আওয়ামী লীগ এবং সরকারের অভ্যন্তরীণ দুর্নীতির বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করে ফেসবুকে বিস্ফোরক একটি পোস্ট দিয়েছেন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম। বৃহস্পতিবার রাতে তার ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডি থেকে দেওয়া দীর্ঘ এই স্ট্যাটাসে তিনি সরাসরি সরকারের বিদ্যুৎ খাতের দুর্নীতি, রাজনৈতিক চাটুকারিতা, এবং দলের ভেতরের পচনের বিষয়গুলো তুলে ধরেন।
নাজমুল আলম তার পোস্টে লিখেছেন, “আমাদের সরকারের সময়ের চাইতে এবারের রমজানে তেমন লোডশেডিং হয়নি।” এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, এই লোডশেডিং হ্রাসে বর্তমান সরকারের অবদান থাকলেও, এর বিপরীতে পূর্ববর্তী সময়ের কৃত্রিম সংকট ছিল বিদ্যুৎ চোরদের সাজানো নাটক। তিনি সরাসরি অভিযুক্ত করেন এক সাবেক প্রভাবশালী বিদ্যুৎ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে—যিনি তার ভাষায়, “সর্বকালের সেরা বিদ্যুৎ চোর বিপু”।
নাজমুল অভিযোগ করেন, ওই সময় বিদ্যুৎ খাতে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বিশেষ কিছু বিদ্যুৎ প্লান্টকে একচেটিয়া সুবিধা দেওয়া হয়েছিল। মূল উদ্দেশ্য ছিল সিন্ডিকেট করে কমিশন কামানো এবং সরকারপ্রধানকে বিভ্রান্ত করা। “প্রধানমন্ত্রী বিদ্যুৎ খাতে বিপ্লব ঘটিয়েছেন, কিন্তু বিদ্যুৎ চোররা সেই অর্জনকে মাটি করে দিয়েছে,” — বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, “বিপুরা নিজেদের টাকার জোরে ঈশ্বর হয়ে উঠেছিল। ওদের ব্যবসার পেছনে বিএনপি-জামাতপন্থী নেতারাও ছিল অংশীদার।” তার ভাষায়, বিপু ও তার পরিবার ‘চরিত্রহীন লম্পট’, এবং তাদের চুরি ও অপকর্মের কারণেই রাজনীতি আজ রাজপথ থেকে উঠে গিয়ে পাঁচতারকা এসি কক্ষে স্থান নিয়েছে।
নাজমুল আলমের এই পোস্টে স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে তার দীর্ঘদিনের ক্ষোভ। তিনি লেখেন, “অনেকদিন নিঃশ্বাস বন্ধ রেখে চুপ থাকলাম। কিন্তু এখন আর পারছি না। রাজনীতিকে যারা কৌতুকের বিষয় বানিয়ে ফেলেছে, তাদের বিরুদ্ধে কথা না বললেই নয়।”
এখানেই থেমে থাকেননি নাজমুল। তিনি বলেন, “বিপুর মতো একজন ব্যক্তির সহকারীকেও উপজেলা সাধারণ সম্পাদক বানানো হয়েছে। অথচ এলাকার প্রকৃত নেতারা আজ বঞ্চিত। এই রাজনৈতিক অপব্যবস্থাই আমাদের ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়েছে।”
তিনি অভিযোগ করেন, “আমার সন্তানদের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতেও হিমশিম খাই, অথচ বিপুর পরিবার বিলাসবহুল জীবনযাপন করে।” ব্যক্তিগতভাবে নাজমুল জানান, তিনি সবসময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন এবং ভবিষ্যতেও বলবেন। “নেত্রী যতদিন বেঁচে থাকবেন, ততদিন আমি রাজনীতি করব। কিন্তু নেত্রী না থাকলে রাজনীতিও করব না।”
সবশেষে, তিনি শেখ হাসিনার সংসদে দেওয়া একটি উক্তিকে স্মরণ করে লেখেন: “এই আওয়ামী লীগে শেখ হাসিনা ছাড়া সবাইকে কেনা যায়।” তিনি জানান, ব্যক্তিগতভাবে তিনি এটিকে শতভাগ সত্য বলে মনে করেন।
:
সিদ্দিকী নাজমুল আলমের এই পোস্ট রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিতে পারে। নিজ দলের এমন এক সময়কার উচ্চপর্যায়ের নেতার মুখে দলের বিরুদ্ধে এই মাত্রার অভিযোগ খুবই বিরল। অনেকেই বলছেন, নাজমুলের এই পোস্ট ভবিষ্যতের রাজনীতিতে এক নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে, বিশেষ করে বিদ্যুৎ খাত ও অভ্যন্তরীণ সিন্ডিকেটের ভূমিকা নিয়ে।
নাজমুল আলমের বক্তব্য নতুন করে একটি প্রশ্ন তুলে দিয়েছে: আওয়ামী লীগের ভেতরের এই ভাঙন কি ভবিষ্যতের রাজনীতির বড় কোনো সংকেত?



















