close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

তিন সন্তানের ঘরে ঠাঁ ই হয়নি বৃদ্ধা মায়ের, এগিয়ে এলো সেনা ব হিনী..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
৯০ বছর বয়সী বিমলা রানিকে ঘরছাড়া করে দেন তাঁর তিন ছেলে। খাবার, আশ্রয়—কিছুই ছিল না বৃদ্ধার কপালে। এমন হৃদয়বিদারক ঘটনায় এগিয়ে আসে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। তাদের মানবিক হস্তক্ষেপেই শেষ পর্যন্ত ফিরতে পারেন নিজ..

নির্মম বাস্তবতা যেন গল্পকেও হার মানায়। সন্তানেরা যাদের কাঁধে ভর করে হাঁটতে শেখে, জীবনের শেষ প্রান্তে সেই সন্তানদের কাছেই ঠাঁই হয় না গর্ভধারিণী মায়ের! এমনই এক হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে বগুড়া সদরের বড় কুমিড়া হিন্দুপাড়া গ্রামে।

৯০ বছর বয়সী বিমলা রানী চন্দ্র, যিনি কখনো ছিলেন এক পরিপূর্ণ পরিবারের গর্বিত জননী, এখন সে মায়ের স্থান হয়েছে বাঁশঝাড়ের নিচে কিংবা বাড়ির পাশে পড়ে থাকা কোনো খালি কোণে। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া এই নারী ঠিকভাবে চোখে দেখতে পান না, কানে শুনতেও সমস্যা, হাঁটা তো দূরের কথা—নিজেকে রক্ষা করাও কঠিন।

তাঁর স্বামী হরিপদ চন্দ্রের মৃত্যুর পর থেকেই বদলে যায় বিমলা রানীর জীবন। যাদের জন্ম দিয়েছেন, তাদের কারোর কাছেই আর স্থান নেই তার। তিন ছেলের কেউই মায়ের দায়িত্ব নিতে চান না। তাদের মধ্যে দুজন কাঠমিস্ত্রি এবং একজন দর্জির কাজ করেন। কাজ থাকুক বা না থাকুক—মাকে দেখার সময় যেন কারোরই নেই।

প্রতিদিন সকালে তিন ভাই মিলে তাদের মাকে বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে রেখে আসেন। সেখানেই কাটে বিমলার সারাদিন। খাবার নেই, পানি নেই, নেই কোনো ছায়াও। খা খা রোদের মধ্যে পড়ে থাকেন বিমলা রানী। সন্ধ্যার পর হয়তো ঘরে ফেরার সুযোগ মেলে—তাও যদি স্থানীয় কেউ প্রতিবাদ করে, তবেই।

ঘটনার ভয়াবহতা পৌঁছায় চরমে যখন সোমবার রাতে মেজো ছেলে লব সরকার বৃদ্ধা মাকে সরাসরি বাড়ি থেকে বের করে দেন। প্রতিবেশীদের চাপে পরদিন সকালে আবার তাকে ঘরে নিলেও দুপুর হতে না হতেই আবারো তাকে রাস্তায় ফেলে রাখা হয়। বিকেল গড়িয়ে যায়—তবুও বিমলার কপালে জোটে না এক ফোঁটা পানিও।

এমন অবস্থায় খবর পেয়ে এগিয়ে আসে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী। বিকেলে একদল সেনা সদস্য স্থানীয়দের মাধ্যমে ঘটনা জানতে পেরে ছুটে যান ঘটনাস্থলে। সেখানে গিয়ে তারা বিমলার করুণ অবস্থা দেখে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন।

সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট আল ফাহাদ নিজে বৃদ্ধাকে খাবার কিনে দেন এবং হাতে তুলে খাওয়ান। এরপর ছেলেদের ডেকে পাঠিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন এবং তাদেরকে পরিস্থিতি বোঝান। ছেলেরা নিজেদের ভুল স্বীকার করলে আবার মাকে ঘরে ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হন।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেন সেনা কর্মকর্তা, যারা দীর্ঘদিন ধরে বিমলার দুর্দশার সাক্ষী ছিলেন। প্রতিবেশীরা সেনাবাহিনীর এই মানবিক পদক্ষেপের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন—“যদি সেনাবাহিনী না আসত, বিমলার জীবনের কি হতো কে জানে!”

সেনা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট ফাহাদ সাংবাদিকদের বলেন,
মানবিক দিক বিবেচনায় আমরা সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবস্থা নিয়েছি। পরিবারটি যদি সত্যিই আর্থিকভাবে অসচ্ছল হয়, তাহলে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সহায়তার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।

বিমলা রানীর কান্না শুধু একজন মায়ের নয়—এটি পুরো সমাজের ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি। আর সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ ছিল এক মানবিক জাগরণ। এই সংবাদ আমাদের সবাইকে নাড়িয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট—যেখানে বিবেককে প্রশ্ন করতে হবে, “আমার পাশে কোনো বিমলা রানি তো নেই, অবহেলায়?”

Nema komentara