দেশজুড়ে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ফের ভয়াবহ হয়ে উঠছে। প্রতিদিনের মতো বুধবার (১৯ জুন) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রকাশিত সর্বশেষ বুলেটিনে ভয়ংকর এক চিত্র ফুটে উঠেছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় এইডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। এর ফলে চলতি বছরে ডেঙ্গুতে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৪ জনে।
অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যমতে, বুধবার সকাল পর্যন্ত একদিনে নতুন করে আরও ৪১৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত মোট ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৯৮ জনে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, সর্বশেষ মৃত্যুর ঘটনাটি ঘটেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার একটি হাসপাতালে। মৃত ব্যক্তি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ডেঙ্গুর বিস্তার যেভাবে রাজধানী ঢাকা ছাড়িয়ে দেশের অন্যান্য বিভাগে ছড়িয়ে পড়েছে, তাতে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা ব্যাপক উদ্বেগ প্রকাশ করছেন।
নতুন রোগীদের অঞ্চলভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বরিশাল বিভাগে সর্বোচ্চ ১৬৫ জন রোগী নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, যা এই মুহূর্তে দেশের মধ্যে সর্বাধিক। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় ভর্তি হয়েছে ৯৪ জন। ঢাকার বাইরের বিভিন্ন বিভাগেও পরিস্থিতি ভয়াবহ। ঢাকা বিভাগের অন্যান্য এলাকায় ভর্তি হয়েছেন ৫৫ জন, ময়মনসিংহে ১০ জন, চট্টগ্রামে ২৩ জন, খুলনায় ১৮ জন এবং রাজশাহী বিভাগে ভর্তি হয়েছেন ৫১ জন রোগী।
এদিকে, বর্তমানে সারাদেশে চিকিৎসাধীন ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৩১৩ জন, যার মধ্যে ঢাকায় ৩৪৬ জন এবং ঢাকার বাইরে ভর্তি আছেন ৯৬৭ জন। এই চিত্র থেকে বোঝা যায়, রাজধানীর বাইরের অঞ্চলে ডেঙ্গু সংক্রমণের বিস্তার দ্রুততর হচ্ছে।
২০২৪ সালের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন মোট ১ লাখ ১ হাজার ২১১ জন, এবং মৃত্যু হয়েছিল ৫৭৫ জনের। এটা বাংলাদেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যু এবং তৃতীয় সর্বোচ্চ হাসপাতালে ভর্তি রোগীর রেকর্ড।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে নাগরিকদেরকে পুনরায় সতর্ক করা হয়েছে। বাসাবাড়ি ও আশপাশের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখা, জমে থাকা পানিতে কোনোভাবেই মশা যেন ডিম না দিতে পারে সেজন্য ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে। বিশেষ করে বর্ষাকালে এডিস মশার বিস্তার সবচেয়ে বেশি হয়, তাই এখনই প্রতিরোধ না গড়লে আগামী দিনগুলো আরও ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এই হার অব্যাহত থাকলে আগামী কয়েক সপ্তাহে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়তে পারে।
তারা বলছেন, এইডিস মশা নিধনে শুধু সরকারি উদ্যোগ নয়, ব্যক্তিগত সচেতনতাও জরুরি।