কোরবানির ঈদ ঘিরে দেশের পশুর হাট, চামড়া ব্যবস্থাপনা ও বর্জ্য অপসারণ বিষয়ে যখন প্রশাসন চূড়ান্ত প্রস্তুতিতে ব্যস্ত, তখন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানালেন এক আবেগঘন বার্তা। তিনি বলেন, “আসন্ন কোরবানির ঈদের সময় হয়তো আমরা দায়িত্বে থাকবো না। তবে যতদিন আছি, দেশের জন্য সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করে যাচ্ছি।”
রোববার সচিবালয়ে কোরবানির পশুর হাট এবং কাঁচা চামড়া ব্যবস্থাপনা ও আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির বৈঠক শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি। উপদেষ্টার বক্তব্যে স্পষ্ট ইঙ্গিত ছিল, সরকারের পরিবর্তন বা উপদেষ্টা পরিষদের সময়সীমা শেষ হওয়ার সম্ভাবনার দিকেই।
তিনি বলেন, “দেশের গরিব মানুষের হক হচ্ছে কোরবানির চামড়া। অথচ প্রতি বছর সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে প্রচুর চামড়া নষ্ট হয়। এবার আমরা চাই—একটা চামড়াও যাতে অপচয় না হয়। এর ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করছি।”
তিনি আরও বলেন, “এ বছর যেন কাঁচা চামড়া পাচার বা অবৈধভাবে রপ্তানির সুযোগ কেউ না পায়, সেজন্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকেও সতর্ক রাখা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে সক্রিয় ভূমিকা রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”
পশুর হাট ব্যবস্থাপনা নিয়ে আশাবাদী স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, “আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথাসাধ্য চেষ্টা করছে হাট এবং আশেপাশের এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। আমরা আশা করি, এবার কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ছাড়াই কোরবানির পশুর কেনাবেচা হবে।”
উপদেষ্টা বলেন, “পশুর হাটে প্রবেশ ও বাহির হওয়ার পথ স্পষ্ট রাখতে হবে। ভাসমান হাট বসানোর সুযোগ কাউকে দেওয়া যাবে না। জনদুর্ভোগ ও যানজট যেন না হয়, সেজন্য ট্রাফিক পুলিশ এবং সিটি করপোরেশনকে সমন্বয় করতে হবে।”
ঢাকার পরিচ্ছন্নতা নিয়েও কঠোর অবস্থানে আছেন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, “আমরা রাজধানীকে পরিচ্ছন্ন দেখতে চাই। তাই নির্দেশ দিয়েছি, কোরবানির ঈদের দিন দুপুর থেকে ১২ ঘণ্টার মধ্যে সব বর্জ্য অপসারণ করতে হবে।”
তিনি সিটি করপোরেশনের প্রশাসকদের উদ্দেশ্যে বলেন, “সকল ওয়ার্ডে আগেই পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের প্রস্তুত রাখা হোক। বর্জ্য অপসারণের ট্রাক ও গর্ত খনন কাজ ঈদের আগেই সম্পন্ন করতে হবে। জনগণ যাতে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে না পড়ে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।”
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা তার বক্তব্যে প্রশাসনের সক্রিয়তা ও আন্তরিকতা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “আমরা অনেক সীমাবদ্ধতার মাঝেও চেষ্টা করছি যেন একটি সুন্দর, নিরাপদ এবং পরিচ্ছন্ন কোরবানির ঈদ নিশ্চিত করা যায়।”
তিনি সবশেষে জানান, “জনগণের সেবা করাই আমাদের দায়িত্ব। দায়িত্বে যতদিন আছি, দেশের মানুষের জন্য সর্বোচ্চটা দিয়ে যেতে চাই।”
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার এই বক্তব্য শুধু নির্দেশনা নয়, বরং এক ধরনের দায়বদ্ধতার প্রকাশ। সামনে নতুন দায়িত্বশীলদের আগমন হোক বা না হোক, বর্তমান প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোরবানির ঈদকে ঘিরে যে আন্তরিক প্রচেষ্টা চলছে, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে।



















