close
লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!
২৬০০ কোটি টাকার ‘বঙ্গবন্ধু ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট’ ধ্বংসের মুখে: দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার জালে


আওয়ামী লীগ সরকারের সময়কালে গোপালগঞ্জের মধুমতী নদী থেকে খুলনা শহরে পানি সরবরাহের জন্য প্রায় ২৬০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ‘বঙ্গবন্ধু ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট’, বর্তমানে অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির কবলে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। এ প্রকল্পটি পরবর্তীতে নাম বদলে ‘সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট’ করা হলেও, এর পেছনের দুর্নীতির চিত্র এখনও পুরোপুরি তদন্তের বাইরে রয়ে গেছে।
প্রকল্পটি শুরু হয় ২০১১ সালে এবং শেষ হয় ২০১৮ সালে। আনুষ্ঠানিকভাবে ২০১৯ সালে এর কার্যক্রম শুরু হলেও বর্তমানে এর যন্ত্রপাতি নষ্ট এবং তদারকির অভাবে জনগণের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে।
দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা: কী দেখা গেছে সরেজমিনে?
সম্প্রতি সরেজমিনে পরিদর্শনে জানা যায়—
পানির মান পরীক্ষা বন্ধ: প্ল্যান্টের ল্যাবের বড় ফ্রিজ এক বছরের বেশি সময় ধরে নষ্ট। পরীক্ষা ছাড়াই সরাসরি পানি সরবরাহ করা হচ্ছে।
পাম্প ও ফিল্টার নষ্ট: ছয়টি সাবমারসিবল পাম্পের মধ্যে দুটি পাম্প দেড় বছর ধরে অচল। ফ্লো মিটার নষ্ট হয়ে আছে দুই বছর ধরে।
অপরিকল্পিত রক্ষণাবেক্ষণ: অ্যাডমিন বিল্ডিংয়ের বেশিরভাগ এসি কাজ করছে না। মেডিমেন্টেশন ইউনিটের আটটি মোটরের মধ্যে ছয়টি নষ্ট।
আন্ডারগ্রাউন্ড লাইট নেই: আন্ডারগ্রাউন্ডের ৩২ স্টার বিডিটি মেশিন পড়ে থাকলেও লাইটের অভাবে দিনেও কাজ করা অসম্ভব।
সীমানা নিরাপত্তার অভাব: প্ল্যান্টের উত্তর পাশে প্রায় ১০০ ফুট কাঁটাতার নেই। বহিরাগতরা ঘাস কেটে নিয়ে যাচ্ছে বিনা বাধায়।
প্রকল্প এলাকায় নিয়মিত কোনো ওয়াসার কর্মকর্তা দেখা যায় না। আউটসোর্সিং কর্মীদের দিয়েই সম্পূর্ণ কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা শুধু পরিদর্শনের সময়ই কিছু ‘দেখানোর জন্য’ প্রস্তুতি নেন।
খুলনা ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরমান সিদ্দিকী স্বীকার করেন যে, জনবল সংকট প্রকল্পটির একটি বড় সমস্যা। তার ভাষায়, “ঢাকা-চট্টগ্রামের তুলনায় খুলনা ওয়াসার বাজেট খুব কম। তবে যতটুকু সম্ভব মেইনটেন্যান্স করা হচ্ছে।”
সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট কুদরত-ই-খুদা বলেন, “ওয়াসার প্রকল্পটি শুরু থেকেই অপরিকল্পিত এবং প্রশ্নবিদ্ধ। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ছাড়াই কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। মধুমতী নদীর লবণাক্ত পানি সরবরাহ প্রকল্পের উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, প্ল্যান্টের যন্ত্রাংশ কেনার সময় দুর্নীতি করা হয়েছে এবং এখন যদি পরীক্ষা ছাড়া পানি সরবরাহ করা হয়, তা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করবে।
২,৬০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই মেগা প্রকল্পটি বর্তমানে প্রায় অকেজো অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। জনগণের অর্থের সঠিক ব্যবহার না হওয়ায় এটি একটি উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রকল্পটির তদন্ত ও তদারকির অভাবেই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
প্রকল্পটি ধ্বংস হয়ে গেলে খুলনাবাসীকে পরিশোধন ছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ পানি পান করতে হবে—এমন আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এজন্য বিশেষজ্ঞরা দ্রুত তদন্ত করে দায়ীদের চিহ্নিত করার দাবি জানাচ্ছেন।
যদি রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলো এভাবে দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে নষ্ট হতে থাকে, তবে সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্য স্বপ্নই থেকে যাবে।
Ingen kommentarer fundet