রিয়াল মাদ্রিদ – নামটাই যেন প্রতিপক্ষের জন্য আতঙ্ক। আর সেই আতঙ্ককে বাস্তবতায় রূপ দিল তারা ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপে, যেখানে মাত্র ১০ জনের দল নিয়েও দুর্দান্ত এক জয় তুলে নিলো স্প্যানিশ জায়ান্টরা। রবিবার রাতের উত্তপ্ত আবহাওয়ায়, লাল কার্ডের শাস্তিতে এক খেলোয়াড় কম নিয়েই ৩-১ গোলে হারিয়ে দিলো মেক্সিকোর শক্তিশালী ক্লাব পাচুকাকে।
এই জয়ে গ্রুপ পর্বের গুরুত্বপূর্ণ তিন পয়েন্ট তুলে নিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। এখন শেষ ষোলোতে উঠতে হলে পরবর্তী ম্যাচে সালজবুর্গের বিপক্ষে জয় বা ড্র করলেই চলবে। অন্যদিকে এই পরাজয়ে টুর্নামেন্ট থেকেই ছিটকে পড়েছে পাচুকা।
ম্যাচের মাত্র সপ্তম মিনিটেই ঘটে যায় নাটকীয় ঘটনা। পাচুকার স্ট্রাইকার সলোমন রন্ডনকে পেছন থেকে ফাউল করে বসেন রাউল অ্যাসেনসিও। রেফারি কোনো দেরি না করে সরাসরি লাল কার্ড দেখান তাকে। ফলে ম্যাচের প্রায় পুরোটাই ১০ জন নিয়ে খেলতে হয় রিয়ালকে।
তবে এই প্রতিকূলতাই যেন বাড়তি অনুপ্রেরণা হয়ে দেখা দেয়। খেলোয়াড়ের ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও বল দখল, পাসিং, গতি এবং আক্রমণে একচুলও পিছিয়ে থাকেনি তারা।
৩৫ মিনিটে প্রথম গোলটি আসে তরুণ ইংলিশ মিডফিল্ডার জুড বেলিংহামের পা থেকে। এক চমৎকার থ্রু পাস পেয়ে ডান দিক থেকে ড্রিবল করে বক্সে ঢুকে নিচু শটে বল পাঠান জালে।
এর ঠিক ৮ মিনিট পর আরও এক তরুণ, তুর্কি মিডফিল্ডার আর্দা গুলের অসাধারণ গোল রিয়ালকে দেয় ২-০ ব্যবধানের লিড। ট্রেন্ট আলেকজান্ডার-আর্নল্ডের পাস থেকে গঞ্জালো গার্সিয়ার বুদ্ধিদীপ্ত লে-অফে বল পেয়ে গোলটি করেন গুলের।
দ্বিতীয়ার্ধে পাচুকা আক্রমণের গতি বাড়ালেও রিয়ালের রক্ষণভাগ ছিল দৃঢ়। গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়া যেন দেয়াল হয়ে দাঁড়ান। একের পর এক দারুণ সেভে ব্যর্থ করে দেন পাচুকার ফরোয়ার্ডদের।
৭০ মিনিটে ফেদেরিকো ভালভার্দে চমকপ্রদ স্লাইডিং ভলিতে করেন রিয়ালের তৃতীয় গোল, যা মূলত ম্যাচের নিয়তি নির্ধারণ করে দেয়। যদিও শেষদিকে পাচুকার ইলিয়াস মন্টিয়েলের শট রিয়ালের এক ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে দিক পরিবর্তন করে জালে ঢুকে পড়ে, তবুও তা ছিল শুধুই সান্ত্বনার গোল।
ম্যাচ শেষে রিয়ালের কোচ জাবি আলোনসো বলেন,আমরা কঠিন পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছি। ছেলেরা যেভাবে লড়েছে, তাতে আমি গর্বিত।
রিয়ালের হয়ে এটি ছিল আলোনসোর প্রথম জয় কোচ হিসেবে। সালজবুর্গের বিপক্ষে পরবর্তী ম্যাচে জয় বা ড্র পেলেই রিয়াল চলে যাবে শেষ ষোলোতে। সেই ম্যাচটি এখন হয়ে উঠেছে শুধু একটি আনুষ্ঠানিকতা।
এই জয়ে ৪ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপে শীর্ষে রয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। প্রথম ম্যাচে আল হিলালের সঙ্গে ড্র করেছিল তারা, ফলে পাচুকার বিপক্ষে জয়টি ছিল অনেকটাই আবশ্যক।
পাচুকা দুটি ম্যাচেই হেরে যাওয়ায় ছিটকে পড়েছে টুর্নামেন্ট থেকে। এই হারে তারা শুধু বিদায়ই নেয়নি, রিয়ালের চমকপ্রদ জয়ও নিশ্চিত করেছে।
১০ জনের দল নিয়েও রিয়াল মাদ্রিদ যেভাবে প্রতিপক্ষকে পরাস্ত করলো, তা কেবল একটি জয় নয় — এক অনুপ্রেরণামূলক গল্প। কোচ আলোনসোর অধীনে তরুণদের আত্মবিশ্বাস আর অভিজ্ঞদের নেতৃত্বে যেন আরও একবার চ্যাম্পিয়ন রিয়ালের ছায়া ফুটে উঠছে মাঠে।
		
				
			


















