টিসিবির ট্রাকে পণ্যের চেয়ে গ্রাহক বেশি, কম দামে ভর্তুকি পণ্যের জন্য মানুষদের ভিড়!


নতুন ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রি শুরু, মানুষের উপচেপড়া ভিড়!
রাজধানী ঢাকা, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫: টিসিবির ট্রাকে পণ্যের চেয়ে গ্রাহক বেশি! আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের বেগুনবাড়ি এলাকায় দৃশ্যমান এক চিত্র যেন নতুন এক বাস্তবতা তৈরি করেছে। ৭৬ বছর বয়সী আবদুল করিম, যিনি বয়সের ভারে ঠিকমতো হাঁটতে পারেন না, কিন্তু কম দামে সয়াবিন তেল, মসুর ডাল, ছোলা ও খেজুর কেনার আশায় ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ট্রাকের পেছনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাঁর মতো অনেকেই দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর পণ্য সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছেন।
টিসিবির ট্রাকের পেছনে আড়াই শ’রও বেশি মানুষের ভিড় ছিল, যেখানে ধাক্কাধাক্কির মধ্যে পড়ে গিয়ে একাধিকবার পড়ে গিয়েছেন আবদুল করিম। এক টুকরো পণ্য কিনতে দাঁড়িয়ে ছিলেন প্রায় তিন ঘণ্টা। তিনি বলেন, "ঘরে বাজার করার টাকা নেই। গত এক মাস ধরে টিসিবির ট্রাক থেকে পণ্য বিক্রি বন্ধ ছিল। আজ থেকে পণ্য বিক্রি শুরু হয়েছে, তাই কিছু টাকা ধার করে এখানে এসেছি।"
এই দীর্ঘ বিরতির পর আজ থেকে আবারও টিসিবি দেশের বিভিন্ন স্থানে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রি শুরু করেছে। প্রায় এক মাস ৯ দিন পর, ঢাকাসহ ৫০টি স্থানে আবারও ট্রাকের মাধ্যমে টিসিবি পণ্য বিক্রি শুরু হয়েছে। চট্টগ্রামের ২০টি স্থানে একইভাবে পণ্য বিক্রি করা হয়েছে।
আজ সকালে রাজধানী ঢাকা শহরের কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, কারওয়ান বাজার এবং বেগুনবাড়ি এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে ট্রাকের পেছনে মানুষের বিশাল ভিড় জমেছে। বিশেষত দীর্ঘ বিরতির পর পণ্য বিক্রি শুরু হওয়ায় নিম্ন ও সীমিত আয়ের মানুষের ভিড় বেশ বেশি ছিল। কাজীপাড়া মেট্রোরেল স্টেশনের নিচে বেলা সাড়ে ১১টায় এসে টিসিবির ট্রাক উপস্থিত হলে মাত্র দেড় ঘণ্টার মধ্যে সেখানে তিন শতাধিক মানুষের সারি তৈরি হয়। তবে ২৫০ মানুষের জন্য নির্ধারিত পণ্য ছিল একটি ট্রাকে, অর্থাৎ সেখানে অনেকেই শেষ পর্যন্ত পণ্য কিনতে পারেননি।
গত ২৪ অক্টোবর থেকে টিসিবি পণ্য বিক্রি শুরু করেছিল, তবে ৩১ ডিসেম্বর থেকে এই কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এখন আবার এই কার্যক্রম পুনরায় চালু হওয়ায় বেশ কিছু মানুষ তা থেকে উপকৃত হচ্ছেন।
এছাড়া, টিসিবির ট্রাক থেকে পণ্য কেনার কিছু সমস্যাও রয়েছে। অনেকেই জানান, কখন, কোথায় পণ্য বিক্রি হচ্ছে তা জানানো হয় না। কিছু ক্ষেত্রে একই পরিবারের একাধিক ব্যক্তি লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য সংগ্রহ করেন এবং এতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়।
অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির মধ্যে ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির পণ্য কিনতে চাহিদা বেড়েছে।
এদিকে, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মতে, গত জানুয়ারি মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৭২ শতাংশ। বাজারে বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়েছে, তবে টিসিবির পণ্যের দাম অপেক্ষাকৃত কম। তাই একদিকে যেমন টিসিবির পণ্য কিনতে মানুষের আগ্রহ বেড়েছে, তেমনি অন্যদিকে বাজার থেকে সয়াবিন তেল বা অন্যান্য পণ্য পাওয়া যাচ্ছে না।
টিসিবির পণ্যের মূল্য তালিকা:
সয়াবিন তেল (প্রতি লিটার): ১০০ টাকা
মসুর ডাল (প্রতি কেজি): ৬০ টাকা
চিনি (প্রতি কেজি): ৭০ টাকা
ছোলা (প্রতি কেজি): ৬০ টাকা
খেজুর (প্রতি কেজি): ১৫৫ টাকা
মোট ব্যয় ৫৮৮ টাকা। যেখানে বাজার থেকে একই পরিমাণ পণ্য কিনতে প্রায় এক হাজার টাকা খরচ হবে, তাতে ৪০০ টাকা বাঁচানো যাবে। এই কার্যক্রম বিশেষ করে আসন্ন রমজান মাসের জন্য উপকারী।
তবে কিছু ভোক্তা অভিযোগ করেছেন যে, বেশিরভাগ সময় পণ্য বিক্রির সময় ও স্থান জানানো হয় না, এবং লাইনে দাঁড়িয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। এমনকি একই পরিবারের একাধিক সদস্যও লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য সংগ্রহ করেন।
অবশেষে, টিসিবির পণ্য কিনে অনেকেই বাজারের তুলনায় অনেক সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য কিনতে পারছেন, যা নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য বিশেষভাবে সহায়ক।
לא נמצאו הערות