ট্রাম্পের মেক্সিকো, কানাডা, ও চীনের উপর শুল্ক ঘোষণার পর প্রথম ট্রেডিং দিনে যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারে ধস..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারে ধস নেমেছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মেক্সিকো, কানাডা, এবং চীনের উপর নতুন শুল্ক ঘোষণার পর প্রথম ট্রেডিং দিনে। এই শুল্ক নীতির প্রভাব মার্কিন ও বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি..

যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারে ধস নেমেছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মেক্সিকো, কানাডা, এবং চীনের উপর নতুন শুল্ক ঘোষণার পর প্রথম ট্রেডিং দিনে। এই শুল্ক নীতির প্রভাব মার্কিন ও বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ, বাণিজ্য যুদ্ধের সম্ভাব্যতা, এবং বৈশ্বিক বাজারে অস্থিতিশীলতা—সবকিছু মিলিয়ে এটি এক ঐতিহাসিক অর্থনৈতিক ঘটনা হয়ে উঠেছে।

ইতিহাসের পটভূমি: শুল্ক যুদ্ধের গোড়াপত্তন

বাণিজ্য শুল্কের ইতিহাসে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ২০১৮ সালে চীনের উপর প্রথম দফা শুল্ক আরোপের মাধ্যমে শুরু হয় "ট্রেড ওয়ার" বা বাণিজ্য যুদ্ধ। এরপর পর্যায়ক্রমে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা, ও মেক্সিকোর উপর শুল্ক আরোপ করা হয়। ট্রাম্পের যুক্তি ছিল, এই শুল্কের মাধ্যমে মার্কিন উৎপাদন শিল্পকে সুরক্ষা দেয়া এবং বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাস করা যাবে।

বর্তমান পরিস্থিতি: ধস নামল মার্কিন বাজারে

শুল্ক ঘোষণার পরপরই ডাও জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল এভারেজ ৭০০ পয়েন্টেরও বেশি পড়ে যায়। নাসডাক এবং এসঅ্যান্ডপি ৫০০-এর সূচকেও ব্যাপক পতন লক্ষ্য করা যায়। প্রযুক্তি, গাড়ি নির্মাণ, এবং কৃষি পণ্যের শেয়ার সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং অনেকে তাদের বিনিয়োগ নিরাপদ রাখতে সোনা ও সরকারি বন্ডে ঝুঁকছেন।

বিশেষজ্ঞদের মতামত: শুল্কের অর্থনৈতিক প্রভাব

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই শুল্ক নীতি স্বল্পমেয়াদে মার্কিন উৎপাদকদের কিছু সুরক্ষা দিলেও দীর্ঘমেয়াদে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিশ্লেষক জনাথন মিলার বলেন, "এই শুল্ক নীতি বিশ্ববাজারে অস্থিতিশীলতা তৈরি করবে, যা বিনিয়োগ কমিয়ে দেবে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হ্রাস করবে।"

অন্যদিকে, ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা দাবি করছেন যে এই শুল্ক নীতি মার্কিন অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করবে এবং বিদেশি কোম্পানিগুলিকে যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগে উৎসাহিত করবে।

পরিসংখ্যান ও তথ্য: সংখ্যায় শুল্কের প্রভাব

ডাও জোন্স: ৭০০ পয়েন্টের পতন (২.৮%)

নাসডাক: ৩.১% হ্রাস

এসঅ্যান্ডপি ৫০০: ২.৬% হ্রাস

অ্যাপল ও টেসলা: ৫% এর বেশি পতন

এই পরিসংখ্যানগুলোই প্রমাণ করে যে বিনিয়োগকারীরা কতটা আতঙ্কিত এবং বাজারে কত বড় ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে।

বাস্তব উদাহরণ: ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প খাত

শুল্কের প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গাড়ি উৎপাদন এবং কৃষি খাত। ফোর্ড, জেনারেল মোটরস-এর শেয়ার দামে বড় ধরনের পতন ঘটেছে। কৃষি খাতে সয়াবিন এবং ভুট্টার মূল্যও উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। এর ফলে কৃষকরা বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছেন।

সামগ্রিক বিশ্লেষণ: বাণিজ্য নীতির ভবিষ্যৎ

এই শুল্ক নীতি নিয়ে বিশ্লেষকদের মধ্যে দ্বিমত রয়েছে। একপক্ষ মনে করে, এটি স্বল্পমেয়াদে মার্কিন অর্থনীতিকে কিছুটা সুরক্ষা দেবে, কিন্তু অন্যপক্ষের মতে, এই নীতির ফলে বিশ্ববাজারে অস্থিরতা তৈরি হবে যা বিশ্ব অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর।

উপসংহার: কী হতে পারে সামনে?

ট্রাম্পের শুল্ক নীতির ফলে মার্কিন বাজারে যে ধস নেমেছে তা কেবল একটি প্রাথমিক প্রভাব। বাণিজ্য যুদ্ধের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব মূল্যায়ন করতে আরও সময় লাগবে। বিনিয়োগকারীদের এখন আরও সতর্ক থাকতে হবে এবং সরকারকে অবশ্যই এই নীতি নিয়ে পুনর্বিবেচনা করতে হবে। বিশ্ব অর্থনীতি আজ এক অদ্ভুত সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে, যেখানে একটি সিদ্ধান্তের প্রভাব পড়তে পারে কোটি কোটি মানুষের জীবনে।

Tidak ada komentar yang ditemukan