close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

১৬ বছর পর মুক্তি পেলেন ফজলুর রহমান, দুঃখ-কষ্টের মাঝে ফিরে পেলেন পরিবার

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
২০০৯ সালের পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় দীর্ঘ ১৬ বছর কারাবাসের পর অবশেষে মুক্তি পেয়েছেন তৎকালীন বিডিআরের ল্যান্স কর্পোরাল
২০০৯ সালের পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় দীর্ঘ ১৬ বছর কারাবাসের পর অবশেষে মুক্তি পেয়েছেন তৎকালীন বিডিআরের ল্যান্স কর্পোরাল ফজলুর রহমান। ২৩ জানুয়ারি কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে ২৪ জানুয়ারি নিজ বাড়িতে ফিরে আসেন তিনি। পরিবারের সদস্যদের কাছে ফিরে আসার পর তার চোখে অশ্রু, হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। তার মুক্তির খবর শোনার পর গ্রামবাসী, আত্মীয়স্বজন এবং বন্ধু-বান্ধবেরা তাকে দেখতে ভিড় জমায়। তবে তার জন্য এই মুক্তি সহজ ছিল না—দীর্ঘ ১৬ বছর কারাবাসের মাঝে তিনি হারিয়েছেন তার মা-বাবা, বোনসহ নয়জন নিকট আত্মীয়। তার স্বজনদের শেষকৃত্যে যোগ দেওয়ার সুযোগও তিনি পাননি। পরিবারের সাথে বিচ্ছিন্ন ১৬ বছর ফজলুর রহমানের দীর্ঘ কারাবাসের সময় তাঁর পরিবারে অনেক পরিবর্তন এসেছে। ১৬ বছর কারাগারে থাকার সময় তার মা-বাবা, বোনসহ নয়জন নিকট আত্মীয় মৃত্যুবরণ করেন। কারাগারে থাকাকালীন সময়ে তিনি একবারও তাদের জানাজায় অংশগ্রহণ করতে পারেননি। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করারও সুযোগ পাননি। তার মুক্তির পর বাড়িতে ফিরে এসে তিনি জানতে পারেন, তার বাবা-মা এবং বোন সহ অনেক প্রিয়জন আর বেঁচে নেই। ফজলুর রহমানের জীবন যেন এক কঠিন সংগ্রামের কাহিনি। তার শৈশব, কৈশোর ও যৌবন কাটিয়েছিল দেশের সীমান্ত রক্ষায়, বিডিআর (বাংলাদেশ রাইফেলস) এর একজন সিপাহী হিসেবে। কঠোর পরিশ্রম ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি বিডিআর হেডকোয়াটারে যোগ দেন। তার কর্মজীবনের শীর্ষে পৌঁছানোর পর ২০০৯ সালে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে তাকে জেলে যেতে হয়। সেই সময়ে তার বিরুদ্ধে তেমন কোন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছিল না, তবে ঘটনাটির সঙ্গে তার জড়িত থাকার সন্দেহের কারণে তাকে দীর্ঘ ১৬ বছর কারাগারে থাকতে হয়েছিল। পরিবারের প্রতিক্রিয়া ফজলুর রহমানের স্ত্রী রাশেদা, যিনি দীর্ঘ ১৬ বছর সামাজিক অশান্তি ও দুঃখ-কষ্ট সহ্য করে স্বামীর জন্য অপেক্ষা করেছেন, তার বর্তমান অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। রাশেদা জানান, "আমি বহু বছর ধরে স্বামীর জন্য অপেক্ষা করেছি। আমাদের সন্তান না থাকায়, আমার ননদ আমার মেয়েকে বড় করেছে। ছোটবেলা থেকেই সেই মেয়ে তার বাবাকে খুঁজেছে, আর আমি কোনো উত্তর দিতে পারিনি। এখন স্বামী ফিরে এসেছে, কিন্তু মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছে।" রাশেদা আরও বলেন, "এখন আমি কি করব, কোথায় যাব? স্বামীর চাকরি নেই, আমরা কিভাবে সংসার চালাব?" ফজলুরের বড় ভাই ছামাদ আলী বলেন, "আমাদের পরিবার অভাব-অনটনের মধ্যে পড়েছিল, তাই ফজলুর রহমানকে ছোটবেলায় বিডিআরে পাঠানো হয়। সে অনেক ভালো ছেলে ছিল, আমাদের সবাইকে অনুপ্রাণিত করত। তার প্রতি আমাদের খুব গর্ব ছিল। কিন্তু ১৬ বছর কারাগারে থাকার পর, আমরা তাকে দেখতে পর্যন্ত যেতে পারিনি।" তিনি আরও বলেন, "আমাদের বাবা-মা ও বোনসহ নয়জন আত্মীয় মারা গেছেন। তারা শেষবারের মতো ফজলুরকে দেখতে পাননি।" ভবিষ্যতের শঙ্কা ফজলুর রহমানের ছোট ভাই অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য ইউসুফ আলী বলেন, "আমরা ফজলুরের অনুপ্রাণিত হয়ে সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলাম। কিন্তু এখন আমাদের ভাইকে বিনা দোষে ১৬ বছর কারাবাস করতে হয়েছে। আমরা মুক্তির দিন খুশি, কিন্তু তার চাকরি নেই, এবং তার স্বাস্থ্যও ভালো নয়। আমাদের উদ্বেগ, সে কীভাবে তার পরিবার চালাবে?" ইউসুফ আলী সরকারের কাছে দাবি জানান, ফজলুরের চাকরি ফিরিয়ে দেওয়া হোক। স্থানীয় বাসিন্দারা, যেমন আনিচুর রহমান এবং তাসলিমা খাতুন, ফজলুরের স্বাস্থ্য এবং পুনর্বাসনের জন্য সরকারের সহায়তা কামনা করেছেন। তারা বলেন, "ফজলুর ভাই ১৬ বছর ধরে দুঃখ-কষ্টের মধ্যে ছিলেন। তার চিকিৎসা প্রয়োজন এবং পুনর্বাসনের জন্য সরকারকে এগিয়ে আসা উচিত।" ফজলুর রহমানের কথা ফজলুর রহমান তার মুক্তি পাওয়ার পর বলেন, "পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। ১৬ বছর কারাবাসের সময় আমি আমার প্রিয়জনদের হারিয়েছি, অথচ আমি জানতেও পারিনি তারা আর এই পৃথিবীতে নেই। বাড়িতে ফিরে এসে বাবা-মাকে দেখতে পাইনি, পরে শুনলাম তারা মারা গেছেন। এর চেয়ে বড় কষ্ট কী হতে পারে?" তিনি আরও বলেন, "আমার চাকরি ছিল আমার একমাত্র সম্বল, কিন্তু এখন সেটা আর নেই। আমি সরকারের কাছে আবেদন করছি, তারা যেন আমাদের পুনর্বাসন করে। আমি আর কিছু চাওয়ার নেই।" সরকারকে আহ্বান ফজলুর রহমান এবং তার পরিবার সরকারের কাছে বিশেষ সহায়তা এবং পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছেন। তার দীর্ঘ ১৬ বছরের কারাবাসের পর, এখন সময় এসেছে তার সামাজিক ও মানসিক পুনর্গঠন করার। পরিবারের সদস্যদের সাথে তার সম্পর্ক পুনঃস্থাপন এবং তার জীবনের পরবর্তী পর্যায়ে তাকে সহায়তা করা সরকারের নৈতিক দায়িত্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে।
Nenhum comentário encontrado