close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

১১ মাসে সরকারের ব্যাংকঋণ ১ লাখ ৮ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
সরকার চলতি অর্থবছরের ১১ মাসেই তফসিলি ব্যাংক থেকে নিয়েছে ১ লাখ ৮ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা ঋণ, যা আগের বছরের তুলনায় ৫৭% বেশি। রাজস্ব ঘাটতি, বেসরকারি খাতে স্থবিরতা ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা মিলিয়ে তৈরি হয়েছে..

ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণের নতুন রেকর্ড: ১১ মাসেই ১ লাখ ৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ গ্রহণ, অর্থনীতিতে বাড়ছে অনিশ্চয়তা

চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে বাংলাদেশ সরকার তফসিলি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে রেকর্ড পরিমাণ ১ লাখ ৮ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ মাসিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই ঋণের পরিমাণ আগের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের তুলনায় ৫৭ শতাংশ বেশি। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি সরকারের রাজস্ব ঘাটতি এবং বেসরকারি খাতের ধীরগতির প্রমাণ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের মে মাসের ১২ তারিখ পর্যন্ত সরকারের তফসিলি ব্যাংক থেকে মোট বকেয়া ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে এই পরিমাণ ছিল মাত্র ৬৮ হাজার ৭০৬ কোটি টাকা। এই বিশাল পার্থক্য অর্থনীতির একটি অস্বাভাবিক প্রবণতা নির্দেশ করে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থতা, বেসরকারি খাতে ঋণের চাহিদা কমে যাওয়া এবং বিনিয়োগে স্থবিরতা এই ঋণ প্রবৃদ্ধির মূল কারণ। ব্যবসায়ীদের মধ্যে ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক দিকনির্দেশনা নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকার কারণে বেসরকারি বিনিয়োগ ও উৎপাদন খাতে ঋণের চাহিদা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। এর ফলেই ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত তারল্য সরকার টেনে নিচ্ছে।

তবে এ ঋণ পুরোপুরি নিট ঋণ নয়। কারণ সরকার এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নেওয়া ৪৯ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকার ঋণ পরিশোধ করেছে। সে হিসাবে চলতি অর্থবছরে সরকারের নিট ঋণ দাঁড়িয়েছে ৫৬ হাজার ১১৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ আগের বকেয়া ঋণ থেকে কিছুটা পরিশোধ করে নতুন করে আবার বেশি পরিমাণ ঋণ নেওয়া হয়েছে।

সরকারি ঋণ নেওয়ার নীতিতে পরিবর্তন: লক্ষ্য ছিল ১ লাখ ৩৭ হাজার কোটি, বাস্তবে নেওয়া আরও বেশি

২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংক খাত থেকে সরকারের ঋণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১ লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকা। পরে অন্তর্বর্তী সরকার এই লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ৯৯ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরও পরামর্শ দেন, ব্যাংক খাতের দুর্বল অবস্থার কারণে এই ঋণ সীমিত রাখা উচিত – ৯০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে।

কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, সরকারের ঋণ গ্রহণ সেই সীমার অনেক উপরে চলে গেছে। এর পেছনে দুটি বড় কারণ চিহ্নিত করা হচ্ছে: রাজস্ব ঘাটতি এবং সরকারি ব্যয় কাঠামোতে সুশাসনের অভাব। সরকারের পরিচালন ও উন্নয়ন ব্যয় সামলাতে গিয়ে তাদেরকে বাধ্য হয়ে ব্যাংকিং খাতের দিকে ঝুঁকতে হয়েছে।

ঋণের বোঝা কীভাবে প্রভাব ফেলছে অর্থনীতিতে?

এই ঋণ প্রবণতা শুধু সরকারের উপরই নয়, পুরো দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার উপর চাপ সৃষ্টি করছে। একদিকে, ব্যাংক থেকে সরকারের বিশাল ঋণ গ্রহণ বেসরকারি খাতে ঋণের প্রাপ্যতা সীমিত করছে, অন্যদিকে দীর্ঘমেয়াদে এর ফলে সুদের হার বাড়ার ঝুঁকিও দেখা দিচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, যদি এই ঋণ প্রবণতা বজায় থাকে এবং রাজস্ব আদায়ের কাঠামোয় কোনো সংস্কার না আনা হয়, তবে আগামী অর্থবছরে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনে বড় বাধার মুখে পড়বে দেশ।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সরকারকে দ্রুত বিকল্প অর্থ সংগ্রহের পথ অনুসন্ধান করতে হবে – যেমন, সঞ্চয়পত্র, বিদেশি সহায়তা, এবং রাজস্ব প্রশাসনে সংস্কার – না হলে অর্থনৈতিক ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।



ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। রাজস্ব ঘাটতি ও বেসরকারি খাতে স্থবিরতার কারণে সরকার ব্যাংক নির্ভরতা বাড়াচ্ছে। এর ফলে দীর্ঘমেয়াদে অর্থনীতি আরও চাপে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এখনই সঠিক অর্থনৈতিক কৌশল না নিলে আগামী দিনে এর মূল্য দিতে হতে পারে পুরো দেশকে।

कोई टिप्पणी नहीं मिली