১৩ বছর পরও অমীমাংসিত সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড: রহস্য উন্মোচনে নতুন আশাবাদ পিবিআইয়ের


২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতটি ছিল বাংলাদেশের সাংবাদিকতা ও সংবাদমাধ্যমের ইতিহাসের এক শোকাবহ অধ্যায়। নিহত হন সাগর সরওয়ার এবং তার স্ত্রী মেহেরুন রুনি, যারা ছিলেন দেশের দুই শীর্ষ সংবাদকর্মী। সাগর মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক এবং রুনি ছিলেন এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক। সেই রাতের পর থেকে সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের তদন্ত চললেও, এখনো পর্যন্ত তাদের হত্যার রহস্য উন্মোচন হয়নি। তবে, ১৩ বছর পর তদন্তে কিছুটা গতি এসেছে এবং পিবিআই (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) এখন এই মর্মান্তিক ঘটনার তদন্তের দায়িত্ব নিয়েছে।
ঘটনার বিস্তারিত
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারে তাদের ভাড়া বাসায় নির্মমভাবে খুন হন সাগর ও রুনি। এই হত্যাকাণ্ডের পর সারা দেশে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয় এবং সাংবাদিক সমাজসহ সাধারণ মানুষ এর বিচার দাবি করতে থাকে। কিন্তু দীর্ঘ ১৩ বছরেও হত্যার রহস্য উদঘাটন হয়নি। বিশেষত, তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ ১১৫ বার পিছিয়েছে এবং নানা তদন্ত সংস্থা—পুলিশ, ডিবি, র্যাব—অবশেষে পিবিআইয়ের কাছে মামলাটি হস্তান্তর করা হয়।
পিবিআইয়ের তদন্ত: নতুন আশার সঞ্চার
গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত নতুন করে শুরু হয়। হাইকোর্টের নির্দেশনায় ২৩ অক্টোবর পিবিআই প্রধানের নেতৃত্বে একটি বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করা হয় এবং ৬ মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
পিবিআই ইতোমধ্যে ৬২ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে, এর মধ্যে বিশিষ্ট সাংবাদিক, একটি টেলিভিশন চ্যানেলের মালিক এবং সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা রয়েছে। মামলায় কারাগারে থাকা পাঁচজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। তদন্ত কর্মকর্তা মো. আজিজুল হক জানিয়েছেন, পিবিআই দ্রুত এই মামলার তদন্ত শেষ করার চেষ্টা করছে এবং তিনি আশা করছেন, রহস্য অতি দ্রুত উদঘাটিত হবে।
অগ্রগতি: সন্দেহভাজনদের ডিএনএ পরীক্ষা
পিবিআই তদন্তের সময় বিভিন্ন সূত্র ও পরীক্ষাগারের রিপোর্টও পেয়েছে। একপর্যায়ে জানা যায়, হত্যার সময় রুনির শরীরে কিছু ডিএনএ পাওয়া গেছে, যা হত্যাকারীদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। পিবিআই সাগর ও রুনি হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহভাজনদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে। তবে, সাগর-রুনির সঙ্গে কারও পারিবারিক বা পেশাগত শত্রুতা ছিল না, এমনকি তারা কখনো হুমকিও পাননি।
পরিবারের অবস্থান
সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করে সাংবাদিক সমাজ একাধিকবার আন্দোলন করেছে। এদিকে, নিহত রুনির ভাই নওশের আলম রোমান জানিয়েছেন, তারা এখনো পুরোপুরি আশাবাদী হতে পারছেন না, তবে পিবিআইয়ের নতুন তদন্তের ফলে কিছুটা আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, "আমরা চাই, যেন সুষ্ঠু তদন্ত হয় এবং প্রকৃত খুনি চিহ্নিত করা হয়।"
নতুন প্রজন্মের মিহির
সাগর-রুনির একমাত্র সন্তান, মিহির সরওয়ার মেঘ, বর্তমানে এ লেভেল পাস করেছে। ১৩ বছর আগে এই মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের সময় মিহির ছিল মাত্র সাড়ে ৪ বছর বয়সী। তার বেড়ে ওঠা একমাত্র মা-বাবার হত্যার রহস্যের পেছনে দুঃখজনক শূন্যতার সঙ্গেই।
Ingen kommentarer fundet