২৩ বছর কারাভোগের পর মাজেত পেলেন গরু

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
২৩ বছর জেল খেটে ঘরে ফিরলেন মাজেত। না আছে স্ত্রী, না আছে মা। নিঃসঙ্গ এই মানুষটির পাশে দাঁড়িয়েছে প্রশাসন—দিয়েছে একটি গরু। এই গরুই এখন তার জীবনের একমাত্র সম্বল।..

২৩ বছর পর কারাগার থেকে ছাড়া পেলেন মাজেত। কিন্তু কারামুক্ত জীবনের শুরুতে যে চিত্র তাকে ঘিরে ছিল, তা যেন আরো বেশি একাকী ও অন্ধকারময়। কেউ নেই পাশে—না স্ত্রী, না মা। শুধু নিঃসঙ্গতা, অভাব আর অনিশ্চয়তা।

পঞ্চগড় জেলার সদর উপজেলার হাফিজাবাদ ইউনিয়নের মাধইপাড়া গ্রামের মানুষ আব্দুল মাজেত। ২০০২ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে এক মামলায় তাকে ৩০ বছরের সাজা দেওয়া হয়। দুই বছর যেতে না যেতেই তার স্ত্রী সালেহা বেগম সংসার ছেড়ে চলে যান। এরপর জীবনের প্রতিটি দিন কেটেছে অপেক্ষা আর বিচ্ছিন্নতায়।

কারাগারের ভেতরেও তার জীবন থেমে ছিল না। ভালো আচরণ, নিষ্ঠা, ও কারা কর্তৃপক্ষের কাছে প্রশংসিত কাজের কারণে ৩০ বছরের সাজার পরিবর্তে ২৩ বছরেই মুক্তি মেলে তার। ২০২৫ সালের ২৬ মার্চ, স্বাধীনতা দিবসের ঠিক দিনটিতেই মুক্তি পান তিনি। কিন্তু স্বাধীনতার এই দিন তার জন্য ছিল একেবারে ভিন্ন অর্থের।

জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার সময় যে মানুষটিকে দেখার সবচেয়ে বেশি আশা ছিল, সেই মা ফুলবানু বেগমও আর বেঁচে নেই। মুক্তির ঠিক ১৬ দিন আগে মারা গেছেন তিনি। ফলে মুক্তির আনন্দটা এক নিঃসীম শূন্যতায় মিলিয়ে যায়। বাড়ি ফিরে খুঁজে পান না কোনো জমি, কোনো সম্বল বা কোনো আপনজন।

নিরাশ জীবন থেকে ফের ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই শুরু করেন মাজেত।
মধ্যবয়সী এই ব্যক্তি এখন দিনমজুর হিসেবে কাজ করছিলেন স্থানীয় একটি চা-বাগানে। কিন্তু অল্প উপার্জনে ভাত জোটে কোনোমতে, ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা তো দূরের কথা।

তবে সমাজের এই নিঃসঙ্গ নাগরিকের অসহায়ত্ব চোখ এড়ায়নি প্রশাসনের। পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক সাবেত আলী মানবিক উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তিনি সিদ্ধান্ত নেন, মাজেতকে যেন নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ দেওয়া হয়। তার জন্য কিনে দেওয়া হয় একটি গরু—যা তার ভবিষ্যতের আয়ের পথ খুলে দিতে পারে।

গত বৃহস্পতিবার বিকেলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে আনুষ্ঠানিকভাবে গরুটি মাজেতের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এ যেন শুধু একটি গরু নয়—একটি মানুষকে দ্বিতীয়বার বাঁচিয়ে তোলার প্রতীক।

আমি ২৩ বছর জেল খেটেছি মিথ্যা মামলায়। এ বছর মুক্তি পেয়েছি। মা ছিলেন, তিনিও চলে গেছেন। এখন আর কেউ নেই আমার। আমি শুধু চা-বাগানে কাজ করছিলাম। জেলা প্রশাসক আমাকে একটি গরু কিনে দিয়েছেন, আমার খুব উপকার হলো। আমি এখন চেষ্টা করবো এই গরু দিয়ে নিজেকে সামলে নেওয়ার।

একজন মানুষ দীর্ঘদিন কারাভোগ করেছে, ভালো আচরণ করেছে। সম্পদ বলতে কিছুই নেই। তাই আমরা তাকে একটি গরু দিয়েছি, যেন সে ঘুরে দাঁড়াতে পারে। এই গরুই হতে পারে তার আত্মনির্ভরতার পথচলার সূচনা।”

এই ঘটনা শুধুই একজন মানুষের গল্প নয়, বরং একটি সমাজের, একটি ব্যবস্থার দায়িত্ববোধের প্রতিফলন।
জীবনের ভুল মোড় থেকে ফিরে আসা মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর এমন উদ্যোগ হোক প্রতিটি জেলায়, প্রতিটি অঞ্চলে।

لم يتم العثور على تعليقات