মহান বিজয় দিবস বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম শেষে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর যে স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছিল, তাকে ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে শুধুমাত্র উৎসবের উপলক্ষ হিসেবে না দেখে, আত্মজিজ্ঞাসা ও দায়িত্বশীলতার সময় হিসেবে দেখা হচ্ছে। পবিত্র কোরআনের সুরা আন-নাসরের আলোকে বিজয়ের এই গভীর তাৎপর্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
সুরা আন-নাসরের প্রথম আয়াত, ‘যখন আসবে আল্লাহর সাহায্য ও বিজয়’, স্মরণ করিয়ে দেয় যে, সকল মানবিক ত্যাগ ও প্রচেষ্টার পেছনে চূড়ান্ত সফলতা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসে। এই উপলব্ধি মুমিনদের অহংকার থেকে রক্ষা করে এবং তাদেরকে বিনয়ী ও কৃতজ্ঞতার পথে চালিত করে। বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, এই বিজয় বাহ্যিকভাবে সামরিক হলেও, এর মূল শিক্ষা হলো ক্ষমতার নৈতিক ব্যবহার নিশ্চিত করা।
সুরার পরবর্তী আয়াতে বিজয়ের সামাজিক ফল তুলে ধরে বলা হয়েছে— ‘আর আপনি মানুষকে দলে দলে আল্লাহর দ্বীনে প্রবেশ করতে দেখবেন’। এর ব্যাখ্যায় বলা হয়, যখন সমাজে জুলুম ও অবিচারের অবসান ঘটে, তখন মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ন্যায় ও সত্যের দিকে ফিরে আসে। তাই বিজয়ের মূল উদ্দেশ্য হলো সমাজে ন্যায়, ইনসাফ ও মানবিকতা প্রতিষ্ঠা করা।
আর সুরার শেষ আয়াতে বিজয়ের পর মুমিনের করণীয় হিসেবে তাসবিহ, হামদ (প্রশংসা) ও ইস্তিগফারের (ক্ষমা প্রার্থনা) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এটি স্পষ্ট করে যে, বিজয় মানুষকে আরও বিনয়ী, আত্মসমালোচনামুখী ও দায়িত্বশীল করে তুলবে— এটাই কোরআনের শিক্ষা। বিজয় যেন কোনোভাবেই ব্যক্তি বা জাতির মনে দাম্ভিকতা সৃষ্টি না করে, সেই বিষয়ে সচেতনতা জরুরি।
বিশ্লেষকরা প্রশ্ন তুলেছেন: আমরা কি শহীদদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে পাওয়া এই স্বাধীনতাকে ন্যায়, মানবিকতা ও বৈষম্যমুক্ত সমাজ গড়ার কাজে যথাযথভাবে ব্যবহার করতে পারছি? যতক্ষণ এই প্রশ্নের উত্তর ‘হ্যাঁ’ বাচক না হচ্ছে, ততক্ষণ বিজয়ের মূল উদ্দেশ্য পূরণ হবে না। ১৬ ডিসেম্বর তাই কেবল উৎসবের দিন নয়, এটি জাতির আত্মপর্যালোচনার দিনও বটে।



















