টিকটকের বন্ধুত্ব থেকে শুরু হওয়া প্রেম, শেষ পর্যন্ত থানায় গড়ালো দুই কিশোরীর সম্পর্কের গল্প। চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলায় এমনই এক ব্যতিক্রমী ঘটনায় আলোড়ন ছড়িয়েছে। সমকামিতার অভিযোগে এক মুসলিম ও এক হিন্দু কিশোরীকে শনিবার (২৬ এপ্রিল) সকালে ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছেন তাদের অভিভাবকরা।
জানা গেছে, মুসলিম কিশোরীটি চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার বালিথুবা পশ্চিম ইউনিয়নের সকদিরামপুর গ্রামের বাসিন্দা। অপরদিকে, হিন্দু কিশোরীটির বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলার কোটালিপাড়া উপজেলায়।
স্থানীয় সূত্র এবং সংশ্লিষ্ট দুই কিশোরীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টিকটকের মাধ্যমে তাদের প্রথম পরিচয় ঘটে। সেই পরিচয় দ্রুতই বন্ধুত্বে রূপ নেয়। এরপর একে অপরের বাড়িতে যাতায়াত, ভাব বিনিময় এবং সম্পর্ক গভীরতর হয়।
ঘটনার সূত্রপাত ঘটে শুক্রবার (২৫ এপ্রিল)। মুসলিম কিশোরীটি গোপালগঞ্জে গিয়ে হিন্দু কিশোরীকে নিয়ে চাঁদপুরের নিজ বাড়িতে চলে আসে। তারা দুজনই একবাক্যে জানান, "আমরা আবেগের বশে নয়, বরং মন থেকেই একে অপরের প্রতি ভালোবাসা অনুভব করি। সেই টানেই চলতি বছরের ১৭ এপ্রিল আমরা নিজেরা বিয়ে করেছি।"
তবে তাদের বিয়ের কোনো লিখিত বা আইনগত প্রমাণপত্র দেখাতে পারেনি তারা।
এই ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর, হিন্দু কিশোরী রিতুর পরিবারের পক্ষ থেকে কিশোরী আরোহীসহ দুজনকেই থানায় সোপর্দ করা হয়। শনিবার সকালে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ থানায় নিয়ে গিয়ে তাদের পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে ফরিদগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহ্ আলম গণমাধ্যমকে জানান, "আরোহী নামের কিশোরীটি নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় আগে থেকেই সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছিল। সেই জিডির ভিত্তিতে পুলিশ তাকে উদ্ধার করেছে। বর্তমানে তাদেরকে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে আনা হয়েছে।"
এদিকে স্থানীয় মহলে এই ঘটনা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ কিশোরীদের সম্পর্ককে তাদের ব্যক্তিগত বিষয় হিসেবে দেখার আহ্বান জানালেও, অধিকাংশই সমাজের প্রচলিত রীতিনীতি ভঙ্গের অভিযোগ তুলেছেন।
বিশেষ করে ভিন্ন ধর্মের দুই কিশোরীর মধ্যে গড়ে ওঠা ভালোবাসা এবং নিজের পরিবার ছেড়ে আসার সিদ্ধান্ত সামাজিকভাবে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। অনেকে বলছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অল্প বয়সীদের অনিয়ন্ত্রিত যোগাযোগের কারণে এমন ঘটনা ঘটছে।
কিশোরীদের পরবর্তী করণীয় কী হবে এবং তাদের আইনি ভবিষ্যত কোন পথে যাবে, তা নির্ভর করছে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন এবং দুই পরিবারের সিদ্ধান্তের ওপর।
বর্তমানে দুই কিশোরী থানার তত্ত্বাবধানে রয়েছে এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে।



















