কুমিল্লা সার্কিট হাউসে সকাল ১০টা থেকে শুরু হওয়া শুনানিতে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ডাকা হয়েছে অভিযোগকারী, অভিযুক্ত ব্যক্তি বা তার পরিবার, স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তি ও মুক্তিযুদ্ধের সময়ের প্রত্যক্ষদর্শীদের। উপস্থিত ব্যক্তিদের কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট তথ্য ও প্রমাণ সংগ্রহ করা হবে বলে জানিয়েছে জামুকা।
তদন্তের পেছনের পটভূমি
জুলাই আন্দোলনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেন ফারুক-ই-আজম বীরপ্রতীক। দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি মুক্তিযোদ্ধা সনদ যাচাই-বাছাইয়ের নির্দেশ দিলে, দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে হাজার হাজার ভুয়া সনদের অভিযোগ জমা পড়ে।
এরপর জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে যাচাই প্রক্রিয়া শুরু হয়। তারই ধারাবাহিকতায় আজকের কুমিল্লা অঞ্চলের ৩১ জনের বিরুদ্ধে শুনানি চলছে।
জামুকার বক্তব্য
জামুকার মহাপরিচালক শাহিনা খাতুন বলেন, “ঢাকায় বসে কারা ভুয়া, কারা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা তা নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। এজন্য আমরা মাঠে যাচ্ছি। তথ্য ও সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করে নির্ভুলভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেষ্টা করছি।”
জামুকা সদস্য খ. ম. আমীর আলী বলেন, “সব সরকারই মুক্তিযোদ্ধা সনদ দিয়েছে, যাচাই-বাছাই করেনি। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান রক্ষায় ভুয়াদের শনাক্তের উদ্যোগ নিয়েছি। শুনানির মাধ্যমে সঠিক ডেটাবেজ তৈরির প্রক্রিয়া এগিয়ে যাবে।”
কতজন ভুয়া?
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশে মোট ২ লাখ ৮ হাজার সনদধারী মুক্তিযোদ্ধা আছেন। মন্ত্রণালয়ের হিসাবে এর মধ্যে ৯০ হাজার ভুয়া। তবে জামুকা বলছে, প্রকৃত সংখ্যা ১ লাখ ২২ হাজারের বেশি।
১৯৯৪ সালের বিএনপি সরকারের সময় করা ৮৬ হাজার মুক্তিযোদ্ধার তালিকাকে প্রাথমিক ভিত্তি ধরে যাচাই করছে জামুকা। এ পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা বয়সসীমা নির্ধারণসহ নানা কারণে ৩,৯২৬টি গেজেট বাতিল হয়েছে। ২ হাজার ১১১ জনের সনদ শুধু বয়স কম থাকার কারণে বাতিল করা হয়েছে।
শুনানিতে যাদের নাম রয়েছে
আজ যাদের শুনানি হচ্ছে, তাদের মধ্যে আছেন কুমিল্লা জেলার লাকসাম, চৌদ্দগ্রাম, নাঙ্গলকোট, বরুড়া, হোমনা, ব্রাহ্মণপাড়া, কসবা, দাউদকান্দি, চাঁদপুর সদর ও নোয়াখালী জেলার বিভিন্ন উপজেলার মোট ৩১ জন ব্যক্তি। তাদের বিরুদ্ধে স্থানীয়ভাবে সনদ জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে। প্রত্যেকের নাম, পিতার নাম, ঠিকানা ও গেজেট নম্বর অনুযায়ী যাচাই-বাছাই করা হবে।
পরবর্তী পদক্ষেপ
শুনানির ভিত্তিতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করে জামুকা ও মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেবে কারা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা এবং কারা নয়। গেজেট বাতিল, সনদ স্থগিত বা দণ্ডমূলক ব্যবস্থাও নেওয়া হতে পারে।