সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ও সামাজিক পটভূমিকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে নতুন জাতীয় দিবস ঘোষণা ও পুরাতন সিদ্ধান্ত সংশোধন করেছে। আজ রবিবার (১৬ জুন) দুপুরে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যা পরবর্তীতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেন।
বৈঠকে উল্লেখযোগ্য সিদ্ধান্তের মধ্যে অন্যতম হলো, আগামী ৮ আগস্ট কোনো জাতীয় দিবস হিসেবে পালিত হবে না। যদিও এর আগে ঐ দিনটিকে “নতুন বাংলাদেশ দিবস” হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, যা ছিল অন্তর্বর্তী সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বার্তা বহনকারী ঘোষণা।
প্রসঙ্গত, ৮ আগস্ট ছিল সেই দিন, যেদিন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। সেই সূত্র ধরেই একে ঐতিহাসিক রূপ দিয়ে 'নতুন বাংলাদেশ দিবস' হিসেবে পালন করার কথা বলা হয়েছিল। তবে আজকের বৈঠকে স্পষ্ট করে জানানো হয়, এই সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়েছে।
তবে অন্যদিকে, দুটি দিনকে নতুনভাবে বিশেষ দিবস হিসেবে পালন করার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। এগুলো হলো:
-
১৬ জুলাই — "জুলাই শহীদ দিবস":
এ দিন রংপুরে পুলিশের গুলিতে নিহত হন ছাত্রনেতা আবু সাঈদ। তার আত্মত্যাগকে স্মরণে রেখে দিনটিকে “শহীদ আবু সাঈদ দিবস” নামে পালন করা হবে। উপদেষ্টা পরিষদ দিনটির তাৎপর্য তুলে ধরে জানান, এটি হবে একটি ঐক্য ও গণআন্দোলনের প্রতীক। -
৫ আগস্ট — "জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস":
দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে এই দিনের গণআন্দোলনের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। উপদেষ্টা পরিষদ একমত যে, এই অভ্যুত্থান ছিল বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতার ভিত্তি স্থাপনকারী এক মোড় পরিবর্তনকারী ঘটনা।
এদিকে ৮ আগস্টের দিবস বাতিলের সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে নানা প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে। অনেকে এটিকে সরকারের আত্মসমালোচনার অংশ হিসেবে দেখলেও, কেউ কেউ মনে করছেন এটি রাজনৈতিক কৌশলের একটি চূড়ান্ত পদক্ষেপ। “নতুন বাংলাদেশ দিবস” ঘোষণা দেওয়ার মাধ্যমে যে বার্তা সরকার দিতে চেয়েছিল, তা জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছিল। বিশেষত, ইউনূসপন্থী রাজনৈতিক অবস্থানের সমর্থক ও বিরোধীরা এই সিদ্ধান্ত নিয়ে বিভিন্নমুখী আলোচনা চালিয়ে আসছিল।সরকারপন্থী বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বর্তমান বাস্তবতায় জনগণের অনুভূতির সঙ্গে সংযোগ বজায় রাখার জন্য পুরাতন সিদ্ধান্তে পরিবর্তন আনা হয়েছে। অপরদিকে বিরোধী দলগুলোর একটি অংশ এটিকে সরকারের ‘নীতিগত বিভ্রান্তি’ হিসেবেও ব্যাখ্যা করছে।প্রেস সচিবের ফেসবুক পোস্টের পরপরই হাজারো মন্তব্যে সয়লাব হয়ে যায় পোস্টটি। কেউ কেউ একে সরকারের বাস্তববোধের প্রতিফলন বললেও, অনেকেই ‘দিন পাল্টানোর রাজনীতি’ বলে কটাক্ষ করেছেন।
আজকের উপদেষ্টা পরিষদের এই সিদ্ধান্ত প্রমাণ করে যে, অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের অনুভূতি ও ঐতিহাসিক বাস্তবতার আলোকে নিজেদের পূর্বঘোষিত সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনায় আগ্রহী। ৮ আগস্ট এখন আর কোনো দিবস নয়, তবে ১৬ জুলাই ও ৫ আগস্টের নতুন ইতিহাসে প্রবেশ করলো বাংলাদেশ।