close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

সুন্দরবনের পাতা কুড়িয়ে বেঁচে থাকা: উপকূলের জীবনযুদ্ধ

শেখ আমিনুর হোসেন, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার, সাতক্ষীরা avatar   
সুন্দরবনের পাতা কুড়িয়ে উপকূলের মানুষ জ্বালানি সংকট মোকাবেলা করছে, যা তাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে..

শেখ আমিনুর হোসেন, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার, সাতক্ষীরা:

সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের দক্ষিণ কদমতলা গ্রামের বৃদ্ধা তরী বালা এবং তার মতো আরও অনেকের জন্য জ্বালানি সংকট তাদের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক সময়ের সবুজ শ্যামল বনাঞ্চল এখন প্রাণী ও মানুষের জন্য সংগ্রামের ক্ষেত্র। প্রতিদিন, উপকূলের মানুষজন, যেমন তরী বালা এবং হিরা বেগম, সুন্দরবনের পাতা কুড়িয়ে তাদের জীবন চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের কাছে এটাই একমাত্র উপায়, কারণ এই পাতাগুলি তাদের রান্নার জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

তরী বালা, যিনি ৭০ বছরেরও বেশি বয়সী, তার ছয় জনের সংসার চালাতে মালঞ্চ নদী থেকে পাতা কুড়িয়ে আনেন। এই পাতা তাদের সারা বছরের জ্বালানির চাহিদা পূরণ করে। উপকূলীয় অঞ্চলে, বিশেষ করে সুন্দরবন নির্ভরশীল এলাকাগুলিতে, জ্বালানি সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে।

হিরা বেগম, পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়সী চার সন্তানের জননী, তার জীবন সংগ্রামের কথা শেয়ার করে আইনিউজবিডিকে বলেন, "বনে গেলে ফরেস্টাররা ধরে মামলা দেয়। আইলা’র পর থেকে গোটা এলাকা যেন বিরাণভূমি। একটু জ্বালানির জন্য আমরা পানিতে ভেসে আসা পাতা কুড়াচ্ছি।" তার এই কথাগুলো উপকূলের মানুষের দৈনন্দিন সংগ্রামের প্রতিচ্ছবি।

রফিকুল ইসলাম, পশ্চিম কৈখালী গ্রামের একজন বাসিন্দা, আইনিউজবিডিকে জানান, "একার আয়ে বৃদ্ধ মা-বাপসহ সাত মুখের যোগান দিতে হয়। মাঝেমধ্যে চাল-ডালির ব্যবস্থা হলেও জ্বালানি জোটে না। তাই প্রতিদিন নদীতে জোয়ার শুরু হলে গলুইঠেলা নিয়ে নদীতে নামতে হয়।" এই পরিস্থিতি কেবল রফিকুলের নয়, এই অঞ্চলের হাজারো পরিবারের বাস্তবতা।

এমনকি খলিশাবুনিয়া গ্রামের রাশিদুল ইসলামও তার পরিবারের পাঁচ সদস্যের জীবনযাত্রার জন্য নদীতে মাছের রেণু ধরে সংসার চালান। বর্তমানে তাদের জন্য প্রধান বিকল্প হচ্ছে জোয়ারে ভেসে আসা পাতা কুড়িয়ে বিক্রি করা।

এই অঞ্চলের মানুষদের মতে, সুন্দরবনের পাতা, ফুল ও ফল সংগ্রহ তাদের জীবিকার প্রধান উৎস। তবে বনবিভাগের সহকারী সংরক্ষক মশিউর রহমান জানান, "সুন্দরবনের পাতা, ফুল ও ফল সাধারণত সেখানকার প্রাণী ও মাছের খাদ্য। তাছাড়া এগুলো প্রাকৃতিকভাবে বনভূমির সৃষ্টি করে। জ্বালানির জন্য অবশ্যই উপকূলবাসীকে বিকল্প ব্যবস্থার চিন্তা করতে হবে।"

উপকূলের মানুষজন প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছেন যে, তাদের এই সংগ্রাহিত পাতাগুলি নির্বিঘ্নে সংগ্রহের জন্য প্রশাসনিক অনুমতি প্রদান করা হোক। তাদের মতে, এই সংগ্রহ বন্ধ হলে জীবিকা নির্বাহ করা আরও কঠিন হয়ে যাবে এবং তারা বাস্তচ্যুত হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন।

এটি স্পষ্ট যে, সুন্দরবনের পাতা কুড়িয়ে জীবনযাত্রা টিকিয়ে রাখার সংগ্রাম উপকূলের মানুষের জন্য একটি কঠোর বাস্তবতা। জ্বালানি সংকট এবং অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তাদের এই সংগ্রাম আমাদেরকে একটি গভীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যার দিকে ইঙ্গিত করে, যা অবিলম্বে সমাধান প্রয়োজন। তাদের জীবনের এই প্রতিদিনের যুদ্ধ আমাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে, যে আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ এবং মানবসম্পদের মধ্যে সঠিক ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে।

Nenhum comentário encontrado