বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) দেশের আম্পায়ারিং বিভাগে আন্তর্জাতিক মানের উন্নতি সাধনের লক্ষ্যে আইসিসির সাবেক এলিট প্যানেল আম্পায়ার সাইমন টোফেলকে যুক্ত করতে যাচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ার এই অভিজ্ঞ আম্পায়ার ৩ বছরের জন্য বিসিবির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হবেন এবং দেশি আম্পায়ারদের প্রশিক্ষণ দেবেন। বিসিবির বোর্ডের সর্বশেষ সভায় এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
সাইমন টোফেল আইসিসির আম্পায়ারিংয়ে দীর্ঘ এবং সফল ক্যারিয়ার গড়েছেন। ১৯৯৯ সালে আন্তর্জাতিক ওয়ানডে দিয়ে শুরু হওয়া তার আম্পায়ারিং ক্যারিয়ার ২০০৩ থেকে ২০১২ পর্যন্ত আইসিসির এলিট প্যানেলে তিনি ছিলেন। টোফেলকে আইসিসির মেগা টুর্নামেন্টসহ অ্যাশেজ সিরিজের বড় ম্যাচে দায়িত্ব পালন করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। ২০০৪ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত টানা পাঁচবার তিনি আইসিসির বর্ষসেরা আম্পায়ারের পুরস্কার পেয়েছেন, যা এক অনন্য রেকর্ড।
বিসিবির আম্পায়ার্স কমিটির চেয়ারম্যান ইফতেখার রহমান মিঠু বলেন, “আমরা সাইমন টোফেলের সঙ্গে প্রায় ৪-৫ মাস ধরে আলোচনা করছিলাম। বোর্ড সভায় তাকে নিয়োগ দেওয়ার অনুমোদন পেয়েছি। তিন বছরের চুক্তির আওতায় তিনি দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের আম্পায়ারদের উন্নতিতে কাজ করবেন। আমাদের লক্ষ্য ১০-১৫ জন দক্ষ আম্পায়ার ট্রেনার তৈরি করা যারা সারাদেশে প্রশিক্ষণ দেবেন। এই প্রোগ্রামে তার প্রতিনিধি দলও সহযোগিতা করবে।”
তিনি আরও জানান, “এখনো চুক্তি স্বাক্ষর হয়নি, তবে সাইমন এ প্রক্রিয়ায় পুরোপুরি যুক্ত আছেন। খুব শিগগিরই প্রক্রিয়া শুরু হবে এবং আমরা বিস্তারিতভাবে সাংবাদিক ও ক্রিকেট ভক্তদের জানাব।”
সাইমন টোফেলের নিয়োগ দেশের আম্পায়ারিং ব্যবস্থাকে আন্তর্জাতিক মানে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বড় পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। দেশের ক্রিকেটে নিয়মশৃঙ্খলা বজায় রাখতে এবং খেলার সঠিক ও ন্যায্য পরিবেশ নিশ্চিত করতে তার অভিজ্ঞতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বর্তমানে দেশের ক্রিকেটের বিভিন্ন স্তরে আম্পায়ারদের দক্ষতা ও মান উন্নয়নে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে বিসিবি। এবার আন্তর্জাতিক একজন লিজেন্ড আম্পায়ারের সংযুক্তির ফলে এই প্রচেষ্টা আরও দৃঢ় হবে এবং দেশের আম্পায়ারিংয়ের মানও বিশ্বমানের কাছে পৌঁছাবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সাইমন টোফেলের অভিজ্ঞতা ও আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি দেশে আম্পায়ারিংয়ে নতুন যুগের সূচনা করবে। তার প্রশিক্ষণ দেশের তরুণ আম্পায়ারদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। এ ছাড়া তার সঙ্গে কাজ করে স্থানীয় আম্পায়াররা আন্তর্জাতিক মানের শিখন পাবে যা বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
সাইমন টোফেলের সঙ্গে ৩ বছরের চুক্তির প্রথম বছর হবে মূলত প্রশিক্ষণ ও পরামর্শক হিসেবে কাজ করার। পরবর্তী দুই বছরে তিনি সরাসরি প্রশিক্ষণ কর্মসূচি পরিচালনা করবেন এবং নিজস্ব প্রতিনিধি দল নিয়ে আসবেন। তবে তার আগমনের সময়সূচি দেশের ক্রিকেট ক্যালেন্ডার ও প্রোগ্রামের প্রয়োজন অনুযায়ী নির্ধারিত হবে।
বিসিবির এই সিদ্ধান্ত দেশের ক্রিকেট উন্নয়নে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সহযোগিতার দরজা খুলে দিয়েছে। আশা করা হচ্ছে, সাইমন টোফেলের নিয়োগ দেশি আম্পায়ারদের দক্ষতা ও পারফরম্যান্সকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে এবং ক্রিকেটের খেলার মানও উন্নত হবে।
পরবর্তী দিনগুলোতে বিসিবি এই বিষয় নিয়ে আরও বিস্তারিত পরিকল্পনা প্রকাশ করবে এবং প্রোগ্রামের সূচনা সম্পর্কে জানাবে। দেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা এই পদক্ষেপকে বড় ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন এবং দেশের ক্রিকেটের উন্নতিতে এর প্রভাব অপেক্ষায় রয়েছেন।



















