জাতীয় পার্টি না হলে দেশে আজকের মতো একনায়কতন্ত্র হতো না’ — এমন বক্তব্য দিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে নতুন করে আলোড়ন তুলেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ।
তিনি বলেন, আজ যে রাজনৈতিক অচলাবস্থা ও গণতন্ত্রহীনতা দেশকে গ্রাস করেছে, তার একটি বড় কারণ হলো জাতীয় পার্টির ভূমিকা। “জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের সঙ্গে অতীতে ক্ষমতা ভাগাভাগির মাধ্যমে একনায়কতন্ত্রের পথ প্রশস্ত করেছে। তারা ২০১৮ সালের ‘নিশিরাতের ভোট’-এ আওয়ামী লীগের অংশীদার ছিল, অথচ আজ নিজেদের নিরপেক্ষ বলে প্রচার করছে—এটি নিছক প্রতারণা।”
রাজধানীতে এক আলোচনাসভায় দেওয়া বক্তৃতায় শামা ওবায়েদ বলেন, “আজও জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করার কোনো দাবি উঠছে না। এই নীরবতা প্রমাণ করে, দেশে এখনো গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথ রুদ্ধ করে রাখা হয়েছে।”
‘গণতন্ত্র ধ্বংসকারীদের বিচার ছাড়া মুক্তি নেই’
শামা ওবায়েদ স্পষ্ট করে বলেন, যারা গণতন্ত্র ধ্বংস করেছে, তাদের সঙ্গে আলোচনার কোনো সুযোগ নেই। বরং তাদের বিচারের মুখোমুখি করা উচিত। তিনি বলেন, “এখন যারা নির্বাচন কমিশন কিংবা প্রশাসনের মুখোশ পরে গণতন্ত্রের নামে প্রহসন করছে, তাদের মুখোশ খুলে দেওয়াই জনগণের দায়িত্ব।”
তিনি আরও বলেন, বিএনপি কখনোই পেশিশক্তি বা সহিংসতার মাধ্যমে ক্ষমতা পরিবর্তনের কথা বলেনি। বরং দলটি বরাবরই রাজনৈতিক সংস্কারের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক উত্তরণে বিশ্বাস করে। এই লক্ষ্যেই বিএনপি ৩ বছর আগে ৩১ দফা সংস্কারের রূপরেখা ঘোষণা করেছিল।
৩১ দফা রূপরেখা—গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের নীলনকশা
শামা ওবায়েদের ভাষায়, “এই ৩১ দফাই হচ্ছে ভবিষ্যৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার রূপরেখা। কিন্তু বাস্তবায়নের জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা দরকার। বিএনপির মধ্যে যেসব উপদেষ্টা দায়িত্বে থেকেও কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছেন না, তাদের অবিলম্বে পরিবর্তন করা উচিত।”
তিনি বলেন, “আমরা দলকে শক্তিশালী ও গতিশীল নেতৃত্বে দেখতে চাই। এখন সময় এসেছে ব্যর্থদের বিদায় দিয়ে নতুন নেতৃত্ব আনার।”
ড. ইউনুসের পদত্যাগ গুঞ্জন ও মূল্যায়ন
সম্প্রতি ড. ইউনুসের পদত্যাগ নিয়ে ছড়িয়ে পড়া গুঞ্জন প্রসঙ্গে শামা ওবায়েদ বলেন, “ড. ইউনুস কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নন, কিন্তু সংকটময় সময়ে তিনি দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে এসেছিলেন। জনগণ ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তার ওপর আস্থা রেখেছিল। তার সদিচ্ছার ভিত্তিতেই তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তাকে সরানোর কোনো যৌক্তিকতা নেই। বরং যারা দায়িত্বে থেকেও কোনো কাজ করতে পারছেন না, তাদের সরানোই এখন সময়ের দাবি।”
সুষ্ঠু নির্বাচনের একমাত্র পথ—অন্তর্বর্তীকালীন সরকার
আলোচনার এক পর্যায়ে তিনি জোর দিয়ে বলেন, “এই সংকট থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ হলো একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন। বর্তমান ব্যবস্থায় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা অসম্ভব।” তিনি বলেন, “রাজনৈতিক দল, সিভিল সোসাইটি এবং জনগণের মধ্যে সংলাপ শুরু হলেই সমাধানের পথ খুলবে। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হলে রাজনৈতিক ঐক্য ও শক্ত অবস্থানই এখন সবচেয়ে জরুরি।”
শামা ওবায়েদের বক্তব্যে পরিষ্কার যে, তিনি শুধু রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সমালোচনা করেননি, বরং নিজ দল এবং রাজনীতির বৃহত্তর বাস্তবতাকে গুরুত্ব দিয়ে একটি সমাধানের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। তার এই বক্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে বিতর্ক ও আলোচনা তৈরি করেছে, যা আগামী দিনে রাজনীতির গতিপথ প্রভাবিত করতে পারে।