১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর বিজয়ের ১৩দিন আগেই সর্বপ্রথম বরগুনা পেয়েছিল মুক্তির স্বাদ..

Atiqur Rahman avatar   
Atiqur Rahman
আজকের এই দিনে ৫৪ বছর আগে—চূড়ান্ত বিজয়ের ১৩ দিন আগেই ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর সর্বপ্রথম বরগুনা পেয়েছিল মুক্তির স্বাদ,..

এভাবেই বরগুনা হয়ে ওঠে শত্রুমুক্ত — ৩ ডিসেম্বর ১৯৭১

 

বিশেষ প্রতিবেদন | 

 

বরগুনা, ৩ ডিসেম্বর ২০২৫ :

আজ থেকে ঠিক ৫৪ বছর আগে—১৯৭১ সালের এই দিনে শত্রুমুক্ত হয়েছিল বরগুনা। দেশের চূড়ান্ত বিজয়ের ১৩ দিন আগেই মুক্তিযোদ্ধাদের পরিকল্পিত অভিযান, সাহস ও আত্মত্যাগে স্বাধীনতার আগাম স্বাদ পেয়েছিল জনপদটি।

দিনটি শুধু একটি তারিখ নয়; বরং বরগুনাবাসীর অস্তিত্ব, সংগ্রাম এবং গৌরবের দিন।

২৪ নভেম্বর–৩ ডিসেম্বর: মুক্তির পথে বরগুনা

মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক আনোয়ার হোসেন মনোয়ার জানান, বরগুনা সদর শত্রুমুক্ত হওয়ার আগে ১৯৭১ সালের ২৪ নভেম্বর তারিখে মুক্তিযোদ্ধারা প্রথম হানাদারবহিনীকে পরাস্ত করেন বর্তমান বামনা উপজেলায়। সেসময় বামনা আলাদা উপজেলা না থাকলেও এটি ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের প্রথম সফল অভিযান এলাকাগুলোর একটি।

এরপর ৩ ডিসেম্বর বরগুনা সদর সম্পূর্ণ শত্রুমুক্ত হয়।

পরে ১৪ ডিসেম্বর আমতলী ও তালতলী এলাকাও পাকবাহিনী মুক্ত ঘোষণা করা হয়।

এই ধারাবাহিক লড়াইই বরগুনাকে স্বাধীনতার পথে দ্রুত এগিয়ে দেয়।

বুকাবুনিয়া উপ-সেক্টরের অভিযান: ভোররাত বদলে দিয়েছিল বরগুনাকে

বরগুনা ছিল মুক্তিযুদ্ধের ৯ নম্বর সেক্টরের বুকাবুনিয়া উপ-সেক্টরের অধীন। ভারতের প্রশিক্ষণ শেষে মুক্তিযোদ্ধারা অস্ত্র নিয়ে গোপনে বরগুনায় ফেরেন।

এরপর পরিকল্পিতভাবে চূড়ান্ত হামলার প্রস্তুতি শুরু হয়।

অভিযানের নেতৃত্ব-

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সত্তার খান—যিনি পুরো অপারেশনের নেতৃত্ব দেন।

 

তার নেতৃত্বে বরগুনা–ঝালকাঠির মোট ২১ জন মুক্তিযোদ্ধা

৩ ডিসেম্বর ভোররাতে নৌকাযোগে খাকদোন নদীর পোটকাখালী পাড়ে অবস্থান নেন।

 

ফজরের আজান ছিল আক্রমণের সংকেত

আজান শোনা মাত্রই মুক্তিযোদ্ধারা বরগুনার তিনদিক থেকে একযোগে গুলি চালান।

চৌকস পরিকল্পনা ও আকস্মিক হামলায় রাজাকার–পুলিশ বাহিনীর মনোবল ভেঙে যায়।

বীরদের স্মৃতিচারণ: ‘ভোররাতের গুলির শব্দেই বদলে যায় বরগুনা’

 

বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মোতালিব গাজী বলেন—

“ডিসেম্বর বাঙালির গর্বের মাস। ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হলেও বরগুনা স্বাধীন হয়েছিল আরও আগে—৩ ডিসেম্বর।

সেদিন ভোররাতে আমরা তিনদিক থেকে গুলি চালাই। রাজাকার-পুলিশের মনোবল ভেঙে যায়; তারা পালিয়ে যায় বা আত্মসমর্পণ করে।

তরুণ সমাজের কাছে এই দিনের ইতিহাস তুলে ধরা আমাদের দায়িত্ব।”

 

বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন মনোয়ার জানান—

“নবম সেক্টরের বুকাবুনিয়া উপ-সেক্টরের পরিকল্পনা ছাড়া বরগুনা মুক্ত হতো না।

আবদুস সত্তার খানের নেতৃত্বে আমরা শহরে প্রবেশ করি।

আত্মসমর্পণের পর পুরো জেলা শত্রুমুক্ত হয়।”

আত্মসমর্পণ ও বরগুনা মুক্ত ঘোষণা

প্রথম দফা গোলাগুলির পর মুক্তিযোদ্ধারা বরগুনা জেলখানার দিকে অগ্রসর হন।

সেখানে অবস্থানরত পুলিশ ও রাজাকাররা আত্মসমর্পণ করে।

পরে তাদের নিয়ে যাওয়া হয় তৎকালীন এসডিও অফিসে।

এসডিও আনোয়ার হোসেনের আত্মসমর্পণের সাথে সাথে বরগুনা পুরোপুরি শত্রুমুক্ত ঘোষণা করা হয়।

অভিযানে জব্দ করা হয় অস্ত্র, গোলাবারুদ ও সামরিক সরঞ্জাম। যা পরে পাঠানো হয় বুকাবুনিয়া সাব-সেক্টর হেডকোয়ার্টারে।

মুক্তির আনন্দে জনপদ: মানুষের কান্না, উল্লাস, উত্তেজনা

বরগুনার বয়োজ্যেষ্ঠরা বলেন—

মানুষ ঘর থেকে বের হয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেয়

কেউ পানি এগিয়ে দেয়, কেউ কান্নায় ভেঙে পড়ে

পাকবাহিনীর পতন দেখে মানুষের মধ্যে আসে মুক্তির উল্লাস

পুরুষরা যেমন অস্ত্র হাতে যুদ্ধে গিয়েছিলেন, নারীরাও রান্না, চিকিৎসা, তথ্য সংগ্রহে দায়িত্ব পালন করেন

 

এদিন বরগুনা বুঝেছিল—স্বাধীনতা খুব কাছে।

 

সম্পাদকীয় বার্তা: মুক্তির ইতিহাস যেন হারিয়ে না যায়

 

বরগুনার মুক্তিতে অবদান রাখা ২১ জন বীরের অদম্য সাহস, ত্যাগ ও দায়বদ্ধতা ইতিহাসের গর্ব।

 

এই মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি অসংখ্য বেসামরিক মানুষের সহায়তা ও ঝুঁকি নেওয়ার ইতিহাসও সমান গুরুত্বপূর্ণ।

স্বাধীনতার এই ইতিহাস যেন প্রজন্মের পর প্রজন্মে হারিয়ে না যায়—এ দায়িত্ব সবার।

 

তরুণদের প্রতি আহ্বান

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে হবে

স্থানীয় বীরদের গল্প সংগ্রহ করতে হবে

সামাজিক মাধ্যমে সত্য ইতিহাস তুলে ধরতে হবে

বিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমের বাইরে স্থানীয় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে হবে

 

 

কারণ স্বাধীনতা কোনো সাধারণ অর্জন নয়—

এখানে আছে রক্ত, বেদনা, সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের দীর্ঘ গল্প।

সংবাদ প্রকাশ করতে অথবা বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন-

+8801889115161 (Whatsapp)

Nema komentara


News Card Generator