close
কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!
৬০০ কোটি টাকা নিয়ে উধাও ‘বন্ধু মিতালি ফাউন্ডেশন’, গ্রাহকদের কান্নায় প্রকম্পিত নওগাঁ!


নওগাঁয় আবারও এনজিও কেলেঙ্কারি – ৫,০০০ গ্রাহকের সর্বস্ব নিয়ে পালালো প্রতারক চক্র!
নওগাঁর সাধারণ মানুষ প্রতারণার ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন! বন্ধু মিতালি ফাউন্ডেশন নামক একটি সমিতির মালিকরা প্রায় ৬০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে লাপাত্তা হয়েছেন। অসংখ্য নিরীহ গ্রাহক সর্বস্ব হারিয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করলেও এখনো তারা কোনো সুরাহা পাননি।
ধন-সম্পদ বিক্রি করে বিনিয়োগ, কিন্তু এখন শূন্য হাতে বেঁচে থাকার লড়াই
নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার দক্ষিণ মইনুম গ্রামের জাহানারা বেগম ভিক্ষা করে সংসার চালান। পাঁচ বছর আগে একমাত্র মেয়ের বিয়ের জন্য এক কাঠা জমি বিক্রি করে আড়াই লাখ টাকা বন্ধু মিতালি ফাউন্ডেশনে রেখেছিলেন। কিন্তু সেই টাকা ফেরত পাওয়ার বদলে এখন তিনি চোখের জলে ভাসছেন।
একই কাহিনি ধানের চাতালের শ্রমিক মাসুদার। স্বামী ও সন্তান হারানোর পর কঠোর পরিশ্রম করে জমিয়ে রাখা টাকা রেখেছিলেন এই সমিতিতে। কিন্তু এখন সবই গেলো!
রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন বৃদ্ধ জনাব, ছেলেদের পাঠানো ৬০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারকরা!
রানীনগরের বেদগাড়ী ভবানীপুর গ্রামের জনাব তার দুই ছেলেকে বিদেশ পাঠিয়েছিলেন। কষ্টার্জিত অর্থ থেকে ৬০ লাখ টাকা বন্ধু মিতালি ফাউন্ডেশনে রেখেছিলেন ভবিষ্যতের নিশ্চয়তার জন্য। কিন্তু এখন সেই টাকা ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে! পাগলের মতো রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন, ভেবেও পাচ্ছেন না ছেলেদের কী জবাব দেবেন!
অফিস বন্ধ, টাকা উধাও – ১৫ বছরের প্রতারণার ফাঁদ
২০০৯ সালে বন্ধু মিতালি ফাউন্ডেশন চালু করেছিলেন নাজিম উদ্দিন ওরফে তনু। ঢাকায় এমএলএম কোম্পানিতে কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি এ সমিতি চালু করেন।
১৫ বছর ধরে নানা রকম আকর্ষণীয় লভ্যাংশের প্রলোভন দেখিয়ে প্রায় ৫,০০০ গ্রাহকের ৬০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে প্রতিষ্ঠানটি।
তাদের মূল কার্যালয় ছিল নওগাঁ শহরের খাস-নওগাঁ এলাকায়। পাশাপাশি জেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানসহ জয়পুরহাট, রাজশাহী ও বগুড়ায় ৭৫টি শাখা খোলা হয়েছিল। কিন্তু ১২ নভেম্বর হঠাৎ সব কার্যালয় বন্ধ করে দেয় প্রতারক চক্র, আর টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে যায়!
প্রশাসনের দারস্থ হলেও সুরাহা মিলছে না!
গ্রাহকরা স্থানীয় প্রশাসনের কাছে দফায় দফায় অভিযোগ করেও কোনো ফল পাচ্ছেন না। পুলিশ ও প্রশাসনের মধ্যস্থতায় একাধিক বৈঠক হয়, যেখানে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে টাকা ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মামুনুর রশিদ মামুন ও নির্বাহী পরিচালক নাজিম উদ্দিন তনু।
কিন্তু ৩০ নভেম্বর আসার আগেই ১২ নভেম্বর রাতের আঁধারে পালিয়ে যায় প্রতারকরা!
পুলিশের অভিযানে গ্রেফতার, কিন্তু টাকা ফেরতের নিশ্চয়তা নেই!
পালিয়ে যাওয়া প্রতারকদের মধ্যে ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে সেনাবাহিনী সদস্যদের সহায়তায় চেয়ারম্যান মামুনুর রশিদ মামুন গ্রেফতার হন।
এছাড়া গ্রেফতার হয়েছেন –
🔹 মামুনুর রশিদের স্ত্রী
🔹 ভাগনি জামাই
🔹 প্রতারক এমডি নাজিম উদ্দিন তনুর বোন সুফা
কিন্তু গ্রাহকদের ৬০০ কোটি টাকা ফেরত পাওয়ার বিষয়ে এখনো কোনো সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত আসেনি।
গ্রাহকদের আকুতি: “আমাদের টাকা ফেরত চাই”
অসহায় গ্রাহকরা প্রশাসনের কাছে একটাই আবেদন, যেন তারা তাদের কষ্টার্জিত অর্থ ফিরে পান।
এখন দেখার বিষয়, প্রশাসন কতটা দ্রুত এই বিশাল প্রতারণার বিচার করতে পারে এবং নিরীহ জনগণ তাদের হারানো টাকা ফেরত পায় কি না!
Nessun commento trovato