close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

ট্রাম্পের দ্বিমুখী বার্তায় দুনিয়াজুড়ে উদ্বেগ—ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র কী সত্যিই নামছে ?..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ট্রাম্প কখনো শান্তির কথা বলেন, আবার মুহূর্তেই ইরানকে ধ্বংসের হুমকি দেন। ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের মাঝপথে দাঁড়িয়ে তাঁর পরস্পরবিরোধী কথায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বৈশ্বিক রাজনীতি। তবে কি যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি যুদ্ধে ..

ইরান-ইসরায়েলের মধ্যে চলমান যুদ্ধ আজ অষ্টম দিনে পা দিয়েছে। এই সময়ে একদিকে যখন ক্ষেপণাস্ত্রের আগুনে জ্বলছে মধ্যপ্রাচ্যের আকাশ, অন্যদিকে বিশ্ববাসীর নজর এখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্য ও কৌশলের দিকে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, ট্রাম্প এক কথা বলছেন, আর এক কাজ করছেন। একদিকে তিনি শান্তি প্রতিষ্ঠার কথা বলছেন, অন্যদিকে ইরানের সর্বোচ্চ নেতাকে হত্যার ইঙ্গিত দিচ্ছেন, এমনকি ইসরায়েলের সঙ্গে যৌথ হামলার কথাও উঁকি দিচ্ছে তাঁর মুখে।

বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউস থেকে জানানো হয়েছে, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সিদ্ধান্ত নেবেন যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি এই যুদ্ধে জড়াবে কিনা। এই ঘোষণার পর আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগের ঝড় বয়ে যাচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এই দোদুল্যমান অবস্থান এটাই প্রমাণ করে যে, তাঁর কোনো সুসংহত কৌশল নেই এবং তিনি হয়তো ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর চাপের মুখে পড়ে যুদ্ধের দিকে হাঁটছেন।

বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বহুদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রকে পাশে চেয়ে ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক হস্তক্ষেপের দাবি করে আসছেন। তাঁর ভাষ্য, ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রম মানবতার জন্য হুমকি। ট্রাম্প হয়তো সেই দাবির প্রতিক্রিয়া হিসেবেই এই হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন। কিন্তু বিশ্লেষকদের একটি অংশ বলছেন, ট্রাম্প আসলে একধরনের কূটনৈতিক জুয়া খেলছেন।

ন্যাশনাল ইরানিয়ান আমেরিকান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট জামাল আবদি আল-জাজিরাকে জানান,ট্রাম্প এমন একজন নেতা হিসেবে নিজেকে তুলে ধরছেন, যিনি অপ্রত্যাশিত ও হঠাৎ সিদ্ধান্তে অভ্যস্ত। তিনি ভয় দেখিয়ে ইরানকে পরমাণু কর্মসূচি থেকে সরে যেতে বাধ্য করতে চাইছেন।

তিনি আরও বলেন, ট্রাম্প হয় ইরানকে অপমান করে সুবিধা আদায় করতে চাইছেন, নয়তো নেতানিয়াহুর ফাঁদে পড়ে যুদ্ধে জড়াচ্ছেন।

ইরানিয়ান-আমেরিকান বিশ্লেষক নেগার মরতাজাভির মতে,-ট্রাম্প আসলে নিজেই জানেন না তিনি কী করতে চান। একদিকে তিনি শান্তির বার্তা দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন, এখন তাঁর শাসনামলেই তৃতীয় বড় যুদ্ধের সূচনা হয়েছে।

গত সপ্তাহে ইসরায়েল সরাসরি ইরানে ব্যাপক বিমান হামলা চালায়। যেদিন ওমানে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে ছয় নম্বর শান্তি আলোচনা হওয়ার কথা ছিল, ঠিক সেইদিনই ইরানের সামরিক ঘাঁটি, পারমাণবিক কেন্দ্র, তেল পরিকাঠামো এমনকি আবাসিক এলাকাও আক্রান্ত হয়। এতে নিহত হন শত শত মানুষ, যার মধ্যে ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তারাও রয়েছেন।

জবাবে ইরান শতাধিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের দিকে ছুঁড়ে দেয়। এতে কমপক্ষে ২৪ জন ইসরায়েলি নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে

ইসরায়েল ঘোষণা করেছে তারা ইরানের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করতে চায়। কিন্তু বিশ্লেষকদের মতে, ইরানের 'ফোর্দো' ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র যেহেতু পাহাড়ের গভীরে অবস্থিত, তাই যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা ছাড়া সেটি ধ্বংস সম্ভব নয়।

নেগার মরতাজাভি আবারও সতর্ক করেন,-এই যুদ্ধ যদি সত্যি বড় আকার নেয়, তবে তা হবে ইরাক বা আফগানিস্তানের চেয়েও ভয়াবহ। ইরান একটি ৯ কোটিরও বেশি জনসংখ্যার শক্তিশালী দেশ। সরকারের পতনের পর শুরু হতে পারে গৃহযুদ্ধ, শরণার্থী সঙ্কট এবং পুরো অঞ্চলে বিশৃঙ্খলা।

তিনি আরও বলেন,-এটা কোনো রঙিন বিপ্লব না—এটা হতে পারে সর্বনাশের সূচনা।

মানবাধিকার সংগঠন ডন-এর নির্বাহী পরিচালক সারাহ লিয়া হুইটসন স্পষ্ট করেই বলেন,-ট্রাম্প কেবল হুমকি দিয়ে ইরানকে চাপ দিতে চাইলে সেটাও ভয়ংকর ঝুঁকি। এই সংঘাত সহজেই আঞ্চলিক থেকে বৈশ্বিক যুদ্ধে রূপ নিতে পারে।

তাঁর মতে,-ট্রাম্পের যুদ্ধংদেহী বক্তব্য পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তুলছে, যা গোটা বিশ্বের জন্য ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প এখন এক সঙ্কটজনক মুহূর্তে দাঁড়িয়ে আছেন—একদিকে শান্তির প্রতিশ্রুতি, অন্যদিকে যুদ্ধের ভয়াবহ সম্ভাবনা। তাঁর কণ্ঠে এখন দ্বৈত সুর, যার প্রতিটি কথা কাঁপিয়ে দিচ্ছে বিশ্বের কূটনৈতিক মহলকে।

Hiçbir yorum bulunamadı