close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

আধুনিক প্রযুক্তির ভিড়ে হারিয়ে গেছে ঐতিহ্যবাহী গরু-মহিষের হাল চাষ।..

শাহাজাদ ইসলাম avatar   
শাহাজাদ ইসলাম
এক সময় গ্রামীণ বাংলার কৃষি নির্ভর জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল গরু-মহিষ দিয়ে হাল চাষ।..

সে সময় গ্রামীণ বাংলার চাষাবাদের প্রধান উপকরণ ছিল গরু ও মহিষের হাল। মাঠের পর মাঠ জুড়ে দেখা যেত গরু-মহিষে টানা লাঙলের দৃশ্য। 

কৃষকের ঘামে ভেজা শরীর, গরুর গলায় ঝোলে ঘন্টা, আর লাঙলের ফলা ফুঁড়ে উঠে আসা উর্বর মাটি এই ছিল গ্রামীণ জীবনের চেনা দৃশ্য। কিন্তু সময়ের স্রোতে আর প্রযুক্তির অগ্রগতিতে সেই দৃশ্য এখন হারিয়ে গেছে। আধুনিক যন্ত্রপাতি, ট্রাক্টর ও পাওয়ার টিলার এসে দখল করেছে চাষের মাঠ। ফলে গরু-মহিষ দিয়ে হাল চাষ করার ঐতিহ্য ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ জনপদ থেকে।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ঢোলারহাট ইউনিয়নের প্রবীণ কৃষক আব্দুল হালিম বলেন, আমার বাবা-চাচারা গরু দিয়ে হাল চাষ করতেন, আমি শিখেছি তাদের কাছেই। এখন আমার ছেলে ট্রাক্টর ভাড়া করে চাষ করে। গরু-মহিষের হাল আর মাঠে দেখা যায় না।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার এক প্রবীণ কৃষক জানান,আগে প্রতিটি বাড়িতেই গরু-মহিষ থাকত। জমিতে হাল চাষ করা মানে ছিল একটা উৎসব। এখন সেই দিন আর নেই। সবকিছু মেশিন নির্ভর হয়ে গেছে।

তরুণ কৃষকেরা বলছেন, গরু-মহিষ পালন কষ্টসাধ্য এবং ব্যয়বহুল।গরু দিয়ে হাল চাষ করতে সময় বেশি লাগে, খরচও বেশি। তার চেয়ে পাওয়ার টিলার দিয়ে অল্প সময়েই পুরো জমি চাষ হয়ে যায়।

এদিকে কিছু প্রবীণ কৃষক দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, “গরু-মহিষ শুধু চাষের জন্য নয়, একসময় কৃষকের সাথী ছিল। এখন তারা নেই, মনে হয় মাঠগুলো যেন নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েছে।”কিন্তু কালের পরিবর্তনে সেই চিত্র আজ বিলুপ্তির পথে। আধুনিক প্রযুক্তি আর যান্ত্রিকতার ভিড়ে হারিয়ে গেছে এই ঐতিহ্যবাহী কৃষি পদ্ধতি।

ঠাকুরগাঁও কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলায় কৃষিকাজে যান্ত্রিকীকরণের হার প্রায় ৯৯%। ফলে ঐতিহ্যবাহী হাল চাষ বিলুপ্তির পথে।

তবে কিছু কৃষি গবেষক ও সংস্কৃতি সচেতন মহল মনে করেন, গরু-মহিষের হাল চাষ শুধু কৃষি পদ্ধতি নয়, এটি একটি সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও শিকড়ের অংশ। তারা চান সরকার বা স্থানীয় প্রশাসন যেন ঐতিহ্যবাহী কৃষি পদ্ধতিকে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয় যেমন প্রদর্শনী মাঠ, মেলা বা শিক্ষামূলক কার্যক্রম।

স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রযুক্তি কৃষিতে গতি এনেছে ঠিকই, তবে ঐতিহ্যগত কৃষিপদ্ধতিও আমাদের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক পরিচয় বহন করে। এই ঐতিহ্য সংরক্ষণেও উদ্যোগ ইতি মধ্যে নিয়েছেন জেলা প্রশাসক কর্মকর্তারা ঠাকুরগাঁওয়ে বিভিন্ন যাদুঘরে এই ঐতিহ্য পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সংরক্ষিত আছে।

গ্রামবাংলার শস্যভরা মাঠে গরু-মহিষের লাঙলের দৃশ্য যেন স্মৃতিতে বন্দি না হয়ে যায়, সে চেষ্টাই এখন সময়ের দাবি।

 

لم يتم العثور على تعليقات