আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে চলমান জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে প্রেস সচিব শফিকুল আলম রোববার একটি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন—নির্বাচন যেকোনো সময় হতে পারে, তবে তা ৩০ জুনের পরে যাবে না। রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রধান উপদেষ্টার জাপান সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, “এটা (নির্বাচন) আগেও হতে পারে—ডিসেম্বর, জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি, মার্চ, এপ্রিল বা মে—যেকোনো মাসেই। তবে ৩০ জুনের পর নয়।"
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব মো. আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ও সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ।
জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শুরু সোমবার
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আগামীকাল সোমবার বিকেল চারটায় জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় দফা বৈঠক উদ্বোধন করবেন বলে জানিয়েছেন উপ–প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার।
তিনি বলেন, “সংস্কার প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী সকল রাজনৈতিক দলকে আলোচনায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আলোচনা খুব শিগগিরই শেষ হবে বলে আমরা আশাবাদী। আলোচনা শেষে ‘জুলাই চার্টার’ নিয়ে একটি সুস্পষ্ট ঘোষণা দেওয়া সম্ভব হবে।”
জাপান সফরে গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি ও সহায়তার প্রতিশ্রুতি
প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, প্রধান উপদেষ্টার সাম্প্রতিক জাপান সফর বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে। সফরে ছয়টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে—
-
ডেভেলপমেন্ট পলিসি লোন বাবদ ৪১৮ মিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা
-
জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী ডুয়েল গেজ রেললাইন প্রকল্পে ৬৪১ মিলিয়ন ডলার সহায়তা
-
মানবসম্পদ উন্নয়ন ও স্কলারশিপের জন্য ৪.২ মিলিয়ন ডলার সহায়তা
-
মহেশখালী-মাতারবাড়ি উন্নয়ন প্রকল্পে জাপানের বড় বিনিয়োগের সম্ভাবনা (প্রাক্কলিত ব্যয়: ২৯ বিলিয়ন ডলার)
শফিকুল আলম জানান, জাপানের প্রধান বিনিয়োগকারী সংস্থাগুলোর সঙ্গে আলাপচারিতায় বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করা হয়েছে। তিনি বলেন, “জাপান আমাদের ইন্টারিম সরকারের সঙ্গে থাকার আশ্বাস দিয়েছে।”
এক লাখ বাংলাদেশিকে জাপানে মানবসম্পদ হিসেবে নিয়োগের পরিকল্পনা
জাপান সফরের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ দিকগুলোর একটি হলো—আগামী পাঁচ বছরে এক লাখ বাংলাদেশি কর্মীকে জাপানে নিয়োগের উদ্যোগ। প্রেস সচিব জানান, “জাপানের ম্যানপাওয়ার মার্কেটে আমাদের জন্য নতুন দরজা খুলেছে। এই লক্ষ্যে কিছু চুক্তিও হয়েছে। এমনকি একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে, যার নেতৃত্বে রয়েছেন অধ্যাপক ইউনূস নিজেই।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা যদি একটি সমন্বিত উদ্যোগ নিতে পারি, তবে এক লাখ নয়—এর চেয়েও বেশি মানবসম্পদ জাপানে পাঠানো সম্ভব হতে পারে।”
নির্বাচন সামনে রেখে সরকার যেমন অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সংলাপ ও সংস্কার চালিয়ে যাচ্ছে, তেমনি আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক সম্পর্কেও জোর দিচ্ছে। জুনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণা দিয়ে সরকার কার্যত সময়ের সীমারেখা টেনে দিল—যার মধ্যে রাজনৈতিক ঐক্যমত্য গড়ে তুলে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রক্রিয়া এখন সময়ের অপেক্ষা মাত্র।



















