ট্রা ম্প যু দ্ধে জড়ালে মধ্যপ্রাচ্যে দো'জ'খ নেমে আসবে, ই'রা'নে'র হুঁ'শি'য়া রি..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ইসরায়েলের হামলার জেরে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের দামামা। ইরান স্পষ্ট জানিয়ে দিল—যুক্তরাষ্ট্র এই সংঘাতে ঢুকলে ট্রাম্প হবেন ‘অপ্রত্যাশিত যুদ্ধের জনক’। পুরো অঞ্চল ডুবে যাবে রক্তক্ষয়ী আগুনে। আর আলোচনার সুযোগ ধ্..

ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সরাসরি সংঘর্ষের জেরে পুরো অঞ্চল এখন উত্তপ্ত, আর এই সংকট মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রকে হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইরান। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি এই সংঘাতে সরাসরি জড়ান, তাহলে তাকে ইতিহাস স্মরণ রাখবে ‘অপ্রত্যাশিত যুদ্ধের জনক’ হিসেবে—এমন সতর্কবার্তা দিলেন ইরানের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সাঈদ খতিবজাদে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে দেওয়া এক এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে তিনি স্পষ্ট ভাষায় জানান, “এই যুদ্ধ আমেরিকার নয়, কিন্তু যদি তারা এতে ঢুকে পড়ে, তাহলে পুরো অঞ্চল দোযখে পরিণত হবে।

গত সপ্তাহে ইসরায়েলের আকস্মিক হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় ইরানের একাধিক সামরিক ঘাঁটি, পরমাণু স্থাপনা ও বেসামরিক এলাকা।
জবাবে ইরান শুরু করে ‘অপারেশন ট্রু প্রমিস’, যার আওতায় পাল্টা আক্রমণ চলছে টানা ১৫ ধাপে। সর্বশেষ, তেল আবিব ও হাইফায় ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কাঁপে ইসরায়েল।

বিশ্বজুড়ে এ নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এরই মধ্যে ইরানে হামলার পরিকল্পনায় সম্মতি দিলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনও জানাননি। তবে ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ এক রহস্যময় পোস্টে তিনি বলেন—“আমি কী করব, সেটা বলা প্রয়োজন নেই।

খতিবজাদে জানান, তারা শান্তিপূর্ণ সমঝোতার খুব কাছাকাছি পৌঁছেছিলেন। ওমানের মাধ্যমে চলা ষষ্ঠ রাউন্ড পারমাণবিক আলোচনার আগেই ইসরায়েলের হামলা পুরো প্রক্রিয়াটিই ভেঙে দেয়।

তিনি বলেন, “আমরা আলোচনার জন্য প্রস্তুত ছিলাম। কিন্তু কারও আগ্রাসন যখন সমঝোতাকে ধ্বংস করে দেয়, তখন দোষ আমাদের হয় কীভাবে?

ইরানের দাবি—যুক্তরাষ্ট্র একদিকে গোপনে মধ্যপ্রাচ্যের নেতাদের মাধ্যমে বার্তা দিচ্ছে যে তারা এই যুদ্ধে নেই, অন্যদিকে ট্রাম্পের প্রকাশ্য বক্তব্য পুরোপুরি উসকানিমূলক। এই দ্বিমুখী আচরণই পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করছে বলে মনে করছে তেহরান।

ট্রাম্প সম্প্রতি দাবি করেন, ইরান নাকি আলোচনার জন্য হোয়াইট হাউসে আসতে চায়।
খতিবজাদে স্পষ্ট জানান—“আমরা এমন বার্তা দিইনি। আলোচনার ক্ষেত্র তৈরি করতে হলে, আগ্রাসন বন্ধ করতে হবে। আর আমরা গোপনে হোয়াইট হাউসে যেতে চাই না। সম্মানহীন আলোচনায় কোনো অর্থ নেই।

আন্তর্জাতিক আণবিক সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরান ৬০% মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে, যা অস্ত্র তৈরির কাছাকাছি।
এ প্রসঙ্গে ইরান জানায়—“আমরা অস্ত্র তৈরি করছি না। যদি চাইতাম, বহু আগেই বানিয়ে ফেলতাম। আমাদের কর্মসূচি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ।

ইরান আরও অভিযোগ করেছে, ইসরায়েল নিজে শত শত পারমাণবিক অস্ত্র মজুত করে রেখেছে অথচ পরমাণু চুক্তি (NPT)-র সদস্য নয়। তারপরও তারা কীভাবে অন্য রাষ্ট্রকে লক্ষ্যবস্তু বানায়?

খতিবজাদে বলেন, “ইসরায়েলের আক্রমণ এখন এক বিপজ্জনক নজির—এখন থেকে যে কেউ অন্যের পরমাণু স্থাপনায় হামলা করতে উৎসাহ পাবে।

ইসরায়েল অভিযোগ করেছে, ইরান বেসামরিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে।
উত্তরে খতিবজাদে বলেন—“আমাদের হামলা ছিল সম্পূর্ণ সামরিক ঘাঁটিগুলোতে। বরং ইসরায়েল হাসপাতাল, আবাসিক ভবন, পরমাণু বিজ্ঞানী এবং সামরিক কেন্দ্র আক্রমণ করেছে। আলোচনার কথা বলার আগে তাদের আগ্রাসন থামাতে হবে।

ইরান পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছে—তারা আগ্রাসন করছে না, আত্মরক্ষা করছে।
যুদ্ধ থামাতে হলে আগ্রাসন বন্ধ করতে হবে। আলোচনার জন্য দরজা খোলা, কিন্তু তার আগে আগুন বন্ধ করুন”—এটাই তেহরানের বার্তা।

বিশ্লেষকদের মতে, এই মুহূর্তে মধ্যপ্রাচ্যের সব অনিশ্চয়তা নির্ভর করছে একজনের সিদ্ধান্তের ওপর—ডোনাল্ড ট্রাম্প।
তিনি যদি যুদ্ধকে অনুমোদন দেন, তাহলে এটিই হতে পারে ইতিহাসের ভয়াবহতম যুদ্ধ—যেখানে দোযখ নেমে আসবে মাটিতে।

তবে এখনও সময় আছে। আলোচনার পথে ফেরার সুযোগ রয়েছে। এখন দেখার বিষয়—ট্রাম্প যুদ্ধের আগুনে ঘি দেবেন, নাকি কূটনীতির জল ঢেলে তা নিভিয়ে দেবেন।

মধ্যপ্রাচ্য এই মুহূর্তে এমন এক আগ্নেয়গিরির ওপর দাঁড়িয়ে আছে, যেখানে একটিমাত্র ভুল পদক্ষেপ গোটা অঞ্চলকে পুড়িয়ে দিতে পারে। ইরানের ভাষায়, ট্রাম্প যদি সেই পদক্ষেপ নেন—তবে ইতিহাসে তার নাম লেখা থাকবে এমন এক যুদ্ধের জন্য, যা ‘দোযখে রূপান্তরিত’ করেছিল পুরো অঞ্চলকে।

コメントがありません