দীর্ঘ ১৬ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে বৃহস্পতিবার কারামুক্ত হলেন বিস্ফোরক মামলায় জামিন পাওয়া ১৬৮ জন বিডিআর সদস্য। এ দিন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারসহ দেশের বিভিন্ন কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয় তাদের।
কারাগার থেকে মুক্তি
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান ৪১ জন, কাশিমপুর-১ থেকে ২৬ জন, কাশিমপুর-২ থেকে ৮৯ জন এবং কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগার থেকে ১২ জন। এ বিষয়ে অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল গণমাধ্যমকে জানান, “মুক্তিপ্রাপ্ত ১৬৮ জনের তালিকা হাতে পাওয়ার পর তাদের মুক্তি দেওয়া হয়েছে।”
এর আগে গত ২১ জানুয়ারি ঢাকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক মো. ইব্রাহিম মিয়ার আদালত ১৭৮ জন আসামির জামিন মঞ্জুর করেন। তাদের মধ্যে ১৬৮ জনের মুক্তির কার্যক্রম শেষ করেছে কারা কর্তৃপক্ষ।
বিডিআর বিদ্রোহ: ইতিহাসের রক্তাক্ত অধ্যায়
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিডিআরের সদর দপ্তরে ঘটে ভয়াবহ বিদ্রোহ। ওই ঘটনায় ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ মোট ৭৪ জন নির্মমভাবে নিহত হন। বিদ্রোহের পর হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি পৃথক মামলা করা হয়।
হত্যা মামলার রায়
২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর হত্যা মামলার বিচারকাজ শেষ হয়। এই মামলায়:
১৫২ জনের ফাঁসি
১৬০ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
২৫৬ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড
২৭৮ জন খালাস পান।
২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর উচ্চ আদালত ১৩৯ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে। এছাড়া ১৮৫ জনের যাবজ্জীবন এবং ২২৮ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়। তবে, আপিল ও লিভ টু আপিল এখনো বিচারাধীন।
বিস্ফোরক মামলার জট
বিস্ফোরক আইনের মামলায় ৮৩৪ জন আসামির বিচারকাজ শুরু হয় ২০১০ সালে। কিন্তু মাঝপথে এই মামলার কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। হত্যা মামলার কার্যক্রমে মনোযোগ দেওয়ায় বিস্ফোরক মামলার বিচার ঝুলে থাকে।
নতুন তদন্ত দাবি ও কমিশন গঠন
বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় শহিদ পরিবারের সদস্যরা নতুন করে তদন্তের দাবি জানান। তাদের অনুরোধে গত ২৪ ডিসেম্বর সরকার আ ল ম ফজলুর রহমানকে প্রধান করে পুনঃতদন্ত কমিশন গঠন করে। এই কমিশন ৯০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে।
মুক্তির প্রভাব
১৬ বছর পর মুক্তিপ্রাপ্ত বিডিআর সদস্যরা এখন স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে, বিদ্রোহের রক্তাক্ত স্মৃতি এবং বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রিতা এখনো তাদের জীবনকে ঘিরে রেখেছে। রাষ্ট্রপক্ষ এবং আসামিপক্ষের আপিলের চূড়ান্ত নিষ্পত্তি এখনও অপেক্ষমাণ।
এই ঐতিহাসিক ঘটনার পুনঃতদন্ত এবং বিচার প্রক্রিয়া কী মোড় নেয়, তা দেখার জন্য সবাই অধীর আগ্রহে
কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি