close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের অস্ত্র নিয়ে বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের অস্ত্র সংক্রান্ত মন্তব্যে ক্ষুব্ধ কায়রো। বললেন, এই বার্তা ভয়ঙ্কর, সমাজে সহিংসতা বাড়াবে। দ্রুত বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন তিনি।..

সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে আলোচিত এবং বিতর্কিত রাজনৈতিক বক্তব্য উঠে এসেছে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়ার একটি ফেসবুক পোস্ট ঘিরে। অস্ত্র রাখার বিষয়ে তিনি যে মন্তব্য করেছেন, সেটিকে “চরম দায়িত্বজ্ঞানহীন ও বিপজ্জনক” আখ্যা দিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন ব্লগার ও নাগরিক সমাজকর্মী মাহমুদুল হাসান কায়রো।

সোমবার (৩০ জুন) সকালে নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেয়া এক স্ট্যাটাসে কায়রো বলেন, “আমি একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে মনে করি, এই বক্তব্য চরম আপত্তিকর ও দায়িত্বজ্ঞানহীন। এর অন্তর্নিহিত বার্তা হচ্ছে—নাগরিকরা যেন নিজেদের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিজেরাই নিয়ে নেন।

বিষয়টি ঘিরে বিতর্কের সূত্রপাত রোববার রাতে, যখন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছিলেন:
“নাগরিক হিসেবে আপনারও যদি নিরাপত্তার ঝুঁকি থাকে, যথাযথ নিয়ম ফলো করে আপনিও অস্ত্রের লাইসেন্স করতে পারেন।”

এই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রীতিমতো ভাইরাল হয়। মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ওই পোস্টে প্রায় ৯০ হাজারের বেশি রিয়্যাক্ট, ১২ হাজার কমেন্ট এবং ১.৪ হাজার শেয়ার হয়। এই প্রতিক্রিয়ার সিংহভাগই ছিল মিশ্র, তবে বেশিরভাগ ব্যবহারকারীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

কায়রো বলেন, “একজন মন্ত্রীর কাছ থেকে এমন বক্তব্য জাতিকে বিভ্রান্ত করবে এবং সমাজের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর বার্তা দেবে।”
তিনি উল্লেখ করেন, রাষ্ট্রের প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, কিন্তু এ বক্তব্য নাগরিকদের বলছে—“নিজের নিরাপত্তা নিজেই দেখে নিন।”

এই অবস্থাকে তিনি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রতি একধরনের অনাস্থা সৃষ্টির চেষ্টাও বলেছেন।

কায়রোর ভাষায়, “এমন বক্তব্য অস্ত্র সংস্কৃতিকে উৎসাহ দেয়। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে ভয়, উত্তেজনা এবং সহিংসতার আশঙ্কা বাড়ে।”
তিনি সতর্ক করে বলেন, বৈধ অস্ত্রও পারিবারিক কলহ, প্রতিবেশীর সঙ্গে বিরোধ, কিংবা মানসিক অস্থিরতার সময় প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অস্ত্র ব্যবহারের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ও মনিটরিং না থাকায় এটি আরও বিপজ্জনক হয়ে ওঠে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

কায়রোর মতে, এই বক্তব্যে আসলে দুর্বল আইনশৃঙ্খলা, অপরাধ নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের ব্যর্থতা এবং পুলিশের সীমাবদ্ধতাগুলো এড়িয়ে গিয়ে মানুষকে একধরনের আত্মরক্ষার দোহাইয়ে অস্ত্র হাতে তুলে নিতে উৎসাহিত করা হয়েছে।
তার ভাষায়:
“আমরা চাই এমন একটি রাষ্ট্র, যেখানে রাত-বিরাতে পথ চলতে ভয় না লাগে, প্রতিবাদ করতে গিয়ে গুলি না খেতে হয়, এবং মতপ্রকাশে আতঙ্ক না থাকে। আমরা শক্তিশালী অস্ত্রধারী নাগরিক চাই না, চাই শক্তিশালী রাষ্ট্র।”

তিনি আরও বলেন, “যথাযথ নিয়ম মেনে অস্ত্রের লাইসেন্স গ্রহণের সুযোগ থাকলেও তা সাধারণত ধনিক ও প্রভাবশালী গোষ্ঠীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। এতে সমাজে ক্ষমতার বৈষম্য আরও বৃদ্ধি পায় এবং গণতন্ত্রের ভারসাম্য হুমকির মুখে পড়ে।”

আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়া বর্তমানে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন। তার কথার প্রভাব রয়েছে কোটি মানুষের ওপর—বিশেষ করে তরুণদের মাঝে।
এ প্রসঙ্গে কায়রো বলেন, “এমন একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তির কাছ থেকে এই ধরনের পোস্ট দেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর কাছে ভয়ানক বার্তা পাঠিয়েছে।”

তিনি মনে করেন, এই পোস্টের মাধ্যমে উপদেষ্টা অনিচ্ছাকৃতভাবে হলেও তরুণ সমাজকে অস্ত্রধারী হওয়ার প্রতি একধরনের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করে দিয়েছেন, যা ভবিষ্যতে সমাজে হিংস্রতা ও বিশৃঙ্খলা বাড়াতে পারে।

নিউজটির শেষাংশে কায়রো বলেন, “আমি দেশের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে মনে করি, আসিফ মাহমুদের এই বক্তব্য আপত্তিকর। তিনি যেন এই পোস্টটি প্রত্যাহার করেন এবং তার বিপরীত বার্তা জাতির সামনে তুলে ধরেন।”

কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি