অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ও প্রবাসী লেখক পিনাকী ভট্টাচার্য সম্প্রতি তাঁর ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত এক ভিডিওতে দাবি করেছেন, ধর্ষণ ইস্যুকে ড. ইউনূস সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ একটি নির্দিষ্ট ন্যারেটিভ তৈরির চেষ্টা করেছিল। তিনি অভিযোগ করেন, এ ধরনের ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সরকারকে অস্থিতিশীল করে পরাজিত করার পরিকল্পনা রচনার ধারা শুরু করা হয়েছিল।
পিনাকী ভট্টাচার্য বলেন, জাতিসংঘের মহাসচিবের বাংলাদেশ সফরের সময় পরিকল্পিতভাবে ধর্ষণ ইস্যুকে উত্তপ্ত করার ষড়যন্ত্র চালু করা হয়েছিল। তিনি বিস্তারিত প্রমাণসহ বলেন, “আমি আপনাদেরকে সাথে নিয়ে এক ভয়ঙ্কর শয়তানির গল্প তুলে ধরবো,” যা সামাজিকভাবে সম্মানিত ব্যক্তিদের অন্ধকার ক্ষমতার দিক তুলে ধরার দাবি করে।
তাঁর বক্তব্যে বলা হয়েছে,
- নীতি ও ন্যারেটিভ নির্মাণ: ধর্ষণ ঘটনাকে একটি রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে, এ ধরনের কৌশলের মাধ্যমে সরকারকে দুর্বল করার চেষ্টা করা হয়।
- পরিসংখ্যানের তুলনা: পিনাকী প্রকাশ করেন, জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি ২০২৫ এ নির্যাতিত নারীর সংখ্যা ছিল ২৯৬ জন, যার মধ্যে ধর্ষণের শিকার ৯৬ জন (যার মধ্যে ৪৪ জন শিশু), যেখানে ২০২৩ সালে আট মাসে ৪৯৩ জন শিশু ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছিল – যা মাসে গড়ে প্রায় ৬৮ জন শিশু শিকার হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।
পিনাকী দাবি করেন, ধর্ষণের ঘটনা একেবারেই আকস্মিকভাবে বেড়েছে না, বরং এগুলোকে একটি নির্দিষ্ট ন্যারেটিভে রূপান্তরিত করে সরকারকে আঘাত করার পরিকল্পনা ছিল।
তিনি বলেন, “প্রফেসর ইউনুসের আমলে সব পুরুষ ধর্ষক হইয়া গেছে,”—একদিকে সরকারের ওপর তীক্ষ্ণ সমালোচনা আর অপরদিকে একে রাষ্ট্রকে দুর্বল করার একটি কৌশল হিসেবে উপস্থাপন করা।
পিনাকী আরও মন্তব্য করেন,
- অপরাধের ধারণা ও জনগণের আস্থা: তিনি যুক্তি দেন, কোনও সরকারকে দুর্বল করার অন্যতম উপায় হল অপরাধের ধারণা তৈরি করা। ধর্ষণের ঘটনাগুলো যখন sensationalize করা হয়, তখন তা জনগণের আস্থাকে কমিয়ে দেয়।
- রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ড: তাঁর বক্তব্যে বিশেষ করে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৫ তারিখে গণমিছিল ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমাবেশের পরিকল্পনার মধ্যে এ ন্যারেটিভকে কাজে লাগানোর অভিযোগ, যেখানে বলেন – “সিপিবি, সুশীল লীগ, আফসোস লীগ ও ছাত্রলীগ মিলেমিশে এই পরিকল্পনায় লিপ্ত।”
পিনাকী ভট্টাচার্য ১৯৯৫ সালের দিনাজপুরের ১৬ বছর বয়সী কিশোরী ইয়াসমিনের ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, এই কেসটি কিভাবে সেনসেশনাল হয়ে ওঠে—প্রথমত, ময়না তদন্তে স্পষ্ট প্রমাণের অভাব এবং, দ্বিতীয়ত, পুলিশের পক্ষ থেকে ইয়াসমিনকে পতিতা হিসেবে চিহ্নিত করা। তিনি এই ঘটনাকে বর্তমানের ধর্ষণ ইস্যুর সাথে তুলনা করে নেন এবং দাবি করেন, “এইসব ঘটনার পেছনে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের স্পষ্ট ছোঁয়া আছে।”
পিনাকী ভট্টাচার্যের এই বক্তব্য ও প্রমাণসমূহ নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক ও নাগরিক সমাজে তীব্র বিতর্ক ও প্রশ্ন উঠেছে।
তিনি বলেন, “কেমন করে বলব, একটি মাত্র ঘটনা হলেও যদি ঠিকমত রান্না করা যায়, তবে তা পুরো সরকারের আস্থা ভেঙ্গে দিতে পারে।”
তার মতে, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের এই নীলনকশা চলমান থাকলে, সরকারকে সতর্কতা অবলম্বন করে আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে ও সকল প্রকার রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
পিনাকী ভট্টাচার্যের দাবিতে স্পষ্ট হয়, ধর্ষণ ইস্যুকে রাজনৈতিক হাতিয়ারে রূপান্তরিত করে জনসাধারণের মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলার প্রচেষ্টা চলছে। এ বিষয়টি বর্তমানে রাজনৈতিক ও সামাজিক আলোচনার একটি চরম জটিল প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ অভিযোগগুলোর সত্যতা যাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হচ্ছে, যাতে দেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকে।