বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে চলমান টানাপোড়েন এক নতুন মোড় নিল। দেশের অন্যতম বৃহৎ এবং দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে এবার কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। দলটির সকল রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণার ৪৮ ঘণ্টার মাথায় এবার স্থগিত করা হলো তাদের রাজনৈতিক নিবন্ধন।
সোমবার (১২ মে) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে দীর্ঘ চার ঘণ্টাব্যাপী এক গোপন বৈঠক শেষে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ। তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশে সংক্ষিপ্ত এক বিবৃতিতে বলেন,
“বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপন ও সাম্প্রতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে কমিশন এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।”
এই সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে দেশের রাজনীতিতে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক আলোড়ন। বিশেষ করে এমন একটি পদক্ষেপ এক সময়কার শাসকদলের ক্ষেত্রে নজিরবিহীন এবং তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
এর আগে, গত শনিবার (১০ মে) ছাত্র-জনতা ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর নেতৃত্বে ব্যাপক আন্দোলনের মুখে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এক ঘোষণায় জানায়, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত তাদের সকল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ থাকবে।
ওই দিন রাতেই আইন উপদেষ্টা পরিষদের এক বৈঠকে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় জানানো হয়, দলটির কর্মকাণ্ড স্থগিত রাখার বিষয়ে একটি পরিপত্র সোমবার (১২ মে) জারি করা হবে।
উল্লেখ্য, দেশজুড়ে চলমান বিক্ষোভ, দুর্নীতির অভিযোগ, এবং নির্বাচন পরবর্তী সহিংস পরিস্থিতির জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সংগঠন দাবি জানিয়ে আসছিল দলটির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের।
প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আজ বিকেলেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে আওয়ামী লীগের সব ধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত দলটির সভা-সমাবেশ, মিছিল-মিটিং এবং সাংগঠনিক কার্যক্রম আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।
এই প্রেক্ষাপটেই নির্বাচন কমিশন আজ তাদের রাজনৈতিক নিবন্ধন স্থগিত করার ঘোষণা দেয়, যা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত বলে মনে করা হচ্ছে।
এদিকে, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে দলটির ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে, তারা আইনি পথেই প্রতিক্রিয়া জানাতে প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং বিষয়টি নিয়ে উচ্চ আদালতে যাওয়ার চিন্তা-ভাবনা চলছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এ সিদ্ধান্ত শুধু একটি রাজনৈতিক দলকে নয়, বরং সামগ্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করবে। এতে করে ভবিষ্যতের নির্বাচন, রাজনৈতিক মেরুকরণ এবং জাতীয় সংলাপের রূপরেখা পুরোটাই পাল্টে যেতে পারে।
এই সিদ্ধান্তে পরিষ্কার যে বর্তমান প্রশাসন এবং নির্বাচন কমিশন জনচাপ ও আন্দোলনের প্রতিক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ এবং কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধা করছে না। এখন দেখার বিষয়—আওয়ামী লীগ এই সংকট থেকে কিভাবে ঘুরে দাঁড়ায় এবং দেশের রাজনীতির আগামী পথচলা কোন দিকে মোড় নেয়।