close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

তুমি কে, আমি কে—রা'জাকা'র রা'জাকা'র, স্লোগানে কেঁ'পেছিল স্বৈ'রাচার..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
সরকারি চাকরিতে বৈষম্যমূলক কোটার বিরুদ্ধে শুরু হওয়া ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ মুহূর্তেই পরিণত হয় গণবিস্ফোরণে। ঢাবি থেকে সারাদেশ, মেট্রোরেল থেকে সংসদ—সবকিছু স্তব্ধ। “তুমি কে, আমি কে—রাজাকার রাজাকার” ..

২০২৪ সালের ২ জুলাই, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি প্রাঙ্গণে একটি সাধারণ শিক্ষার্থীর কণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছিল একটি স্লোগান—“তুমি কে, আমি কে—রাজাকার রাজাকার!” তখন কেউ ভাবেনি, এই স্লোগান একসময় স্বৈরশাসনের মূলে কাঁপন ধরাবে। বৈষম্যমূলক কোটার বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ যেমন ছিল সময়ের দাবি, তেমনি তা পরিণত হয় একটি ইতিহাস-গড়া অভ্যুত্থানে।

ছাত্রদের দাবি ছিল—সরকারি চাকরিতে দীর্ঘদিনের অযৌক্তিক কোটা বাতিল করা হোক। ৪ জুলাই আপিল বিভাগ কোটার পক্ষে রায় দিলে আন্দোলন স্ফুলিঙ্গে পরিণত হয়। দেশের প্রায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজে আন্দোলনের ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে। ৬ জুলাই ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি ঢাকাকে অচল করে ফেলে। মেট্রোরেল, রাস্তাঘাট, অফিস, আদালত—সবই তখন আন্দোলনের ঘূর্ণিপাকে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৭ জুলাই এক ভাষণে আন্দোলনকে ‘অযৌক্তিক’ বলে আখ্যা দেন এবং তা আদালতের এখতিয়ার বলে দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেন। শিক্ষার্থীদের মনে তখন দানা বাঁধে ক্ষোভ। ১০ জুলাই আদালতের ‘স্থিতাবস্থা’ নির্দেশ দিয়েও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হয় প্রশাসন। শিক্ষার্থীরা স্পষ্ট জানিয়ে দেয়—সংসদে আইন পাস ছাড়া কোনো সমাধান তারা মানবে না।

১২ জুলাই শাহবাগে শিক্ষার্থী-পুলিশ সংঘর্ষে বিক্ষোভ নতুন মাত্রা পায়। একদিকে কাঁদানে গ্যাস, অন্যদিকে রক্তাক্ত ছাত্রছাত্রী—রাজপথ তখন যেন যুদ্ধক্ষেত্র। ১৪ জুলাই রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া “রাজাকারের নাতি-নাতনি” মন্তব্যে ক্ষোভ আরও তীব্র হয়ে ওঠে। তখনই রাজপথে গর্জে ওঠে সেই ঐতিহাসিক স্লোগান—“তুমি কে, আমি কে—রাজাকার রাজাকার!

১৬ জুলাই সংঘর্ষে নিহত হন ৬ জন, ছয়টি জেলায় মোতায়েন করা হয় বিজিবি। পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। ১৭ থেকে ১৯ জুলাই পর্যন্ত কয়েক দফা সহিংসতায় নিহতের সংখ্যা ৯৫ ছাড়িয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় মেট্রোরেল, ইন্টারনেট সংযোগ, টেলিভিশন সম্প্রচার। বিটিভি ভবনে আগুন, সেতু ভবন ও টোল প্লাজায় হামলা—সব মিলিয়ে দেশ প্রায় অচল হয়ে পড়ে।

২১ জুলাই সর্বোচ্চ আদালত নতুন করে কোটা নির্ধারণ করে: মেধা ৯৩%, মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ৫%, এবং ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী, প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গ—প্রতিটি জন্য ১%। কিন্তু এই আপস মেনে নেয়নি আন্দোলনকারীরা। ২৩ জুলাই সরকার মেধানির্ভর নিয়োগের ঘোষণা দিলেও তাতে সাড়া মেলেনি। জনগণের চোখে তখন সরকার হয়ে ওঠে জনবিচ্ছিন্ন, দুঃশাসনের প্রতীক।

২৬ জুলাই গোপনে ছয় নেতাকে ডিবি হেফাজতে তুলে নেওয়া হয়। এরপরই আন্দোলন আরও রূপ নেয় গণজাগরণে। দেশের নানা স্থানে পুলিশি হামলা, মামলা, গ্রেপ্তারের ঘটনা বাড়ে। প্রায় ২০০টির বেশি মামলা ও ২ লাখের বেশি মানুষকে অভিযুক্ত করা হয়।

২৮ জুলাই আন্দোলন ‘স্থগিত’ ঘোষণা করা হলেও বাইরের সংগঠকরা জানিয়ে দেন—আন্দোলন চলবে।

৫ আগস্ট ঘোষিত হয় 'মার্চ টু ঢাকা' কর্মসূচি। রাজধানী ঘিরে লাখো জনতার ঢল। সেনাবাহিনীও তখন নিয়ন্ত্রণ হারায়। সেনাপ্রধান জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগপূর্বক দেশত্যাগ করেন। সেই মুহূর্তে ঢাকার নিয়ন্ত্রণ নেয় সাধারণ জনতা।

বিশ্ব মিডিয়ায় এ ঘটনাকে “বাংলাদেশের ২০২৪’র অভ্যুত্থান” নামে অভিহিত করা হয়। কিন্তু একটি বছরের ব্যবধানে আজও শহীদদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি হয়নি।

‘জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন’ জানায়, এ পর্যন্ত তারা ৮৫৪ জন শহীদ ও ১৫ হাজার ৩৯৩ জন আহতের তালিকা করেছে। অনেক লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়েছে। ঢামেক মর্গে পড়ে আছে ছয়জনের মরদেহ।

ফাউন্ডেশনের বিশেষ সেলের প্রধান মো. মশিউর রহমান জানান, নতুন করে গেজেটে ১৫-২০ জনের নাম যুক্ত হবে। কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদফতরের সার্ভার জটিলতায় অনেক আবেদন এখনও ঝুলে আছে।

সরকার ১১০ কোটি টাকার পুনর্বাসন সহায়তা বরাদ্দ দিয়েছে। শহীদদের নামে স্মৃতিফলক, বৃক্ষরোপণ ও সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন শুরু হয়েছে। ৫ আগস্ট বড় পরিসরে স্মরণসভা ও অজ্ঞাত শহীদদের শনাক্তে বিশেষ সেল গঠনের কথাও জানানো হয়েছে।

একটি স্লোগান, একটি দৃঢ়তা—পুরো জাতির ইতিহাস বদলে দিয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন রয়ে যায়—যারা শহীদ হলেন, আহত হলেন, গুম হলেন—তাদের পরিচয় কবে রাষ্ট্র দেবে? ইতিহাসের দায় কি শুধু জনগণের, রাষ্ট্রের নয়?

KUTUB UDDIN AHMED
KUTUB UDDIN AHMED 3 månader sedan
চমৎকার লিখনি, অপূর্ব!!
0 0 Svar
Visa mer


News Card Generator