close
ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!
সরকারি চাকরির প্রাপ্তি অনেকের জন্য আনন্দের হলেও, ভারতের বিহারের অবনীশ কুমারের জন্য সেটি হয়ে দাঁড়ালো জীবনের সবচেয়ে ভয়াবহ অভিজ্ঞতা। সম্প্রতি পাবলিক সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায় পাস করে স্কুলশিক্ষকের চাকরি পাওয়া অবনীশকে অপহরণ করে বন্দুকের মুখে জোরপূর্বক বিয়ে করানো হয়েছে। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনা ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
স্কুলে যাওয়ার পথে অপহরণ
টাইমস অব ইন্ডিয়া ও এনডিটিভির প্রতিবেদনে জানা যায়, গত শুক্রবার সকালে স্কুলে যাওয়ার সময় আচমকাই অবনীশকে বেশ কয়েকজন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি ঘিরে ধরে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তারা বন্দুক তাক করে জোরপূর্বক গাড়িতে তুলে নেয় অবনীশকে। গাড়িটি দ্রুত নিয়ে যাওয়া হয় একটি মন্দিরের সামনে।
বন্দুকের মুখে বিয়ে!
মন্দিরে আগে থেকেই বিয়ের সাজে উপস্থিত ছিলেন গুঞ্জন নামের এক তরুণী। পরিস্থিতির ভয়াবহতায় অবনীশ কিছু বলার সুযোগ না পেয়ে বন্দুকের ভয় দেখিয়ে তাকে বিয়ে করতে বাধ্য করা হয়।
তবে গুঞ্জনের দাবি সম্পূর্ণ ভিন্ন। তিনি বলেন,
"আমাদের চার বছরের প্রেম ছিল। বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল অবনীশ। কিন্তু সরকারি চাকরি পাওয়ার পর সে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। আমার পরিবার তার এই প্রতারণা মেনে নিতে পারেনি, তাই তাকে তুলে এনে বিয়ে দেওয়া হয়েছে।"
অবনীশের পাল্টা অভিযোগ
অন্যদিকে অবনীশ এই দাবিকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেন। তিনি বলেন,
"আমি ওই মেয়েকে চিনি না। ও আমাকে ফোন করে বারবার বিরক্ত করত। ঘটনার দিন আমাকে অপহরণ করে মারধর করা হয় এবং বন্দুকের ভয় দেখিয়ে বিয়ে করানো হয়।"
বিয়ে নিয়ে পারিবারিক অস্থিরতা
বিয়ের পর গুঞ্জন অবনীশের বাড়িতে গেলে আরও বিপত্তি ঘটে। অবনীশের বাবা-মা গুঞ্জনকে পুত্রবধূ হিসেবে মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানান। পরিস্থিতি এতটাই জটিল হয়ে ওঠে যে, গুঞ্জন থানায় অভিযোগ করেন। অপরদিকে অবনীশও গুঞ্জন ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে অপহরণ ও নির্যাতনের পাল্টা অভিযোগ দায়ের করেন।
পুলিশি তদন্ত শুরু
এ চাঞ্চল্যকর ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে স্থানীয় থানা পুলিশ। ঘটনা সত্যিই প্রেমঘটিত নাকি অপহরণ ও জোরপূর্বক বিয়ে—তা জানার জন্য পুলিশ উভয় পক্ষের বক্তব্য বিবেচনা করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে।
‘পাকড়ি বিবাহ’: বিহারের পুরনো বিতর্কিত রীতি
ভারতের বিহার ও কিছু অংশে ‘পাকড়ি বিবাহ’ নামে পরিচিত একটি বিতর্কিত রীতি রয়েছে। সরকারি চাকরিজীবী বা প্রতিষ্ঠিত পাত্রদের জোরপূর্বক বিয়ে দেওয়ার এমন ঘটনা আগেও ঘটেছে। তবে বর্তমান যুগে এমন ঘটনায় বিস্মিত নেটিজেনরা ক্ষোভ ও সমালোচনা প্রকাশ করেছেন।
ঘটনার চাঞ্চল্য এবং সামাজিক প্রতিক্রিয়া
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ঘটনা ছড়িয়ে পড়ার পর অনেকে বলছেন, এমন জোরপূর্বক বিয়ে রোধে প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। অন্যদিকে কেউ কেউ গুঞ্জনের দাবি নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন— এটি প্রেমের অবহেলা নাকি নিছক প্রতিশোধ?
এই ঘটনার সঠিক সমাধান কী হবে, তা এখন সময়ই বলে দেবে। তবে অবনীশের সরকারি চাকরি পাওয়ার আনন্দ যে মুহূর্তেই ‘দুঃস্বপ্নে’ পরিণত হয়েছে, তা স্পষ্ট।
Aucun commentaire trouvé