close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

আ.লীগের খবর প্রকাশ করলে ন্যূনতম ২ বছর এবং সর্বোচ্চ ৭ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড..

আব্দুল্লাহ আল মামুন avatar   
আব্দুল্লাহ আল মামুন
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সব ধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে

অবশেষে প্রকাশিত হলো অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বর্ণাঢ্য পদক্ষেপ—‘সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫’। গতকাল রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে গেজেট আকারে প্রকাশিত এ অধ্যাদেশে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক দল—বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ—এর সব ধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

২০০৯ সালের ‘সন্ত্রাসবিরোধী আইন’-এর আলোকে এই সংশোধিত অধ্যাদেশে সংযোজিত হয়েছে নতুন ও কঠোর ধারা। গেজেট অনুযায়ী, আইনটির ধারা ২০-এর (খ) উপধারা (১)-এর দফা (ঙ)-তে বলা হয়েছে:

“উক্ত সত্তা কর্তৃক বা উহার পক্ষে বা সমর্থনে যেকোনো প্রেস বিবৃতি প্রকাশ, মুদ্রণ, কিংবা গণমাধ্যম, অনলাইন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে যেকোনো ধরনের প্রচারণা; অথবা মিছিল, সভা-সমাবেশ, সংবাদ সম্মেলন আয়োজন কিংবা জনসম্মুখে বক্তৃতা প্রদান নিষিদ্ধ করিবে।”

এর অর্থ দাঁড়ায়—বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং তাদের পক্ষে বা সমর্থনে যেকোনো ধরনের প্রচারণা, সংবাদ, বক্তৃতা, মতামত, সমাবেশ কিংবা মিডিয়া কার্যক্রম এখন থেকে সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে অনলাইন থেকে শুরু করে প্রিন্ট ও সম্প্রচার মাধ্যমে, এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ অ্যাডভোকেট জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, “অধ্যাদেশে 'সত্তা' শব্দটি ব্যবহার করা হলেও এর অর্থ বোঝায় রাজনৈতিক দল বা সংগঠনকেই। ইংরেজিতে যেটি ‘Entity’। সুতরাং এ নিষেধাজ্ঞা আওয়ামী লীগের মতো সংগঠনকেই লক্ষ্য করে।”

তিনি আরও বলেন, “পুরনো আইনে দলীয় কার্যালয় বন্ধ, সম্পদ জব্দ, ইত্যাদি ব্যবস্থা ছিল, কিন্তু কার্যত তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করার মতো কঠোর ভাষা ছিল না। এবার তা যুক্ত করা হয়েছে এবং তা গণমাধ্যমেও প্রতিফলিত হওয়ার সুযোগ রাখা হয়নি।”

জ্যোতির্ময় বড়ুয়া আরও জানিয়েছেন, শুধু রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করেই সরকার থেমে থাকেনি। বরং এই সংশোধিত অধ্যাদেশের মাধ্যমে গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের জন্যও কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, “সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ধারা ৯-এর (৩) উপধারায় আগে থেকেই নিষিদ্ধ ঘোষিত সত্তার পক্ষে সংবাদ পরিবেশন করাকে অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হতো। এখন সেটিকে আরও জোরালো ও সুস্পষ্ট করা হয়েছে। ফলে আওয়ামী লীগের পক্ষাবলম্বী কোনো সংবাদ প্রকাশ করলে সংশ্লিষ্ট সংবাদমাধ্যম বা সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এই আইনের আওতায় অপরাধ প্রমাণিত হলে ন্যূনতম ২ বছর এবং সর্বোচ্চ ৭ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড, সঙ্গে আর্থিক জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।

এমন একটি সিদ্ধান্তকে দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে 'ভূমিকম্প' বলেই আখ্যা দিচ্ছেন বিশ্লেষকরা।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার (অব.) সাখাওয়াত হোসেন বলেন,

“এটি শুধু একটি দলের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ করা নয়, বরং একটি রাজনৈতিক যুগের অবসান ঘটানো। এর প্রভাব বহুমাত্রিক এবং দীর্ঘস্থায়ী হবে।”

বিশ্লেষকদের মতে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এমন সিদ্ধান্ত বাংলাদেশে একটি নতুন রাজনৈতিক যুগের সূচনা করতে চলেছে, যেখানে সন্ত্রাসবিরোধী আইনকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে ‘জাতীয় নিরাপত্তা’র স্বার্থে কার্যত একটি প্রভাবশালী দলকে নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া হলো।

এই উদ্যোগের পরিণতি কী হবে—দেশ কি আরও স্থিতিশীল হবে, না কি নতুন ধরনের দ্বন্দ্বের জন্ম দেবে—তা সময়ই বলে দেবে।

তবে যে প্রশ্নটি এখন সবচেয়ে বড় হয়ে দেখা দিয়েছে তা হলো—রাজনীতির মাঠে আওয়ামী লীগের শূন্যস্থান পূরণে কে এগিয়ে আসবে? এবং বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতি কীভাবে পুনর্গঠিত হবে?

Geen reacties gevonden


News Card Generator