close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

আমদানি-রপ্তানি বিঘ্নিত : উ'দ্বে'গে ব্যবসায়ীরা

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
এনবিআরের আন্দোলনে দেশে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে চরম বিঘ্ন, সংকটে শিল্প-কারখানা। ব্যবসায়ীরা বলছেন—চালান ছাড় না হলে রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাবে, শ্রমিকদের বেতন দিতেও সমস্যায় পড়বেন উদ্যোক্তারা।....

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ফের অস্থিরতার ছায়া। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর কাঠামোগত সংস্কার ঘিরে শুরু হওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলনে থমকে যাচ্ছে দেশের আমদানি ও রপ্তানি কার্যক্রম। মূলত এনবিআরকে দুটি স্বতন্ত্র বিভাগে ভাগ করার সরকারি অধ্যাদেশ ঘিরে শুরু হওয়া এই অচলাবস্থা এখন দেশের অর্থনীতিকে মুখোমুখি করেছে ভয়াবহ সংকটের।

শুরুতে কলমবিরতি থাকলেও এখন অনেক জায়গায় ‘সম্পূর্ণ শাটডাউন’ কর্মসূচি চলছে। যার সরাসরি প্রভাব পড়েছে কাস্টমস ও বন্দর কার্যক্রমে। বড় ব্যবসায়ীরা উদ্বেগ প্রকাশ করে জানিয়েছেন, এই অচলাবস্থা অব্যাহত থাকলে দেশে শিল্প উৎপাদন বন্ধ হয়ে যেতে পারে, রপ্তানি মুখ থুবড়ে পড়বে এবং শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দেওয়া নিয়েও দেখা দেবে জটিলতা।

গত ১৩ মে সরকার এনবিআরকে পৃথক দুটি বিভাগে ভাগ করার অধ্যাদেশ জারি করে। পরদিন থেকেই এনবিআর ভবনে শুরু হয় কলমবিরতি। আন্দোলনকারীরা এনবিআর বিলুপ্তির অধ্যাদেশ বাতিল, চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানের অপসারণসহ চার দফা দাবিতে লাগাতার অসহযোগ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

সরকার পক্ষ থেকে ২৫ মে সংশোধনী আনার আশ্বাস দিলে আন্দোলন কিছুটা প্রশমিত হলেও, চেয়ারম্যানের অপসারণ ইস্যুতে আন্দোলন থামেনি। ঈদ পরবর্তী সময়ে আন্দোলন আবারও তীব্র হয়ে ওঠে।

চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে দেখা গেছে, দুপুর ১২টা থেকে ৫টা পর্যন্ত কর্মবিরতি পালিত হয়েছে। এতে স্বাভাবিক কার্যক্রমের তুলনায় মাত্র ১০% শুল্কায়ন হয়েছে। সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী, কর, ভ্যাট ও কাস্টমসের সব দপ্তরে অনির্দিষ্টকালের জন্য ‘সম্পূর্ণ শাটডাউন’ ঘোষণা করা হয়েছে, যা ব্যবসায়ীদের ঘুম কাড়ছে।

শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর কাঁচামাল আমদানি বন্ধ হয়ে পড়ায় উৎপাদন ঝুঁকিতে।
বিএসআরএম গ্রুপের এমডি আমের আলী হুসাইন বলেন,

"আমদানি চেইন বন্ধ হয়ে গেলে সময়মতো কাঁচামাল আসবে না, এতে খরচ বাড়বে, উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হবে। সরকারের উচিত দ্রুত সমাধানে আসা।"

প্রিমিয়ার সিমেন্ট মিলসের এমডি আমিরুল হক বলেন,

"এটা আমাদের ব্যবসা টিকে থাকার প্রশ্ন। এনবিআরের শাটডাউন কর্মসূচি দেশের শিল্পখাতকে স্তব্ধ করে দিতে পারে।"

অ্যালবিয়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান বলেন,

"কমপ্লিট শাটডাউন হলে তা শুধু ব্যবসা নয়, ভোক্তাদের জরুরি পণ্য সরবরাহেও বড় প্রভাব ফেলবে।"

বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন,

"জুনে ছুটি ও কম উৎপাদনের কারণে অনেক কারখানাই বেতনের জন্য হিমশিম খাচ্ছে। আমদানি বন্ধ থাকায় কাঁচামাল আসছে না। এখন


রপ্তানি বন্ধ হলে শ্রমিকদের বেতন দেওয়া সম্ভব হবে না। তারা রাস্তায় নামলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হবে।"

বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন,"যদি আন্দোলনকারীদের কোনো যৌক্তিক দাবি থাকে তা মেনে নেওয়া যেতে পারে, তবে সংস্কার থেমে থাকা চলবে না। প্রয়োজন হলে ব্যবসায়ীরা মধ্যস্থতার দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত।"

গতকাল অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এনবিআরের চেয়ারম্যানসহ ১৬ সদস্যের সঙ্গে বৈঠক করেন।
বৈঠকে বলা হয়—আন্দোলন প্রত্যাহার না করলে সরকার হার্ডলাইনে যাবে। চেয়ারম্যানকে অপসারণ করার সম্ভাবনা নেই।

ড. সালেহউদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন,

"সমস্যার দ্রুত সমাধান হবে। আন্দোলনকারীরা না এলেও কমিশনাররা এসেছেন। আলোচনার দরজা খোলা রয়েছে।"

স্কয়ার গ্রুপের পরিচালক তপন চৌধুরী বলেন,

"এনবিআর এমন একটি সংস্থা, যার স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ থাকলে পুরো দেশের বাণিজ্য স্তব্ধ হয়ে যায়। যেভাবে কাস্টমস বন্ধ হয়ে আছে, তাতে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হুমকির মুখে।"

বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ যেন অর্থনৈতিকভাবে ঝড়ের মধ্যে রয়েছে। কাঁচামাল আসছে না, চালান ছাড় হচ্ছে না, রপ্তানি থেমে যাচ্ছে, বেতন নিয়ে শঙ্কা—সব মিলিয়ে একটি অচলাবস্থার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে বাণিজ্য জগত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি দ্রুত একটি কার্যকর সমাধান না আসে, তাহলে সামনে আরও ভয়াবহ বিপর্যয় অপেক্ষা করছে।

No comments found


News Card Generator