close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

আবরার হত্যা মামলায় ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল: হাইকোর্টের রায়ের পূর্ণাঙ্গ বিশ্লেষণ..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডে বিচারিক আদালতের দেওয়া ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ৫ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় বহাল রেখেছে হাইকোর্ট। এই রায় দেশের শিক্ষাঙ..

আবরার হত্যাকাণ্ড: ঘটনার পটভূমি

বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন আবরার ফাহাদ। ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলে ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মীর নির্মম নির্যাতনে নিহত হন তিনি। ঘটনার পরদিন তার বাবা চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

ঘটনার দিনই কুষ্টিয়ার বাড়ি থেকে বুয়েটে ফিরে নিজের ১০১১ নম্বর কক্ষে ওঠেন আবরার। ফেসবুকে ভারতবিরোধী একটি পোস্ট দেওয়ার পর রাত ৮টার দিকে ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী তাকে ডেকে নিয়ে যান। রাত ৩টার দিকে জানা যায়, নির্মম নির্যাতনের ফলে তিনি মারা গেছেন। বুয়েট মেডিকেলের চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ঘটনার খবর পেয়ে রাত ২টার দিকে টহল পুলিশ হলে ঢুকতে চাইলে তাদের বাধা দেওয়া হয়। পরে রাত ৪টার দিকে পুলিশ হলে প্রবেশ করে এবং মৃতদেহ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

বিচারিক প্রক্রিয়া ও হাইকোর্টের রায়

ঘটনার পরপরই দেশব্যাপী আন্দোলন শুরু হয়। শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদের মুখে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। তদন্ত শেষে ৩৭ দিনের মধ্যে চার্জশিট দাখিল করা হয় এবং ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত।

নিম্ন আদালতের রায় হাইকোর্টে পাঠানো হলে কারাবন্দি আসামিরা জেল আপিল করেন এবং কয়েকজন ফৌজদারি আপিল করেন। অবশেষে দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে হাইকোর্ট তাদের মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রাখেন।

সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের তালিকা

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ২০ জন:

১. মেহেদী হাসান রাসেল ২. মো. অনিক সরকার ওরফে অপু ৩. মেহেদী হাসান রবিন ওরফে শান্ত ৪. ইফতি মোশাররফ সকাল ৫. মো. মনিরুজ্জামান মনির ৬. মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন ৭. মো. মাজেদুর রহমান মাজেদ ৮. মো. মুজাহিদুর রহমান মুজাহিদ ৯. খন্দকার তাবাকারুল ইসলাম ওরফে তানভির ১০. হোসেন মোহাম্মদ তোহা ১১. মো. শামীম বিল্লাহ ১২. এ এস এম নাজমুস সাদাত ১৩. মুনতাসির আল জেমী ১৪. মো. মিজানুর রহমান মিজান ১৫. এস এম মাহমুদ সেতু ১৬. সামসুল আরেফিন রাফাত ১৭. মো. মোর্শেদ ওরফে অমর্ত্য ইসলাম ১৮. এহতেশামুল রাব্বি ওরফে তানিম (পলাতক) ১৯. মোহাম্মদ মোর্শেদ উজ্জামান মণ্ডল ওরফে জিসান (পলাতক) ২০. মুজতবা রাফিদ (পলাতক)

যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত ৫ জন:

১. অমিত সাহা ২. ইসতিয়াক আহমেদ মুন্না ৩. মো. আকাশ হোসেন ৪. মুহতাসিম ফুয়াদ ৫. মো. মোয়াজ ওরফে মোয়াজ আবু হোরায়রা

সামাজিক প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ প্রভাব

হাইকোর্টের এই রায় দেশের শিক্ষাঙ্গন, বিচারব্যবস্থা এবং রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। আবরার হত্যার পর শিক্ষার্থীদের তীব্র আন্দোলনের ফলে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়, যা এখনো বলবৎ রয়েছে।

এছাড়া, শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতার অনুভূতি দূর করতে এ রায় একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত হিসেবে কাজ করবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

 

আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার এই রায় বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার ইতিহাসে এক নজির স্থাপন করেছে। এই রায়ের মাধ্যমে প্রমাণিত হলো যে, অন্যায় করলে তার শাস্তি অবশ্যই হবে, তা যতই শক্তিশালী গোষ্ঠী হোক না কেন। তবে, শিক্ষাঙ্গনে সহিংসতা রোধে ভবিষ্যতে আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, যাতে আবরারের মতো আর কোনো শিক্ষার্থীকে অকালে প্রাণ হারাতে না হয়।

Walang nakitang komento


News Card Generator