‘ট্রেনিং’ নয়, আগে বাঁচার অধিকার দাও!
দুই হাজার কোটি টাকা—হ্যাঁ, ঠিকই পড়ছেন। দুই হাজার কোটি টাকা ‘শিক্ষকদের দক্ষতা উন্নয়ন’ নামক ট্রেনিংয়ের জন্য একনেকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কথার ফুলঝুরি চলছে—শিক্ষা হবে ‘গুণগত’, শিক্ষক হবেন ‘দক্ষ’। অথচ সেই শিক্ষকেরই নিজের বাড়ি ভাড়া মেটাতে হয় বেসরকারি টিউশনের টাকা দিয়ে, নিজের অসুস্থতা লুকিয়ে ক্লাস নিতে হয়—কারণ চিকিৎসা ভাতাতো সেই ৫০০।
এই চিত্র আজ নতুন নয়। বছরের পর বছর ধরে আমরা দেখি, সরকার আসে-সরকার যায়, কিন্তু এমপিওভুক্ত শিক্ষকের ভাগ্যবদল হয় না। আগের সরকার বলত—'পরের বাজেটে বৈষম্য দূর হবে'। এখন ইন্টারিম সরকারের উপদেষ্টারাও সেই একই বুলি আওড়ান। শুধু বদলায় বক্তা, বদলায় পোশাক—নীতির নিঃস্বতার জায়গায় কোনো পরিবর্তন নেই।
একটি সমাজে যদি শিক্ষকের প্রতি ন্যূনতম সম্মান না থাকে, যদি তার জীবনের প্রয়োজনীয় চাহিদাগুলোও পূরণ না হয়, তাহলে সেই সমাজ কোন গুণগত শিক্ষা আশা করে? দুই হাজার কোটি টাকার ট্রেনিং কীভাবে কাজে আসবে, যদি সেই শিক্ষক নিজেই মানসিক চাপে, আর্থিক সংকটে বা অসুস্থতায় জর্জরিত হয়ে থাকেন?
এই বরাদ্দ যেন ‘শিক্ষক উন্নয়ন’ নয়, বরং 'নিয়মিত লুটপাটের উন্নত সংস্করণ'। বরাদ্দের ঘূর্ণাবর্তে পড়ে শিক্ষক যেন এক পরীক্ষাগারের ইঁদুর—যাকে শুধু দৌড়াতেই বলা হয়, খাবারটা ঠিক আসে না।
একটি কথাই বারবার বলার সময় এসেছে—প্রশিক্ষণ নয়, আগে শিক্ষক বাঁচুক। আগে তার মৌলিক অধিকার নিশ্চিত হোক। তার মাথার উপর ছাদ, শরীরের চিকিৎসা, সন্তানদের শিক্ষা—এসবের নিশ্চয়তা ছাড়া কোনো উন্নয়নই টেকসই নয়, কোনও ট্রেনিংই কার্যকর নয়।
মো: তানজিম হোসাইন
শিক্ষক ও সাংবাদিক



















