বিশ্ব রাজনীতিতে আবারও উত্তেজনার আগুন ছড়াল যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের যৌথ অভিযান। সম্প্রতি ইরানের অতি সুরক্ষিত তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় সফল হামলার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সরাসরি ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানালেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে। এই ধন্যবাদ শুধু কূটনৈতিক সৌজন্য নয়, বরং এটিকে বিশ্লেষকরা দেখছেন একটি নতুন ভূরাজনৈতিক সমীকরণ ও মধ্যপ্রাচ্যে আগাম এক বড় সংঘর্ষের সংকেত হিসেবে।
ট্রাম্প বলেন,আমি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাতে চাই। আমরা একটি দল হিসেবে কাজ করেছি—সম্ভবত ইতিহাসে এমন দলবদ্ধভাবে কেউ কাজ করেনি।
এ বক্তব্যেই স্পষ্ট, ইরানে এই হামলার পেছনে ছিল সুপরিকল্পিত এবং সমন্বিত একটি জোট কৌশল—যা যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের মিলিত সামরিক সক্ষমতার একটি উচ্চমাত্রার প্রদর্শনী।
ট্রাম্প তার নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ লেখেন,আমরা ইরানের ফোরদো, নাতানজ ও ইসফাহান—এই তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় খুবই সফলভাবে হামলা চালিয়েছি। এখন আমাদের সব বিমান ইরানের আকাশসীমার বাইরে।
এই তিনটি স্থাপনাই ছিল ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির মূলভিত্তি। বিশেষ করে ফোরদো—যা ইরানের সবচেয়ে গোপন ও দুর্গতুল্য স্থাপনা হিসেবে পরিচিত। কোম প্রদেশের পাহাড়ের নিচে অবস্থিত এই কেন্দ্রটি বহু বছর ধরে ইসরায়েলের প্রধান লক্ষ্যবস্তু ছিল।
বিশ্লেষকদের মতে, এই হামলা সফল হলে ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা বড় ধরনের ধাক্কা খাবে, যা গোটা অঞ্চলের নিরাপত্তা চিত্র পাল্টে দেবে।
ট্রাম্প আরও বলেন,ইসরায়েলের জন্য ভয়ঙ্কর এই হুমকিকে মুছে ফেলার পথে আমরা অনেক দূর এগিয়েছি। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীকেও চমৎকার কাজের জন্য আমি ধন্যবাদ জানাই।
এ বক্তব্যে বোঝা যায়, হামলার সফলতার পেছনে ইসরায়েলি সামরিক গোয়েন্দা ও কারিগরি দক্ষতাও ছিল অত্যন্ত কার্যকর।
এছাড়া ট্রাম্প একটি ওপেন-সোর্স গোয়েন্দা তথ্যভিত্তিক রিপোর্ট শেয়ার করেন, যেখানে দাবি করা হয়—শক্তিশালী সুরক্ষায় থাকা ফোরদো সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে।
এই পোস্টে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়, ইরানের আকাশসীমা থেকে সব মার্কিন যুদ্ধবিমান নিরাপদে বেরিয়ে এসেছে, যা হামলার পরিকল্পনা ও পরিচালনায় চূড়ান্ত নিখুঁত সমন্বয়ের ইঙ্গিত দেয়।
অন্যদিকে, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি একটি পুরনো ভিডিও শেয়ার করে যুক্তরাষ্ট্রকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তার এ প্রতিক্রিয়ায় মধ্যপ্রাচ্যে আবারও উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খামেনির এ হুঁশিয়ারি যুদ্ধের আশঙ্কা আরও বাড়িয়ে তুলছে।
এই হামলার মধ্য দিয়ে আবারও স্পষ্ট হলো—যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল যেকোনো মূল্যে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে থামাতে চায়। যদিও ইরান এখনো তাদের অবস্থান জানায়নি, তবে এর জবাব আসবে—এমনটাই মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।
এই ঘটনায় মধ্যপ্রাচ্যের জ্বালানি বাজার, নিরাপত্তা পরিস্থিতি এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক—সবকিছুতেই ব্যাপক পরিবর্তনের আভাস মিলছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের এই যৌথ হামলা শুধু একটি সামরিক আঘাত নয়, বরং এটি বিশ্ব রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাঁকবদল। আর ট্রাম্প-নেতানিয়াহুর এই ‘ঐতিহাসিক টিমওয়ার্ক’ হয়তো শুরু করল আরও বিস্তৃত এক কূটনৈতিক যুদ্ধ। এখন দৃষ্টি থাকবে ইরানের প্রতিক্রিয়ার দিকে।



















