close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের পথে সরকার? অন্তর্বর্তী সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি ও সম্ভাব্য আইনি প্রক্রিয়া নিয়ে টানটান উত্তেজনা..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে আন্দোলন তীব্র হচ্ছে, আর সেই দাবি এখন সরকারের বিবৃতিতে পরিণত হয়েছে। কী হতে পারে পরবর্তী পদক্ষেপ? বিশ্লেষকদের ব্যাখ্যা ও আইনি সম্ভাবনা নিয়ে বিশদ প্রতিবেদন।..

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রশ্নে সরকার কী ভাবছে? আইনি প্রক্রিয়া কতটা সম্ভাব্য ও বাস্তবসম্মত? রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে উত্তেজনা ও জল্পনা-কল্পনার ঝড়।

বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিকে এখন আর অবহেলা করছে না—বরং বিষয়টি এখন তাদের গুরুত্বের সাথেই বিবেচনায় রয়েছে। শুক্রবার এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, এই প্রসঙ্গে চলমান রাজনৈতিক দাবিদাওয়া এবং আন্দোলন গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। সেইসঙ্গে আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে আহ্বান জানানো হয় ধৈর্য ও সংযম বজায় রাখার জন্য।

এই বিবৃতি এমন এক সময় এলো, যখন এর আগের রাতেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের দাবিতে রাজধানীতে বিক্ষোভে নামে জাতীয় গণতান্ত্রিক জোটের অন্যতম শরিক দল ন্যাশনাল কনসেনসাস পার্টি (এনসিপি)। বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলীয় সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ। তিনি সরাসরি দাবি করেন—আওয়ামী লীগের বিচার করতে হবে এবং দলটির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন একটি নির্দিষ্ট রোডম্যাপ, যা প্রকাশ করা উচিত এখনই।

হাসনাতের নেতৃত্বে বিক্ষোভ রাতভর চলে এবং একপর্যায়ে এতে যোগ দেন এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দও। শুধু তাই নয়, শুক্রবার সকাল থেকেই আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে অংশ নেয় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দল। ফলে বিক্ষোভে নতুন মাত্রা যোগ হয় এবং বিষয়টি গণমাধ্যমের শিরোনামে চলে আসে।

বিশ্লেষকদের মতে, আওয়ামী লীগের মতো একটি দীর্ঘদিনের শাসক দলের বিরুদ্ধে এমন পদক্ষেপ নেওয়ার প্রশ্নটি শুধু রাজনৈতিক নয়, এটি একটি জটিল আইনগত প্রক্রিয়া। বাংলাদেশে কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার বিষয়টি সংবিধান ও রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এ বিষয়ে বিবিসি বাংলা সরকারের ঘনিষ্ঠ মহল এবং সংবিধান বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলেছে। তারা জানান, একটি দলকে নিষিদ্ধ করতে হলে তা ‘সংবিধানবিরোধী কার্যকলাপের’ যথেষ্ট প্রমাণসহ আদালতে উপস্থাপন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের প্রয়োজন হতে পারে।

সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলমের মতে, “একটি দলকে নিষিদ্ধ করা একটি গঠনমূলক সাংবিধানিক সিদ্ধান্ত। এটি কেবল রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, উপযুক্ত আইনি কাঠামোর মধ্য দিয়েই বাস্তবায়ন করতে হয়। যদি দলটির কার্যক্রম রাষ্ট্রবিরোধী, সহিংসতামূলক বা সংবিধানবিরোধী হিসেবে প্রমাণিত হয়, তবে সেটি আদালতের রায়ের ভিত্তিতে নিষিদ্ধ হতে পারে।”

তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই মুহূর্তে সরকারের এমন পদক্ষেপ নেওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ, একদিকে আগামী নির্বাচন সামনে, অন্যদিকে এমন সিদ্ধান্ত দেশে ও আন্তর্জাতিক পরিসরে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।

এদিকে, সরকারের বিবৃতিতে বিষয়টি "গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় রয়েছে" বলা হলেও এখনও পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক তদন্ত কমিটি বা আইনগত পদক্ষেপের ঘোষণা আসেনি। এই অবস্থায় বিরোধী জোটের অংশ হিসেবে আন্দোলনরত দলগুলো তাদের দাবি থেকে এক চুলও নড়ছে না। এনসিপি এবং জামায়াতসহ অন্যান্য দলের মতে, “আওয়ামী লীগ অতীতে বারবার গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে, বিচারহীনতা ও দুর্নীতিকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এখনই সময় এই দলকে নিষিদ্ধ করে রাজনৈতিক বিশুদ্ধতার পথ তৈরি করার।”

এ পরিস্থিতিতে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন যেমন টালমাটাল, তেমনি সাধারণ মানুষের মধ্যেও তৈরি হয়েছে এক ধরনের অনিশ্চয়তা ও কৌতূহল—আসলেই কি আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছে? না কি এটি শুধুই রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগের কৌশল?

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হয়তো আরও পরিষ্কার হবে আসল চিত্র। তবে একটি বিষয় এখন নিশ্চিত—আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রশ্ন আর কল্পনা নয়, বরং তা এখন সরকারের দৃষ্টি এবং রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।

No comments found