় উপড়ে ফেলতে হবে।”
এই বার্তা প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয়েছে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা। কেউ কেউ তার বক্তব্যকে সাহসী ও সময়োপযোগী হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন, আবার অনেকে এটিকে উসকানিমূলক বলেও মন্তব্য করেছেন।
হাসনাতের এই ফেসবুক পোস্টে এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব আরিফ সোহেলের বক্তব্যও উল্লেখ করা হয়, যা পরিস্থিতিকে আরও গুরুত্ববহ করে তোলে। বিশ্লেষকরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে এনসিপির রাজনৈতিক অবস্থান আগের তুলনায় আরও আগ্রাসী হয়ে উঠেছে, এবং এই পোস্ট সেই আগ্রাসনেরই বহিঃপ্রকাশ।
সাম্প্রতিক রাজনৈতিক আলোচনায় এই বার্তা আওয়ামী লীগ ও সরকারপন্থী গোষ্ঠীর মধ্যে নতুন চাপের সূচনা করতে পারে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।