গুলশানে আন্দোলনকারী গুলিবিদ্ধ, বাধা দেন অভিনেতা সিদ্দিক! আদালতের রিমান্ডে চাঞ্চল্যকর মোড়
রাজধানীর গুলশানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গুলিবিদ্ধ হওয়া ভ্যানচালক জব্বার আলী হাওলাদারকে হাসপাতালে নিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগে ছোট পর্দার পরিচিত মুখ অভিনেতা সিদ্দিকুর রহমান বর্তমানে ৭ দিনের রিমান্ডে রয়েছেন।
ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. ছানাউল্লাহ বুধবার শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। গুলশান থানার এসআই আব্দুস সালাম মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মাহবুব আলম আদালতে বলেন—
এই আসামি সুশীল মানুষের ভান করে আন্দোলনের সময় রাস্তায় যা খুশি করেছে। এমনকি গুলিবিদ্ধ জব্বারকে হাসপাতালে নিতে বাধা দেয়। তিনি বিভিন্ন সময়ে খালেদা জিয়াকে নিয়েও কটূক্তি করেছেন।”
রাস্তায় মারধরের ভিডিও ভাইরাল: ছেঁড়া জামা, চোখে কান্না আর ‘আওয়ামী দালাল’ স্লোগান
গত মঙ্গলবার বিকালে বেইলি রোডে সিদ্দিককে একদল যুবক আটক করে। এরপর তাঁকে রমনা থানা হয়ে গুলশান থানায় হস্তান্তর করা হয়।
সেই সময়ের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়ে, যেখানে দেখা যায়—
ছেঁড়া জামাকাপড়ে, চোখে পানি নিয়ে সিদ্দিককে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে কয়েকজন যুবক।
তারা তাকে উদ্দেশ্য করে বলছে—
“আওয়ামী লীগের দোসররে ধরছি, পুলিশে দিচ্ছি!”
একজন ভিডিও ধারক বলতে থাকেন—
এই সিদ্দিক আওয়ামী লীগ সরকারের দালাল। খালেদা জিয়ারে নিয়ে কথা বলে!”
আইনজীবীর দাবি: ‘সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নেই’, অসুস্থ ছেলে নিয়ে একা থাকেন অভিনেতা
সিদ্দিকের রিমান্ড বাতিল করে জামিনের আবেদন করেন তাঁর আইনজীবী জাহাঙ্গীর বিশ্বাস। তিনি আদালতে বলেন—
এই অভিনেতার বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ নেই। তিনি কোনো সংঘর্ষ বা হামলার সঙ্গে যুক্ত নন। নিজের একমাত্র অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে বাসায় থাকেন। নিজেও অসুস্থ।”
তবে আদালত জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে পুলিশ হেফাজতে রেখে তাকে সাতদিনের রিমান্ডে নেওয়ার অনুমতি দেন।
মামলার পটভূমি: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১০৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা, যুক্ত অভিনেতা সিদ্দিক!
জানা যায়, ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই গুলশানের শাহজাদপুরে কনফিডেন্স টাওয়ারের সামনে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়। এতে ভ্যানচালক জব্বার আলী হাওলাদার গুলিবিদ্ধ হন। পরবর্তীতে শেখ হাসিনাসহ ১০৯ জনের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় মামলা করেন জব্বার।
সেই মামলায় তদন্ত করতে গিয়েই সিদ্দিকের নাম উঠে আসে বলে জানায় পুলিশ।
রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততা: একাধিকবার মনোনয়ন চেয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সরকারের সময়
অভিনেতা সিদ্দিকের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার বিষয়টিও আলোচনায় এসেছে। জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তিনি একাধিকবার গুলশান ও মধুপুর আসন থেকে সংসদ নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন চেয়েছিলেন।
তদন্তে কী উঠে আসে তা দেখার অপেক্ষায় দেশজুড়ে আলোড়ন
সিদ্দিকের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ কতটুকু সত্য, কতটুকু রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত—তা এখন তদন্তের বিষয়।
তবে এ ঘটনা দেশের মিডিয়া অঙ্গনে আলোড়ন তোলে। একদিকে ভক্তরা হতবাক, অন্যদিকে সাধারণ মানুষও বিভ্রান্ত—প্রিয় অভিনেতা সিদ্দিক কি আদতেই ষড়যন্ত্রের শিকার, নাকি মুখোশ খুলে পড়েছে?
এই ঘটনার পর থেকে সিদ্দিকের ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার, রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ও তার ব্যক্তিগত জীবন সব কিছু নিয়েই আলোচনা চলছে মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। তদন্তে কী বেরিয়ে আসে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।