close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

ট্রাম্পের বিবৃতিতে কতটা বিপাকে পড়েছে ভারত?

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, তার হস্তক্ষেপেই ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতি হয়েছে। তার বাণিজ্য হুমকির প্রেক্ষিতে মোদি সরকার চুপ থাকায় বিরোধীদের তোপের মুখে পড়েছে দিল্লি। রাজনৈতিক বিশ্লেষ..

ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা নিয়ে হঠাৎই তোলপাড় শুরু হয়েছে কূটনৈতিক মহলে। কিন্তু সেই তোলপাড়ের উৎস এসেছে উপমহাদেশ থেকে নয়—এসেছে আমেরিকার হোয়াইট হাউস থেকে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার সামাজিক মাধ্যম 'ট্রুথ সোশ্যালে' ঘোষণা দেন, আমেরিকার মধ্যস্থতায় ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। এরপর থেকেই গোটা উপমহাদেশে শুরু হয় উত্তেজনা ও রাজনৈতিক চাপানউতোর। প্রশ্ন উঠেছে—যে দুই দেশের সরকার এই যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেয়নি, সেই ঘোষণা কীভাবে একজন বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধান দিয়ে ফেলেন?

ট্রাম্পের একের পর এক বিস্ফোরক মন্তব্য

ট্রাম্প তার ঘোষণায় বলেন, “আমাদের এক রাতের আলোচনার পর আমি আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি, ভারত ও পাকিস্তান সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতিতে যেতে সম্মত হয়েছে। বাস্তববোধ ও বুদ্ধিমত্তার জন্য আমি দুই দেশকে ধন্যবাদ জানাই।”

তিনি শুধু ঘোষণাতেই থেমে থাকেননি। পরদিন তিনি আরও বলেন, “আমি গর্বিত, যুক্তরাষ্ট্র এই ঐতিহাসিক পদক্ষেপে সহায়তা করেছে। আমি কাশ্মীর সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজতে চাই।”

কাশ্মীর সমস্যা হাজার বছরের পুরনো বলে তিনি মন্তব্য করলেও, এমন তথ্যের উৎস জানাননি। তবে এরপর তিনি সরাসরি বলেন, দুই দেশকে বাণিজ্য বন্ধের হুমকি দিয়েই তিনি যুদ্ধ থামাতে বাধ্য করেছেন।

তার ভাষায়, “প্রতিদিন মিসাইলের ছবি দেখছিলাম। আমরা বললাম, এসব বন্ধ করে বাণিজ্য করা হোক। আমি ভারত-পাকিস্তানকে শুল্ক বিষয়ে চাপ দিয়েছি, ভারত প্রায় সব পণ্যে শুল্ক কমাতে রাজি হয়েছে।”

ভারতের চুপ থাকা নিয়ে বিরোধীদের তোপ

এখানেই থেমে থাকেননি বিরোধী দলগুলো। লোকসভায় বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি লিখে বিশেষ অধিবেশন ডাকার দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “পহেলগাম হামলা, অপারেশন সিঁদুর এবং যুদ্ধবিরতির বিষয়ে সংসদে বিস্তারিত আলোচনা দরকার।”

কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গেও একই দাবি করে বলেন, “হঠাৎ যুদ্ধবিরতি থামানো হয়েছে কেন, তা অস্পষ্ট। গুজব ছড়াচ্ছে। ট্রাম্প দাবি করছেন, তিনি বাণিজ্যের শর্তে শান্তি আনিয়েছেন, অথচ ভারত সরকার চুপ।”

‘আমরা সার্বভৌম, ট্রাম্পের হুমকিতে নয়’—আন্দোলনে অন্যান্য বিরোধীরা

তেজস্বী যাদব বলেন, “আমরা সার্বভৌম দেশ। বাণিজ্যের নামে মাথানত করব না। তৃতীয় কোনো দেশের হস্তক্ষেপ বরদাশত করব না।”

শিবসেনার সঞ্জয় রাউত আরও তীব্র ভাষায় বলেন, “প্রধানমন্ত্রী বলুন, আমরা কী প্রতিশোধ নিয়েছি? কেন ট্রাম্প আমাদের হয়ে যুদ্ধ থামাবেন? তিনি মধ্যপ্রাচ্যে পারেন না, আর আমাদের দেশের ব্যাপারে ঢুকবেন?”

বিজেপির পাল্টা কৌশল: জাতীয়তাবাদের ঢেউ

এই পরিস্থিতিতে বিজেপি দেশজুড়ে 'তিরঙ্গা যাত্রা' শুরু করেছে, যেখানে ‘অপারেশন সিঁদুর’কে সাফল্য হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে। বিশেষ করে বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ু, উত্তরপ্রদেশ ও কর্ণাটকে পরবর্তী বিধানসভা ভোটের দিকে তাকিয়ে জাতীয়তাবাদী আবেগ কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে দলটি।

কঙ্গনা রানাউত ও বিতর্ক

বিজেপি সাংসদ কঙ্গনা রানাউত একটি বিতর্কিত পোস্ট দিয়ে লেখেন, “ট্রাম্প আলফা মেল, মোদি আলফা মেল কা বাপ!” তবে পরে বিজেপি সভাপতি জে পি নাড্ডার নির্দেশে পোস্টটি ডিলিট করেন এবং ক্ষমা চান।

সরকারি অবস্থান: চুপচাপ ও অনিশ্চিত

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর জানান, “আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনায় কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। দু’পক্ষের লাভ হয় এমন চুক্তি করা হবে।”

কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো, সরকার ট্রাম্পের দাবির সত্যতা নিয়ে কেন কোনো মন্তব্য করছে না?

বিশ্লেষকদের চোখে ট্রাম্প-ঝড়ের প্রতিক্রিয়া

রাজনৈতিক বিশ্লেষক বিশ্বনাথ চক্রবর্তী বলেন, “ট্রাম্প ভারতের কূটনৈতিক মেরুদণ্ডই ভেঙে দিয়েছেন। ভারত যেখানে বিশ্বগুরু হবার চেষ্টা করছিল, সেখানে এখন একটি তৃতীয় দেশের ঘোষণায় চুপ করে থাকতে হচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন, “কোয়াড গঠনে যুক্তরাষ্ট্রের অংশীদার ভারত ছিল, কিন্তু এখন মনে হচ্ছে ট্রাম্প পাকিস্তানকেই ফিরিয়ে আনছেন পুরনো বন্ধু হিসেবে।”

সাংবাদিক শরদ গুপ্তা বলেন, “ইন্দিরা গান্ধী ১৯৭১ সালে নিক্সনের সেভেন ফ্লিট পাঠানোর হুমকিতেও পিছু হটেননি। এখন ট্রাম্পের বাণিজ্য হুমকিতে যুদ্ধবিরতি মেনে নেওয়া কূটনৈতিক দুর্বলতার ইঙ্গিত।”

বড় প্রশ্ন: ভারত কি অবস্থান বদলেছে?

যোগেন্দ্র যাদব বলেন, “প্রশ্ন হলো, ভারত ও পাকিস্তান কি নিজেরা যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত নিয়েছে, না আমেরিকা চাপিয়ে দিয়েছে? যদি নিজেরা নেয়, তবে ট্রাম্প ঘোষণা দিলেন কী করে? আর যদি ট্রাম্পের কথাই সত্যি হয়, তবে সরকারের স্পষ্ট করে তা বলা উচিত।”

তিনি আরও আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, “আমেরিকা এখন বলছে, নিরপেক্ষ দেশে ভারত-পাকিস্তান কাশ্মীর নিয়ে আলোচনা করবে। তাহলে কি ভারত তার বহু বছরের কূটনৈতিক অবস্থান থেকে সরে এসেছে?

 

ট্রাম্পের একের পর এক বক্তব্যে কোণঠাসা দিল্লি

ভারতের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক নীতির নিরপেক্ষতা, জাতীয় স্বার্থ এবং কূটনৈতিক মেরুদণ্ড নিয়ে আজ প্রশ্ন উঠছে। যদি যুদ্ধবিরতি সত্যি ট্রাম্পের হুমকিতে হয়, তবে সেটি ভারতের স্বাধীন অবস্থানের চরম অবক্ষয়।

আর যদি তা না হয়, তাহলে সরকার কেন চুপ? বিরোধীরা প্রশ্ন তুলছে, জনগণের জানার অধিকারকে উপেক্ষা করে মোদি সরকার কি আদৌ দায়িত্বশীল ভূমিকা নিচ্ছে?

বর্তমানে ভারতের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক অবস্থান যেন এক অজানা ধোঁয়াশার মধ্যে প্রবেশ করেছে। ট্রাম্পের ঘোষণাই কি দিল্লিকে বিপদে ফেলে দিল? সময়ই দেবে উত্তর।

कोई टिप्पणी नहीं मिली


News Card Generator