বন্যার আশঙ্কা: দেশের ছয় জেলা সামনে বিপদের মুখে
আগামী ২-৩ দিনের মধ্যে দেশের ছয়টি জেলায় বন্যা দেখা দিতে পারে বলে সর্তকতা জারি করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। বৃহস্পতিবার (২৯ মে) এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই তথ্য জানায় সংস্থাটির বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। তারা জানিয়েছে, চলমান ভারী বর্ষণের কারণে নদ-নদীগুলোর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে এবং এর প্রভাবে বিভিন্ন জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটতে পারে।
যে নদীগুলোর পানি বিপজ্জনকভাবে বাড়ছে
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আগামী দুই দিনে চট্টগ্রাম বিভাগের গোমতী, মুহুরী এবং ফেনী নদীর পানির স্তর উল্লেখযোগ্য হারে বাড়তে পারে। এর মধ্যে মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফলে ফেনী জেলার মুহুরী নদীর পার্শ্ববর্তী নিম্নাঞ্চলগুলোতে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হওয়ার ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি।
একইভাবে, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের সারিগোয়াইন, যাদুকাটা, মনু, ধলাই, খোয়াই এবং সোমেশ্বরী নদীগুলোর পানির স্তর তিনদিন পর্যন্ত ক্রমাগত বাড়তে পারে এবং এগুলোর পানিও বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। এতে করে সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলায় নদীগুলোর তীরবর্তী নিচু এলাকাগুলো প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
উত্তরাঞ্চলেও বাড়ছে নদীর পানি
উত্তরাঞ্চলের রংপুর বিভাগের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীগুলোর পানির স্তরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিস্তা নদীর পানি সতর্কসীমার কাছাকাছি প্রবাহিত হতে পারে বলে জানানো হয়েছে। এই অঞ্চলেও নিম্নাঞ্চলে বন্যা দেখা দিতে পারে, বিশেষত অতিবৃষ্টির কারণে যদি দ্রুত পানি নামতে না পারে।
উপকূলীয় অঞ্চলেও সতর্কতা
বরিশাল, খুলনা এবং চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় নদ-নদীগুলোতে আগামী দুইদিন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উচ্চতায় জোয়ারের পানি উঠতে পারে। ফলে উপকূলবর্তী এলাকাগুলোতেও অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধির কারণে লোকালয় প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
সুরমা-কুশিয়ারা নদী কিছুটা স্বস্তিদায়ক, তবে ঝুঁকি রয়ে গেছে
বন্যা পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি বর্তমানে কিছুটা হ্রাস পেলেও তা আবার তিনদিনের মধ্যে বাড়তে পারে। তবে বর্তমানে এগুলোর পানি বিপৎসীমার নিচে রয়েছে।
সরকারি বক্তব্য: সতর্ক থাকুন, তবে আতঙ্ক নয়
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান গণমাধ্যমকে জানান, “আমরা ছয় জেলায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করছি। তবে পরিস্থিতি নির্ভর করছে বৃষ্টিপাতের ওপর। বৃষ্টি কমে গেলে দ্রুত পানি নেমে যেতে পারে।”
তবে তিনি সাধারণ মানুষকে আগাম সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। বিশেষ করে যেসব এলাকা নদীর তীরবর্তী, সেসব এলাকায় দ্রুত পানি প্রবেশ করতে পারে বলে তিনি জানিয়েছেন।
যেসব জেলায় বন্যার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি:
-
সিলেট
-
সুনামগঞ্জ
-
মৌলভীবাজার
-
হবিগঞ্জ
-
নেত্রকোনা
-
ফেনী
নাগরিকদের করণীয়:
স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশনা মেনে চলুন
নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিন (বিশেষ করে নদী তীরবর্তী বাসিন্দারা)
শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির মজুত রাখুন
শিশু ও বয়স্কদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করুন
ঘরবাড়ি থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রাখুন, যদি পানি উঠতে শুরু করে
দেশের একাধিক অঞ্চল এখন বন্যার সম্ভাব্য হুমকির মুখে। সময়মতো পদক্ষেপ নিলে ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা সম্ভব। তাই সবাইকে এখনই সচেতন ও প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানানো হচ্ছে।



















