close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

সরকারি দামের চেয়ে বেশি বাজারমূল্য: কৃষকদের অনীহা ও খাদ্য সংগ্রহের সংকট..

Akm Kaysarul Alam avatar   
Akm Kaysarul Alam
সময়োপযোগী পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে কৃষক, মিলার ও সাধারণ মানুষের উপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।..

বর্তমান আমন মৌসুমে ধান ও চাল সংগ্রহ নিয়ে সরকার বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। সরকারি খাদ্যগুদামে ধান সরবরাহ করতে কৃষক ও মিলাররা অনীহা প্রকাশ করছেন, যার প্রধান কারণ বাজারে ধান-চালের উচ্চমূল্য। রংপুর বিভাগের আট জেলায় ধান সংগ্রহের পরিসংখ্যান উদ্বেগজনক। সবচেয়ে হতাশাজনক অবস্থা কুড়িগ্রামে, যেখানে এখনো এক কেজি ধানও সরকারি গুদামে তোলা হয়নি।

ধান সংগ্রহে বিপর্যয়: পরিসংখ্যান কী বলছে?

খাদ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী, চলতি বছরের ১৭ নভেম্বর থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ধান ও চাল সংগ্রহ অভিযান চলবে। তবে তিন মাসের সময়সীমার মধ্যে রংপুর বিভাগে ধান সংগ্রহ মাত্র সাত শতাংশ হয়েছে।
সরকার নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৫,৯৪০ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের, কিন্তু বাস্তবে মাত্র ৫,৬৩৭ মেট্রিক টন ধান গুদামে এসেছে। জেলা ভিত্তিক বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়:

কুড়িগ্রাম: লক্ষ্যমাত্রা ৭,৯৪৮ মেট্রিক টন, সংগ্রহ শূন্য
নীলফামারী: লক্ষ্যমাত্রা ৭,০৫৫ মেট্রিক টন, সংগ্রহ ২,৬৪৩ মেট্রিক টন (৩৫%)
ঠাকুরগাঁও: লক্ষ্যমাত্রা ১০,১৮১ মেট্রিক টন, সংগ্রহ ৩১৫ মেট্রিক টন (৩%)
লালমনিরহাট: লক্ষ্যমাত্রা ৫,৬৪৮ মেট্রিক টন, সংগ্রহ ১১৪ মেট্রিক টন (২%)
গাইবান্ধা: লক্ষ্যমাত্রা ৮,৩৪০ মেট্রিক টন, সংগ্রহ ২৩০ মেট্রিক টন (৩%)
রংপুর: লক্ষ্যমাত্রা ১০,৮৬৪ মেট্রিক টন, সংগ্রহ ১৬০ মেট্রিক টন (১%)

অন্যদিকে, আতপ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ১৮,১৬৪ মেট্রিক টন থাকলেও অর্জিত হয়েছে ১৪,৬৫৯ মেট্রিক টন (৮৫%)। সিদ্ধ চালের লক্ষ্যমাত্রা ১,৩৪,৭৫৪ মেট্রিক টন, সংগ্রহ ১,২৮,৩১২ মেট্রিক টন (৯৫%)।

কৃষকের লোকসান ও বাজার বাস্তবতা

কৃষকরা বলছেন, সরকার নির্ধারিত ৩৩ টাকা প্রতি কেজি দরে ধান বিক্রি করলে তারা লোকসানের মুখে পড়বেন। অথচ বাজারে একই ধান ৩৭-৩৮ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। কৃষকরা বাজারে প্রতি মণ ধান ১,৪৫০ টাকার বেশি দরে বিক্রি করতে পারছেন, যেখানে সরকারি দর প্রায় ১,৩২০ টাকা

এক বিঘা জমিতে ধান উৎপাদনে খরচ হচ্ছে ১২,০০০ টাকা, অথচ সরকারি মূল্যে বিক্রি করলে পাওয়া যাচ্ছে ১০,০০০-১০,৫০০ টাকা। অর্থাৎ প্রতি বিঘায় কৃষকদের লোকসান ১,০০০-১,৫০০ টাকা। ব্যবসায়ীদেরও প্রতি কেজিতে ২-৩ টাকা ক্ষতি হচ্ছে। ফলে তারা সরকারি গুদামে ধান দিতে আগ্রহী নন।

সরকারি লক্ষ্যমাত্রা পূরণে শঙ্কা ও প্রশাসনিক হুঁশিয়ারি

কৃষকদের এই অনাগ্রহের ফলে খাদ্য অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রতি কড়া বার্তা দিয়েছে। ধান ও চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

রংপুরের আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক জহিরুল ইসলাম বলেন,
"চালের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে, তবে বাজারের চেয়ে কম দাম থাকায় ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।"

এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ কী?

১. বাজার মূল্য নির্ধারণের পুনর্বিবেচনা: কৃষকদের ক্ষতি না করে বাজার পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সরকারকে ধানের দাম পুনর্নির্ধারণ করতে হবে।
2. সরকারি গুদামে ধান সরবরাহের জন্য উৎসাহমূলক ব্যবস্থা: কৃষকদের জন্য প্রণোদনা বা ভর্তুকি দেওয়া যেতে পারে, যাতে তারা সরকারি সংগ্রহ অভিযানে আগ্রহী হন।
3. মিলারদের সঙ্গে কার্যকর চুক্তি: মিলাররা যদি সরকারি দরে ধান দিতে চান, তাহলে তাদের জন্য বিশেষ সুবিধার ব্যবস্থা করতে হবে।
4. জরুরি নীতিগত সংস্কার: প্রতি বছর একই ধরনের সমস্যা দেখা দেওয়ায় কৃষি মন্ত্রণালয় ও খাদ্য অধিদপ্তরকে দীর্ঘমেয়াদী নীতি নির্ধারণ করতে হবে।

সরকারি সংগ্রহ অভিযান ব্যর্থ হলে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়তে পারে। এই সংকট শুধু কৃষকদের জন্য নয়, বরং গোটা খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সময়োপযোগী পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে কৃষক, মিলার ও সাধারণ মানুষের উপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

Keine Kommentare gefunden