close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

সুন্দরবনে পর্যটকদের নিরাপত্তায় ঝুঁকিপূর্ণ যান ও রিসোর্ট এড়িয়ে চলা উচিৎ..

ম.ম.রবি ডাকুয়া avatar   
ম.ম.রবি ডাকুয়া
মোংলা প্রতিনিধিঃ

সুন্দরবনে দেশী-বিদেশী পর্যটকদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে যাতায়াতে ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহন আর অবস্থান বা অবকাশ যাপনে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিৎ।..

এসব ব্যবসার সাথে যারা জড়িত তাদের আরো উদ্যোগী হওয়া জরুরী।

সুন্দরবনের কোলঘেঁষে গড়ে ওঠা রিসোর্ট ও বনে ঘুরতে আসা পর্যটকদের নিরাপত্তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে সাধারণ মানুষ ও সুন্দরবন ঘুরতে আসা পর্যটকদের মনে। সম্প্রতি আমেরিকান প্রবাসী বাংলাদেশি বিমানবাহিনীর সাবেক পাইলট রিয়ানা আজাদ (২৮) নামের এক নারী পর্যটক স্ব-পরিবারে ঘুরতে এসে রিসোর্টের জালি বটে ফেরার পথে নদীতে পড়ে মৃত্যুবরণ করেন। তিনদিন পর তার মৃত্যু দেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেন প্রশাসন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পর্যটক ব্যবসায়ীরা খুলনার দাকোপ উপজেলার বানিয়াশান্তা ইউনিয়নের ঢাংমারি এলাকায় সুন্দরবনের অনুকূলে খালের পারে সরকারি খাস জমি (লিচ) নেয়া এবং মালিকানা জমিতে এই রিসোর্ট গুলি তৈরি করেছেন। পর্যটক থাকার জন্য রিসোর্ট গুলিতে মনোরম পরিবেশের ব্যবস্থা থাকলেও যাতায়াতের পথ অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণ রাতের জন্য মরণ ফাঁদ। নেই নিরাপত্তার ব্যবস্থা। 

তবে সচেতন মহলের দাবী  রিসোর্ট গুলি সরকারি নিয়ম মেনে তৈরি  হয়েছে কিনা তা ক্ষতিয়ে দেখা উচিত। পরিবেশ বিষয়ে কোন নীতিমালা থাকলে রিসোর্ট মালিকরা মানছেন কিনা তাও তদন্ত করে দেখা উচিত সংশ্লিষ্টদের।

ডলফিন সুরক্ষায় ২০১৭ সালে সুন্দরবনের ১০.৭ বর্গ কিলোমিটার নদীর ঢাংমারী খাল সহ দুইটি খালকে অভয়ারণ্য ঘোষণা করে বনবিভাগ। আর সেই খালের পাড়েই গড়ে তোলা হয়েছে এই রিসোর্ট গুলো। প্রতিদিনই অহরহ বনের মধ্যে প্রবেশ করছে নৌযান সহ পর্যটকরা, ফলে মারাত্মক হুমকির মুখে বিরল প্রজাতির ডলফিন সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য। 

বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন, ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন প্রতি বছর দেশি-বিদেশি অসংখ্য পর্যটককে আকর্ষণ করে। এই বনের অসাধারণ জীববৈচিত্র্য, বিশেষত রয়েল বেঙ্গল টাইগার, এবং অনন্য প্রাকৃতিক পরিবেশ পর্যটনের এক বিশাল সুযোগ সৃষ্টি করেছে। তবে, প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট উভয় কারণে এই অঞ্চলের পর্যটকদের নিরাপত্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্বেগের বিষয়। 

পর্যটকদের জন্য সুন্দরবন ভ্রমণকে আরও নিরাপদ ও উপভোগ্য করে তোলার লক্ষ্যে বর্তমান নিরাপত্তা পরিস্থিতি এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন, মনে করেন ঘুরতে আসা পর্যটকরা। 

পর্যটকদের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সুন্দরবনে একাধিক ধরনের চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান। নদ-নদী ও খালের কারণে জলপথে ভ্রমণই প্রধান মাধ্যম। এক্ষেত্রে পর্যাপ্ত লাইফ জ্যাকেট না থাকা, পুরোনো বা ফিটনেসবিহীন নৌযান ব্যবহার এবং খারাপ আবহাওয়ায় ঢেউয়ের কারণে নৌকাডুবির (যেমন সাম্প্রতিক কয়েকটি দুর্ঘটনা) ঝুঁকি থাকে। ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস এবং আকস্মিক আবহাওয়ার পরিবর্তন সুন্দরবনে অত্যন্ত সাধারণ ঘটনা, যা পর্যটকদের জন্য বড়ো বিপদ ডেকে আনতে পারে। 

পর্যটক বহনকারী মোংলা জালিবোট সমিতির নেতা সোহাগ জানান, পর্যটকদের জন্য নদীপথে লাইভ জ্যাকেট বাধ্যতামূলক। সম্প্রতি সময় জালিবোট উলটে এক নারী পর্যটক নিহত হয়েছেন, এটি অত্যন্ত কষ্টদায়ক ব্যাপার। তবে আমি মনে করি, ওই জালিবোটে থাকা পর্যটকদের গায়ে লাইফ জ্যাকেট থাকলে এত বড়ো দুর্ঘটনা ঘটতো না। লাইফ জ্যাকেট-এর পাশাপাশি দুর্ঘটনার আরেকটি কারণ হলো বোট গুলিতে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করা। তাই আমি মনে করি পর্যটক ব্যবসায়ী সহ পর্যটকদের এ ব্যাপারে আরো সচেতন হওয়া প্রয়োজন। 

মোংলা টুরিস্ট পুলিশের ইন্সপেক্টর নিমাই কুমার নাথ বলেন, টুরিস্টদের নিরাপত্তার জন্য স্থানীয়ভাবে প্রত্যেকটা পয়েন্টে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এবং তাদের সার্বিক সহযোগিতা করছি। যা অব্যাহত রয়েছে। 

উল্লেখ্য, গত ৮ই নভেম্বর ম্যানগ্রোভ ভ্যালি সুন্দরবন ইকো রিসোর্ট থেকে আমেরিকান প্রবাসী বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সাবেক পাইলট রিয়ানা আজাদ নামের এক পর্যটক স্ব-পরিবারে ওই রিসোর্টের জালি বোটে ফেরার পথে ঢাংমারি নামক স্থানে নদীর ঢেউয়ের কবলে পড়ে জালিবোট উলটে নিখোঁজ হন। তিনদিন পর ১০ নভেম্বর তার ভাসমান মরদেহ উদ্ধার করে কোস্ট গার্ড। রিয়ানার মৃত্যুতে স্থানীয়ভাবে সুন্দরবনে ঘুরতে আসা পর্যটক ও সাধারণ মানুষের মনে নিরাপত্তা জনিত ব্যাপার নিয়ে ব্যাপক সংশয় তৈরি হয়। 

মেহেরিমা নামে এক নারী পর্যটক জানান, ঐদিন যদি তাদের গায়ে লাইফ জ্যাকেট থাকতো তাহলে ওই নারীকে নিখোঁজ হতে হতো না, এভাবে মৃত্যুবরণ করতে হতো না এবং আমার মনে হচ্ছে ডুবে যাওয়া বোটটি ফিটনেস বিহীন ছিল, বোটের তুলনায় যাত্রী বেশি নেওয়া হয়েছিল। এবং ওই বোটের মাঝির অভিজ্ঞতা নিয়েও সংশয় রয়েছে। 

সুন্দরবন এ ঘুরতে আসা পর্যটকদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে প্রশাসনকে আরো কঠোর নজরদারি করার অনুরোধ করেন ওই নারী পর্যটক। 

করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির বলেন, যে-কোনো সুযোগ সুবিধা জন্য আমরা বনের ভিতরে সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত রয়েছি, তবে নদীপথে যাতায়াতের সময় পর্যটকদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে অবশ্যই লাইফ জ্যাকেট পরিধান করা উচিত। এবং অতিরিক্ত পর্যটক জালিবোট গুলির ছাদে না ওঠার জন্য আমরা নিরাপত্তা জনিত কাজ করে যাচ্ছি। সুন্দরবনে ঘুরতে আসা পর্যটকদের আরো বেশি সচেতন হওয়ার অনুরোধ জানান এই কর্মকর্তা।

 

没有找到评论


News Card Generator