বাংলাদেশের আলোচিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম সম্প্রতি এক হৃদয়বিদারক ঘটনার মাধ্যমে আবারও সংবাদের শিরোনামে উঠে এসেছেন। পারিবারিক জটিলতা ও মানসিক চাপে পড়ে গত শুক্রবার (৬ জুন) তিনি আত্মহত্যার উদ্দেশ্যে ঘুমের ওষুধ সেবন করেন। তার বন্ধুর বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে এ ঘটনা ঘটে।
ঘটনার পরপরই অচেতন অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ধুনট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করানো হয়। হিরো আলমের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও পরিবারের সদস্যরা দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করেন, যাতে বড় কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে। খবর পেয়ে তার স্ত্রী রিয়া মনি বগুড়ায় ছুটে যান এবং পরে তাকে ঢাকায় নিয়ে আসেন।
এই আত্মহননের চেষ্টাকে কেন্দ্র করে হিরো আলম প্রকাশ্যে মুখ খুলেছেন। এক আবেগঘন ফেসবুক পোস্টে তিনি নিজের সন্তানদের ছবি পোস্ট করে লেখেন,
আমি মারা গেলে আমার সন্তানদের কী হতো? রিয়া মনি হয়তো অন্য কাউকে বিয়ে করে জীবন সাজিয়ে নিতো, কিন্তু আমার আলো, আবির আর আলাপ — এরা তো আমার হৃদয়ের টুকরো।
তিনি বলেন, "মানুষ কখনও কখনও ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। কিন্তু সেই সিদ্ধান্তের আগে ভাবা উচিত — তার জীবনে যারা জড়িত, তাদের কী হবে।
হিরো আলম আরও বলেন, রিয়া মনি হয়তো আমার ভালোবাসা বোঝে না, কিন্তু একজন মেয়ের কাছে তার স্বামীই সবচেয়ে বড় সম্পদ। জীবনসঙ্গী ফর্সা বা কালো — সেটা মুখ্য নয়, তার মনটা বড় হলেই যথেষ্ট। আমি বিশ্বাস করি, রিয়া মনি আমার শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত আমার সঙ্গেই থাকবে।
একপর্যায়ে তিনি এমনও মন্তব্য করেন, “স্বামী যখন হারিয়ে যায়, তখনই স্ত্রী বুঝতে পারে, সে কতটা মূল্যবান ছিল।
তার এই আবেগপ্রবণ বক্তব্য সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেছে, আর অনেকেই বিষয়টিকে মানুষের আবেগ ও পারিবারিক সম্পর্কে অবহেলার পরিণতি হিসেবে ব্যাখ্যা করছেন।
অনেকেই বলছেন, সমাজে আজকাল সম্পর্কের গভীরতা কমে যাওয়ার কারণে এ ধরনের ঘটনা বারবার ঘটছে। যেখানে একসময় ভালোবাসা ছিল অটুট, সেখানে হঠাৎ করে টানাপোড়েন এসে জীবন পর্যন্ত কেড়ে নিতে চায়।
সূত্র জানায়, হিরো আলম ও তার স্ত্রী রিয়া মনির মধ্যে অনেকদিন ধরেই দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। তাদের আলাদা হয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত মানসিকভাবে আলমকে বিপর্যস্ত করে তোলে। একাকীত্ব, সামাজিক চাপ, এবং ভালোবাসার অভাবে তিনি নিজেকে শেষ করে দেওয়ার চিন্তা করেন।
তবে আত্মহত্যার চেষ্টার পর রিয়া মনি তার পাশে এসে দাঁড়ানোয় দুজনের মধ্যে পুনরায় সম্পর্কের উষ্ণতা ফিরে এসেছে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
এই ঘটনায় একটি বড় বার্তা ছড়িয়ে পড়েছে সমাজে—আত্মহত্যা কোনো সমাধান নয়, বরং সাহসিকতা ও ভালোবাসার পুনরুদ্ধারই হতে পারে একটি পরিবারের নতুন সূচনা।
একটা সম্পর্ক ভেঙে যাওয়া কিংবা দূরত্ব তৈরি হওয়া জীবনের শেষ নয়। হিরো আলমের মতো অনেকেই হয়তো এ যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে যান, কিন্তু যারা ফিরে আসেন, তারাই জীবনের নতুন সংজ্ঞা তৈরি করেন। হিরো আলমের কণ্ঠে ভর করে সমাজের প্রতিটি মানুষকে বুঝতে হবে—ভালোবাসা হারিয়ে গেলে জীবন নয়, বরং ভালোবাসাকে ফেরানোর চেষ্টাই হোক মানুষের সত্যিকারের সাহস।