৩৩ কোটি টাকা অপচয়, প্রক্রিয়া থেমে যাওয়ার মর্মান্তিক কাহিনি: প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের দুর্নীতি

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের একটি নতুন প্রকল্পের শ্বাসরুদ্ধকর বাস্তবতা প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে জনগণের কোটি কোটি টাকার অপব্যয় এবং সরকারী কারখানা ও পরীক্ষাগারের কার্যক্র
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের একটি নতুন প্রকল্পের শ্বাসরুদ্ধকর বাস্তবতা প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে জনগণের কোটি কোটি টাকার অপব্যয় এবং সরকারী কারখানা ও পরীক্ষাগারের কার্যক্রম স্থগিত হওয়ার ঘটনা প্রকাশ পাচ্ছে। ২০২৩ সালের ১৯ জানুয়ারি, তৎকালীন প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম একটি গবাদিপশুর খাবার তৈরির সরকারি কারখানা উদ্বোধন করেছিলেন, যা ছিল সাভারে। ওই দিন তিনি ঘোষণা করেছিলেন, “এখন থেকে গবাদিপশুর পুষ্টিকর খাবারের জন্য বিদেশের ওপর নির্ভর করতে হবে না।” কিন্তু বাস্তবতা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। কারখানাটি একদিনের জন্য চালু হলেও তার পর থেকে আর কোনো কার্যক্রম হয়নি। উদ্বোধনের পর থেকে গত দুই বছর ধরে সেই কারখানা বন্ধ রয়েছে, এবং তার জন্য ইতিমধ্যে খরচ হয়েছে ৩৩ কোটি টাকা। যার ফলে একদিকে সরকারের এতো বড় একটি উদ্যোগ কোনো কার্যকর ফল দিতে পারেনি, অন্যদিকে দেশের জনগণকে অর্থের ক্ষতিও হয়েছে। সেই সাথে, কারখানার জন্য নিয়োগকৃত কোনো কর্মীও ছিল না এবং কারিগরি কর্মকর্তাদের কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি। এছাড়া, একই প্রকল্পের অধীনে নির্মিত দুটি পূর্ণাঙ্গ ও পাঁচটি ছোট (মিনি) আকারের পরীক্ষাগারও শূন্য পড়ে রয়েছে, কারণ সেখানেও জনবল নিয়োগ করা হয়নি। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের অধীনে থাকা এসব প্রতিষ্ঠানের অপব্যয়ের এই উদাহরণ দেশব্যাপী আলোচনার জন্ম দিয়েছে। প্রকল্পের আওতায় মোট ৫৮৩ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে তিনটি পর্যায়ে, কিন্তু তার ফলশ্রুতিতে দেশে গরু, দুধ ও অন্যান্য প্রাণীজ পণ্যের দাম বেড়েছে অস্বাভাবিকভাবে। ৭০০-৭৮০ টাকা কেজি দামে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে এবং দুধের দাম প্রতি লিটার ৯০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এদিকে, প্রকল্পটির সমাপ্তির পর বিষয়টি তদন্তের জন্য যখন প্রথম আলো পত্রিকা কর্তৃপক্ষ, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ রেয়াজুল হকের কাছে যোগাযোগ করেছিল, তিনি প্রকল্পের শেষ পরিচালক জসিম উদ্দিনের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। তবে, বাস্তবতা হল, প্রকল্পের দায়িত্ব গ্রহণের পর যিনি ছিলেন, তার বক্তব্য ছিল, জনবল নিয়োগ না হওয়ায় প্রকল্পের ফলপ্রসূ কার্যক্রম চালানো সম্ভব হয়নি। তাই, প্রকল্পের উদ্বোধন করেও সেটি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ হয়ে রয়েছে। এছাড়া, ফরিদপুর ও চট্টগ্রামেও কৃত্রিম প্রজনন পরীক্ষাগার চালু হয়নি, যেগুলোর জন্য শত কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। এমনকি, খুলনায় গবাদিপশু খাদ্য উৎপাদনের ইউনিটও একই কারণে চালু হয়নি, সেখানে মাত্র ১০টি গরু নিয়ে কয়েকজন কর্মচারী কাজ করছেন। তবে, এই প্রকল্পের অধিকাংশ কাজ এখনও অসম্পূর্ণ, এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো পরস্পরকে দায়ী করে চলছে। যেখানে, জনগণের টাকা ব্যয় হয়ে যাচ্ছে, সেখানে প্রকল্পের উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হচ্ছে না। এভাবে পরিকল্পনা ছাড়া কার্যক্রম গ্রহণ করা এবং তার পরেও প্রকল্পগুলোর অব্যবহৃত অবকাঠামো জাতির জন্য কেবল আর্থিক ক্ষতি ছাড়া কিছুই না। বিশেষজ্ঞরা এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন নিয়ে গভীর প্রশ্ন তুলেছেন। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, “এ ধরনের প্রকল্পে জনগণের অর্থ অপচয়ের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত।” এখন প্রশ্ন হল, এসব বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করার পরও কেন এসব প্রকল্পে সুফল আসেনি? এবং দেশের কৃষক, খামারী, এবং জনগণ এর থেকে উপকার কবে পাবে, তা নিয়ে জনমনে সন্দেহ ও বিরক্তি সৃষ্টি হয়েছে।
कोई टिप्पणी नहीं मिली