ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে শর্তসাপেক্ষে রাজি হামাস..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
হামাস জানিয়েছে, ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে তারা রাজি—তবে একমাত্র শর্ত, গাজার যুদ্ধ পুরোপুরি বন্ধ হতে হবে। কায়রোয় আজ বৈঠকে বসছে পক্ষগুলো।..

মধ্যপ্রাচ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘাত থামাতে নতুন করে আলোচনার সূত্রপাত হলো যুক্তরাষ্ট্রের এক হাই-প্রোফাইল প্রস্তাবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে গাজার যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নের উদ্যোগ এবার প্রথমবারের মতো কিছুটা আশাব্যঞ্জক ফল দিতে পারে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস জানিয়েছে, তারা এই প্রস্তাবে রাজি—তবে একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্তে। শর্তটি হলো: “গাজায় চলমান যুদ্ধ অবশ্যই সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হতে হবে।” আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এপি জানিয়েছে, হামাসের এক শীর্ষ কর্মকর্তা এই বার্তা নিশ্চিত করেছেন।

আজ বুধবার হামাস তাদের পক্ষ থেকে ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি নিয়ে ইতিবাচক ইঙ্গিত দিয়েছে। তবে ট্রাম্পের প্রস্তাব সরাসরি গ্রহণ করেনি তারা। বরং স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে, তারা পূর্বের অবস্থানেই অনড়—শুধুমাত্র এমন কোনো চুক্তিই গ্রহণযোগ্য হবে যা গাজার যুদ্ধের সম্পূর্ণ অবসান নিশ্চিত করবে।

হামাসের শীর্ষ নেতা তাহের আল-নুনু বলেন, “আমরা একটি সমঝোতায় পৌঁছাতে আন্তরিকভাবে প্রস্তুত। যে কোনো প্রস্তাব, যা গাজার যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটাবে, হামাস সেটি বিবেচনায় নিতে প্রস্তুত।” তিনি এও জানান, সংস্থাটি যুদ্ধবিরতি শুধু তখনই মেনে নেবে, যদি তা দীর্ঘমেয়াদী ও বাস্তবভিত্তিক হয়।

অন্যদিকে, মিসরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন, কায়রোয় আজই হামাসের একটি প্রতিনিধি দল মিসর ও কাতারের মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে বৈঠকে বসছে। এই আলোচনাকেই ভবিষ্যতের যুদ্ধবিরতি চুক্তির পথপ্রদর্শক হিসেবে দেখছে অনেকেই।

ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়াও এসেছে দ্রুত। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদিওন সা’আর আজ জানিয়েছেন, গাজায় হামাসের হাতে আটক বন্দিদের মুক্ত করতে হলে এখনকার সুযোগকে কাজে লাগাতেই হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ তিনি বলেন, “সরকার ও দেশের একটি বড় অংশ বন্দিমুক্তির পক্ষে। এ সুযোগ হাতছাড়া করা যাবে না।” বার্তা সংস্থা এএফপি তার বক্তব্য নিশ্চিত করেছে।

এর আগে গতকাল মঙ্গলবার ট্রাম্প নিজেই জানান, ইসরায়েল ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির শর্তে সম্মত হয়েছে। হোয়াইট হাউসে আসন্ন সোমবার নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকের আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই ঘোষণা দেন, যা ইঙ্গিত করে—ওয়াশিংটন এই সংঘাত নিরসনে এবার অনেক বেশি সক্রিয়।

ট্রাম্প তার নিজ মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যালে’ লেখেন, ইসরায়েলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে গাজা ইস্যুতে দীর্ঘ ও ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। ইসরায়েল ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে এবং এখন আমরা কাতার ও মিসরের মাধ্যমে চূড়ান্ত প্রস্তাব হামাসের কাছে পাঠাবো।

তিনি আরও বলেন, “আমি আশা করি, হামাস মধ্যপ্রাচ্যের শান্তির স্বার্থে এই সুযোগটি গ্রহণ করবে। কারণ, এর চেয়ে ভালো কিছু আর আসবে না। এরপর পরিস্থিতি কেবল আরও খারাপই হবে।”

তবে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে—হামাস কি এই প্রস্তাবকে শেষ সুযোগ হিসেবে দেখছে? বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে হামাস হয়তো প্রস্তাবকে গুরুত্ব দিলেও এখনো পূর্ণ আস্থা অর্জন করেনি। গত মার্চেও ট্রাম্প একইভাবে হামাসকে চাপে রাখার চেষ্টা করেছিলেন। যুদ্ধবিরতি, জিম্মি মুক্তি এবং মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর প্রশ্নে একাধিক নাটকীয় হুঁশিয়ারি দেন তিনি। কিন্তু সেসময় হামাসের পক্ষ থেকে তেমন ইতিবাচক সাড়া মেলেনি।

বর্তমান পরিস্থিতিতে এই প্রস্তাব কার্যকর হলে শুধু গাজার বুকে রক্তপাত থামবে না, বরং আন্তর্জাতিক রাজনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় ঘুরে যেতে পারে। তবে সবকিছু নির্ভর করছে হামাস কতটা আন্তরিকভাবে এই প্রস্তাব গ্রহণ করে এবং ইসরায়েল কতটা দ্রুত বাস্তবায়নে এগিয়ে আসে তার ওপর।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব এক ঐতিহাসিক সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিচ্ছে। তবে “শর্তসাপেক্ষ” মনোভাব, বিশেষ করে হামাসের “সম্পূর্ণ যুদ্ধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো চুক্তি নয়” অবস্থান—এই চুক্তিকে আরও জটিল করে তুলছে। এখন নজর কায়রোর আলোচনার দিকে—সেখানে কী হয়, তার ওপরই নির্ভর করছে গাজার ভবিষ্যৎ।

Aucun commentaire trouvé


News Card Generator