২৮ মের মধ্যে পোশাক শ্রমিকের বেতন দিতে হবে, না হয় জেলে যাবেন’..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ঈদের আগে পোশাক শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধে সময়সীমা ২৮ মে— তা না হলে গার্মেন্টস মালিকদের ঠাঁই হবে জেলে। ইতোমধ্যে পাঁচজন মালিকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি! পড়ুন বিস্তারিত…..

২৮ মে’র মধ্যে শ্রমিকদের বেতন না দিলে জেল — কঠোর বার্তা গার্মেন্টস মালিকদের প্রতি

পোশাক খাত বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের মূল চালিকাশক্তি হলেও এই খাতের শ্রমিকরা অনেক সময় তাদের ন্যায্য বেতন থেকে বঞ্চিত হন। তবে এবার ঈদের আগে এমন পরিস্থিতি যেন আর না ঘটে, সেই লক্ষ্যে সরকার নিয়েছে কঠোর অবস্থান।

বুধবার (২১ মে) সচিবালয়ে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন জানিয়েছেন, আগামী ২৮ মে’র মধ্যে গার্মেন্টস শ্রমিকদের সব বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে হবে। অন্যথায় মালিকদের জেলে যেতে হবে।

বৈঠকটি মূলত ঈদকে সামনে রেখে নৌপথে যাত্রী নিরাপত্তা নিয়ে হলেও, শ্রমিকদের বেতন নিয়ে চলমান উত্তেজনার বিষয়টি ওঠে আসে আলোচনায়। উপদেষ্টা ড. সাখাওয়াত হোসেন স্পষ্টভাবে বলেন, “যারা শ্রমিকদের বেতন দিতে পারবেন না, তাদের গার্মেন্টসের মালিক থাকারই কোনো অধিকার নেই। তারা হয় বেতন দেবেন, না হয় জেলে যাবেন।”


পাঁচ মালিকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা

তিনি আরও জানান, ইতোমধ্যে টিএনজেড গার্মেন্টস ও মাহমুদ গার্মেন্টসসহ পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের মালিকদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এসব মালিক দেশের বাইরে তো দূরের কথা, রাজধানী ঢাকার বাইরেও যেতে পারবেন না।

উল্লেখযোগ্য যে, গত কয়েকদিন ধরে গার্মেন্টস শ্রমিকদের বিভিন্ন সংগঠন প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ‘যমুনা’ এবং রাজধানীর কাকরাইলে অবস্থিত শ্রম ভবন ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল। এসব ঘটনার প্রেক্ষাপটে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা শুরু করে মন্ত্রণালয়।


ঘরবাড়ি বিক্রি করেও পরিশোধের প্রতিশ্রুতি মালিকদের

ড. সাখাওয়াত হোসেন আরও বলেন, “গত মঙ্গলবার রাত ৭টা পর্যন্ত আমরা গার্মেন্টস মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করি। সেখানে গার্মেন্টস মালিকরা বলেছেন, প্রয়োজনে ঘরবাড়ি বিক্রি করেও তারা শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করবেন। তারা আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছেন যে, ২৮ মে’র মধ্যে এই বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ করে দেওয়া হবে।

তিনি এ ব্যাপারে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, শ্রমিকদের প্রাপ্য পরিশোধে মালিকরা আন্তরিক হবেন। যদি কেউ ব্যর্থ হন, তাহলে তাকে আইনের মুখোমুখি হতেই হবে।”


নৌপথে ঈদযাত্রা নিয়েও সিদ্ধান্ত

বৈঠকে কেবল গার্মেন্টস শ্রমিকদের বিষয়ে নয়, আসন্ন ঈদকে কেন্দ্র করে নৌপথে যাত্রী নিরাপত্তা নিয়েও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। উপদেষ্টা জানান—

  • ঈদের আগে ও পরে কোনো বাল্কহেড নদীতে চলাচল করতে পারবে না।

  • প্রতিটি যাত্রীবাহী লঞ্চে চারজন করে সশস্ত্র আনসার মোতায়েন থাকবে।

  • আবহাওয়া অধিদপ্তরকে নির্ভরযোগ্য ও সময়মতো পূর্বাভাস দিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।


গার্মেন্টস খাতের ওপর নজরদারি বাড়ছে

এই সিদ্ধান্তগুলো শুধু ঈদ উপলক্ষে নেওয়া হয়নি—শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করতে সরকার গার্মেন্টস মালিকদের ওপর নজরদারি আরও বাড়ানোর পরিকল্পনায় আছে। উপদেষ্টা বলেন, “গার্মেন্টস ব্যবসা এখন অনেকের কাছে স্ট্যাটাস সিম্বল হয়ে গেছে। ফ্যাশনের জন্য গার্মেন্টস খুলে, শ্রমিকদের ঠকানোর সংস্কৃতি চলতে দেওয়া যাবে না। ভবিষ্যতে এ ধরনের গাফিলতি কঠোরভাবে দমন করা হবে।”

কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি