বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক পরিবর্তন এসেছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ সভায় এই আইনের সংশোধনী অনুমোদিত হয়েছে। সংশোধিত আইনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শুধু ব্যক্তিকেই নয়, বরং এখন থেকে রাজনৈতিক দল, তাদের অঙ্গসংগঠন ও সমর্থক গোষ্ঠীকেও বিচারের আওতায় এনে শাস্তি দিতে পারবে।
শনিবার রাতে যমুনায় অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। বৈঠক শেষে রাত ১১টার দিকে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এক ব্রিফিংয়ে সংবাদমাধ্যমকে বিস্তারিত তথ্য জানান।
তিনি বলেন, "আজকের বৈঠকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও এর শীর্ষ নেতাদের বিচার সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত জাতীয় নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং জুলাই আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আওয়ামী লীগের সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় সাইবার স্পেসসহ দলটির সব সাংগঠনিক কার্যক্রমও বন্ধ থাকবে।"
আইন উপদেষ্টা আরও জানান, এ বিষয়ে সরকার একটি পরিপত্র প্রণয়ন করছে যা আগামী কর্মদিবসে প্রকাশ করা হবে। এই পদক্ষেপ শুধু একটি রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ নয়, বরং দেশের নিরাপত্তা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
বৈঠকে উপদেষ্টারা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে এই কঠোর পদক্ষেপকে সময়োপযোগী ও প্রয়োজনীয় বলে অভিহিত করেন। এছাড়া ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ নামক একটি প্রস্তাবনার বিষয়ে আলোচনা হয়, যা আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে চূড়ান্ত করে প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
ব্রিফিংয়ের সময় আরও উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম।
এই সংশোধনীর ফলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যত আরও উত্তাল হতে পারে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা। কারণ এই প্রথমবারের মতো একটি রাজনৈতিক দলের পূর্ণাঙ্গ নিষেধাজ্ঞা আইনি কাঠামোর মধ্যে আনা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি আইনটি কার্যকরভাবে প্রয়োগ করা হয়, তবে এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী অধ্যায় হিসেবে পরিগণিত হবে।