নারায়ণগঞ্জের কাশিপুরে এক নাটকীয় পরিস্থিতির মধ্যে আলোচিত আওয়ামী লীগ নেত্রী রজনী আক্তার টুসীকে (৩৮) আটক করেছে পুলিশ। শনিবার (২৪ মে) রাত ১০টার দিকে সদর উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের ফরাজিকান্দা এলাকার একটি ভাড়া বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ঘটনাটি এলাকায় তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি করেছে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক চর্চার জন্ম দিয়েছে।
স্থানীয় সূত্র ও পুলিশের বরাতে জানা যায়, রজনী আক্তার টুসী গত তিন মাস ধরে ফরাজিকান্দা এলাকায় মুসলিম নগর পাওয়ার হাউজ সংলগ্ন একটি বাড়ির নিচতলার ফ্ল্যাটে গোপনে ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করছিলেন। তার স্থায়ী ঠিকানা রাজধানীর ডেমরা এলাকায়। তিনি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের নেত্রী এবং বাংলাদেশ ছাত্রলীগ দক্ষিণ শাখার সাবেক সহ-সভাপতি ছিলেন।
প্রথমে তিনি নিজের পরিচয় গোপন রেখে ভাড়াটিয়া হিসেবে এলাকায় বসবাস করছিলেন। তবে প্রতিবেশীরা তার গতিবিধিকে সন্দেহজনক বলে মনে করতে থাকেন। তার চলাফেরা ও ব্যবহার নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে সন্দেহ দানা বাঁধে এবং তারা বিষয়টি নজরে রাখেন। শনিবার রাতে পুলিশ তাকে আটক করতে এলে টুসী আচমকা ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেন। এতে উপস্থিত সাধারণ জনগণ এবং স্থানীয় ছাত্রসমাজ ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে।
এ সময় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকায়। কিছুক্ষণের মধ্যে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরাও পাল্টা স্লোগানে অংশ নেন, যার ফলে রাজনৈতিক উত্তেজনা চরমে পৌঁছে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ মোতায়েন করা হয় এবং দ্রুত তাকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
এই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশ তাকে হেফাজতে নিচ্ছে এবং তার বাসায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ঝুলানো রয়েছে। এতে করে একপক্ষ বলছে, তিনি রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত ব্যক্তি হওয়ায় তাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে হয়রানি করা হয়েছে। অপরদিকে, স্থানীয়দের দাবি, তার গোপন অবস্থান এবং আচরণ প্রশ্নবিদ্ধ ছিল।
ফতুল্লা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শরীফুল ইসলাম জানান, “স্থানীয়দের অভিযোগ এবং গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে রজনী আক্তার টুসীকে আটক করা হয়। তিনি সম্প্রতি ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস শুরু করেছিলেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে এবং বিস্তারিত তদন্তের পর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এদিকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থকদের মুখোমুখি অবস্থান এবং পাল্টা স্লোগানের ঘটনায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে এবং পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ও ভবিষ্যত প্রশ্ন
টুসীর অতীত রাজনৈতিক পরিচয় এবং বর্তমান অবস্থান নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। তিনি যে এলাকায় অবস্থান করছিলেন, তা তার রাজনৈতিক পরিচয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলেও অনেকে মত দিয়েছেন। বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা বলছেন, তার উপস্থিতি হয়তো ভবিষ্যৎ কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রস্তুতির অংশ ছিল।
এই ঘটনায় আবারও প্রমাণ হলো, রাজনৈতিক নেতাদের গোপন অবস্থান ও আচরণ সাধারণ মানুষের কৌতূহল এবং শঙ্কার জন্ম দিতে পারে। ভবিষ্যতে এ ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও সক্রিয় ও সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।



















